নিলাম
মিউনিসিপাল
চেয়ারম্যান তাপস চক্রবর্তীর সঙ্গে কাউন্সিলর বিনায়ক দত্তের হঠাৎ মুখোমুখি সাক্ষাৎ
করার প্রয়োজন পড়ল।দুজনেই রাজনৈতিক ইউনিফর্ম পরা সমাজসেবী।দুটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের
মধ্যে মোলাকাত হওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার না, সে তারা যতই পরস্পরের
বিরোধী পক্ষের পতাকাধারী হোক ।
বিনায়ক সকালবেলায় তাপসের মোবাইলে ফোন করে এপয়ন্টমেন্ট নেয়।তাপস
আন্তরিক সুরেই সৌজন্য প্রকাশ করে ।প্রকাশ্য ব্যক্তি বিরোধিতা দুই দলের পক্ষেই নিষিদ্ধ।রাজনৈতিক
মতাদর্শের ফারাক তো থাকবেই কিন্তু ব্যক্তিগত ঘৃণা -কোনো দলেরই নীতির আওতার মধ্যে
পড়ে না ।
তবু বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে বিনায়কের কেমন একটা সঙ্কোচ হতে লাগল ।
ওর সর্বক্ষণের সহচর কৈশিক নামের ছেলেটি জিজ্ঞেস করল,"বিনুদা
সঙ্গে কাকে নেবে?"
বিনায়ক হেসে বলল, "শুধু তুই যাবি আর কেউ না ।"
সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারল না কৈশিক।ওর মতে বিনায়কদার এভাবে যাওয়া উচিত না ।যতই হোক
তাপস চক্রবর্তীর বাড়ি তো আসলে শত্রুপক্ষেরই দুর্গ ।কোনো বিপদের আশঙ্কা হয়তো নেই
কিন্তু বিনায়কদাও তো একজন জনপ্রতিনিধি ।পথে ঘাটে একাকী বিচরণ জননেতার মর্যাদার
হানি ঘটায়।তাঁর সদলবল যাত্রাতেই জনসমর্থন আর নেতাসুলভ প্রতিপত্তির প্রমাণ হয়।নেতার সম্মানে তাঁর অনুচরদেরও সম্মান বাড়ে।
কৈশিক বলল,"ব্যাপারেটা কি ঠিক হবে বিনায়কদা?"
বিনায়ক একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল,"বেশি বকলে তোকেও নেব না ।"
কৈশিক চুপ করে গিয়ে অবাক চোখে বিনায়কের দিকে তাকিয়ে রইল ।
বিনায়ক এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল,"আজ তো আর রাজনীতির দরকারে
যাচ্ছি না ।যাচ্ছি একটা ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে ।আর তাছাড়া তুই তো জানিস তাপস এক
সময় আমার কাছের বন্ধু ছিল ।"
কৈশিক কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে ভরতি হয়েছিল ।তবে
ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারে নি ।রাজনীতির নেশায় ও ছাত্রত্ব বিসর্জন দেয় ।অবশ্য
পড়াশোনায় যে ওর এক সময় মন ছিল ,কথাবার্তায় সেটা ধরা পড়ে মাঝে মাঝেই ।যেমন হঠাৎ ও
বলে উঠল,"ক্ষমতার লড়াইয়ে ছেলে বাবাকে ,ভাই ভাইকে ছাড়ে না,আর তুমি কোন মান্ধাতার
আমলের বন্ধুত্বের দোহাই দিচ্ছ!সিংহাসন দখলের লোভে আমাদের দেশেই হোমিসাইডের যত কেস
ঘটেছে, তার পুরো রেকর্ড এখনই চোখের সামনে তুলে ধরলে বুঝতে ।"
বিনায়ক সিগারেটে আরেক টান মেরে বলল,"যাবি
তো,বাইকটা নিয়ে বেরো"।
দুই
কৈশিক অগত্যা নিজের বাইকের পিছনে বিনায়ককে বসিয়ে তাপস চক্রবর্তীর বাড়ির দিকে রওনা
হল।
একই পাড়ায় দুইজনের বাড়ি ।বাইকের পিঠে চড়ে খুব বেশি
হলে চার মিনিট লাগার কথা ।ওই চারটি মিনিট বিনায়ক কৌশিকের সঙ্গে কোনো শব্দ বিনিময়
করল না ।বাইক ইঞ্জিনের উৎকট চিৎকারে ও কথা বলতে স্বস্তি বোধ করে না ।তাই চুপ থেকে
ওর মন অতীতচারী হয়ে উঠল।
মন ছুটে গেল সেই কিশোর বেলায় যখন রাজনীতি অজগরের আগ্রাসন
থেকে ওরা অনেক দূরে ছিল।খেলার মাঠে, স্কুলে বা দুর্গা পুজোর মন্ডপে এক সুতোয় জোড়া
ছিল দুটি কিশোরের মন।কিন্তু কলকাতার কলেজে ভর্তি হবার পরেই সম্পর্কের ভাবান্তর
ঘটতে শুরু করে।দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে দুরাত্মা রাজনীতি ।সে দুজনকে
দুইদিকে দুর্বার আকর্ষণে টেনে নেয়।
দুই বন্ধুতে পরামর্শ করে এক দলের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিলেও
বন্ধুত্ব হয়তো টিকত ।কিন্তু সম্পর্কের আত্মঘাতের দাবিতেই দুইজন যেন বেছে নিল দুই
মতাদর্শ ।বিনায়ক দীক্ষা নিল মার্কসবাদে আর তাপস ঝুঁকল দক্ষিণ পন্থায় ।কলেজ জীবনে
যে রাজনীতির হাতে খড়ি হয়,কলেজ ছেড়ে দিলেও সেই হাত রাজনীতি ছাড়ে না।
খুব স্বাভাবিক ভাবে কলেজের সময় থেকেই ওদের সম্পর্কে
অক্সিজেনের অভাব ঘটতে শুরু করে ।তবে দুই বন্ধুর মধ্যে ধীরে ধীরে আত্মীয়তার টান
কমে আসতে থাকলেও ,তেমন তিক্ততা পরস্পরের প্রতি ওদের কোনদিনই আসেনি।কোনো অনুষ্ঠানে
বা ক্লাবের পুজোয় দেখা হলে কুশল বিনিময়ের সৌজন্যটুকু ওরা চিরকাল করেছে ।এমনকি
দুইজনের বিয়েতে দুজনেই নিমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত থেকেছে ।
বাইকটা তাপস চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে এসে থামতেই বিনায়কের
স্মৃতিচারণ হোঁচট খেলো।
তিন
তাপস যথাযোগ্য আপ্যায়ন করে ওকে নিচের তলার অফিস ঘরে বসাল।ঘরের দেওয়াল ঘেষা পিছনের
একটি চেয়ারে জায়গা হল কৌশিকের।
অনেক দিন পর দুজনের মুখোমুখি একান্তে দেখা ।তাই কিছু লঘু হাস্য পরিহাস
দিয়ে আলাপ শুরু হল।কৈশিক এখানে নিছকই নীরব শ্রোতা ।ঠাট্টা ইয়ার্কির হাল্কা পর্ব
শেষ করে বিনায়ক আসল কথা পাড়ার চেষ্টা করল,"একটা সিরিয়াস ব্যাপারেই তোর
কাছে আসতে হল।"
এর মধ্যে তিন কাপ চা দিয়ে গেল একটি ছেলে।তাপস
বলল,"চা খেতে খেতে শুনি।"
চায়ে চুমুক দিয়ে বিনায়ক বলল,"আসলে সমস্যাটা
ব্যক্তিগত ।"
"বল।আমার সাধ্যের মধ্যে হলে সাহায্যের আপ্রাণ চেষ্টা করব
।"
বিনায়ক কিঞ্চিত আশ্বস্ত হওয়ার স্বরে বলল,"দেখ,এখন আমাদের
পার্টির কথা কী বলব-চাল চুলোহীন অবস্থা যাকে বলে।"বিনায়ক একটু থামল ।তাপসও
কোনো কথা বলে না ।ও আরো শুনতে চায় ।
ও আবার বলা শুরু করল,"তো আমাদের পার্টির এই টলমল
অবস্থা যেমন আমি টের পাচ্ছি তেমনি এলাকার অন্যরাও টের পাচ্ছে।একটা পার্টির ভবিষ্যত
প্রসপেক্টের গায়ে ঝুল জমতে শুরু করলে ,দলের কর্মীদের মনোবল কমতে শুরু করে ।তখন
নেতা হিসেবে নিজের নূন্যতম ডিগনিটিটুকু আশা করার সাহস থাকে না ।যখন রাজনীতি শুরু
করেছিলাম-"বিনায়ক আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল, হঠাৎ তাপস তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
"প্রস্তাবনাটা একটু সংক্ষিপ্ত করা যায় না?"
বিনায়ক বিব্রত বোধ করে ।কিছুটা ব্যস্ত হয়ে বলে
উঠল, "আসলে তোর কাছে আমার হারিয়ে যেতে বসা সম্মান ভিক্ষা চাইতে এসেছি ।"
পিছনের চেয়ারে বসে কৌশিক একটা ম্যাগাজিন দেখছিল।কথাটা
শুনে ও যেন একটা বড় ঝাঁকুনি খেয়ে গেল ।ও আসলে ভাবতেই পারেনি এমন একটা কান্ড বিনায়ক
ঘটাতে পারে।বিনায়ক গতকাল তাপসের বাড়ি আসার কথা যখন ওকে জানায়,তখন ওর খুব কৌতূহল
হয়েছিল ।ভ্রু কুঁচকে জানতে চেয়েছিল ,"হঠাৎ কী দরকার পড়ল?"বিনায়ক শুধু
বলেছিল ,"তুই তো সাথে থাকবি।তখনই জেনে নিতে পারবি।চিন্তা কী!"এ কথা শুনে
আর কোনো প্রশ্ন করে না কৌশিক ।কিন্তু এখন ওই কথাটা শোনার পর ওর ভিতরে একটা রাগের
মশাল দপ করে জ্বলে উঠেছে ।সেই আগুনে ওর সামনের দুই নেতাকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে
ছাই করে দিতে ইচ্ছে করছে ।আর থাকতে না পেরে ও বলেই উঠল,"কী সব বলছেন আপনি?
"
বিনায়ক আগুনের তাতে লাল হয়ে ওঠা কৌশিকের ভিতরটা যেন দেখতে
পেল।ও শুধু বলল,"সবটুকু শুনে নে কৌশিক ।"
কৌশিক চুপ হয়ে যায়।বিরোধী দলপতির সামনে বিনায়কের সাথে
তর্ক জুড়বার বোকামি ও করতে চায় না ।
তাপসের চোখ মুখ বুঝিয়ে দিচ্ছে যে ও খুব অবাক
হয়েছে।ও শান্ত স্বরে বলল,"পুরোটা শুনি কী ব্যাপার ।"
চার
বিনায়ক চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,"আমাদের
এলাকার ললিতকে চিনিস তো?"
তাপস বলে,"ও তো তোর বাড়ির একেবারে গা
ঘেঁষে থাকে।এলাকা কী বলছিস!"
"গা ঘেঁষে ঠিক না ।কয়েকটা বাড়ির
পরে।"
"ওই হল।তো ওকে নিয়ে কিছু কি সমস্যা হচ্ছে? "
"তুই জানিস নিশ্চয়ই ওর বাপটা মরার দিন পর্যন্ত আমাদের পার্টি
করেছে।ছেলেটাও গত ইলেকশন অব্দি আমাদের দিকেই ঝুঁকে ছিল ।কিন্তু ইদানীং সাংঘাতিক
পরিবর্তন খেয়াল করছি।"
তাপস জোরালো স্বরে বলে,"ও এখন আমার দলের ছেলেদের সাথে
মেলামেশা শুরু করেছে ।এবং আমার কাছাকাছি আসারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।দূর থেকে
আমিও ওর উপর নজর রেখেছি।ও চাইছে তাড়াতাড়ি ওর মাথায় আমার আশীর্বাদের হাতটা যেন পড়ে
।অবশ্য এটাও ঠিক ও ঠিকঠাক খুশি করতে পারলে শুধু আশীর্বাদ না,স্পেশাল বরের ব্যবস্থা
থাকবে ।"
"ও আসলে বুঝে গেছে যে ওর প্রতি মুগ্ধ হবার জন্য তুই
ই ওয়েট করে আছিস।"
"যাক গে এসব কথা।কে কোন দলে যাবে এ নিয়ে তোর আমার
কারোরই কিছু বলার নেই ।ওকে নিয়ে সমস্যাটা মনে হয় তুই এখনও ক্লিয়ার করতে
পারিসনি।"
কৌশিক এবার উৎকর্ণ হল।কারণ ওদের ওয়ার্ডে ললিতের
মতো অনেকেই রাতারাতি ভোল বদলে অন্য পক্ষের মিটিং মিছিলে জড়ো হতে শুরু করেছে ।এদের
ঠেকাতে না পারলে সর্বনাশ!এদের লম্ফঝম্প দেখলে কৌশিকের মাথা সত্যিই গরম হয়ে যায় ।ওর
এবার মনে হল বিনায়কদা হয়তো ওদের ডানা ছাঁটার প্রস্তাব তুলতেই এখানে এসেছে
।কৌতূহলী চোখে তাকাল বিনায়কের দিকে ।
বিনায়ক কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে
বলল,"তোদের কাছ থেকে আস্কারা পেয়েই এরা রীতিমত অসভ্যতামি শুরু করেছে ।"
"কী অসভ্যতামি করে?তেমন তো কোনো রিপোর্ট আসেনি ।"
"এখন আমাকে,আমার ছেলেকে এমনকি দলের ছেলেদেরও আকারে
ইঙ্গিতে অপমান করে।"
"কী রকম?"
"এই কয়েকদিন আগে বন্যার ফান্ড জোগাড় করতে বেরিয়েছিলাম।সঙ্গে
আমার ছেলেও ছিল।একটা বাড়ি থেকে সদলবলে বেরোচ্ছি তখন এই ললিত সামনে দিয়ে বাইক ছুটিয়ে
যেতে যেতে চিৎকার করে আমার ছেলের উদ্দেশ্যে বলে বাবার পিছনে ঘুরে আর লাভ নেই।এই
পার্টি কিছু দেবে না।এই রকম অপমান করা উচিত ?চিরকাল আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচেছি।এই
ভাবে ছেলের সামনে ।ও তো এখন বড় হয়েছে ,নাঃ ।"
তাপস বলল,"এক এক যুগে এক এক গোষ্ঠীর আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠিত
হয় ।এটাই ইতিহাসের ধারা।এই সত্যকে তোর মেনে নেওয়া উচিত ।"
কৌশিক এবার উষ্মা ভরা কন্ঠে বলে উঠল,"আপনার লেকচার
শুনবার সময় নেই আমাদের ।চলো বিনায়কদা।"
বিনায়ক কৌশিকের কথার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারল
না।আসলে তাপসের শেষ মন্তব্যে ও তখন ঘাবড়ে গিয়েছিল।কেঁপে যাওয়া স্বরে
বলল,"বলতে চাইছিস বাকি জীবন আমাকে এই অপমান সয়ে যেতে হবে !"
তাপস সান্ত্বনার সুরে জানাল,"এককালে অমন অসম্মান আমরাও
অনেক ফেস করেছি।তখন তোদের ব্যাপারই আলাদা ।তোর কাছে কোনোদিন নালিশ করতে যায়নি বলে
তুই জানতে পারিসনি।"
বিনায়ক অসহায় স্বরে বলল,"তবে তো দেখছি তোর কাছে
আসাটাই আমার ভুল হয়েছে ।বোঝা উচিত ছিল এখন তোদের প্রতিশোধ নেবার সময়।"
কৌশিকের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে অস্থিরতা জেগে উঠল কিন্তু কিছু
বলল না ।
তাপস কঠিন গলায় জবাব দেয়,"প্রতিরোধের কথা না।বলতে
চাইছি এগুলো রাজনীতির অঙ্গ।শোন এরা কেউ আমার দল ভালোবেসে আসেনি,সেটা আমি ভালো করেই
জানি ।একদল মন্দিরে যায় গীতাপাঠ শোনার জন্য না।যায় ফল প্রসাদ পেতে।এরা সেই মন
নিয়েই নেতার পিছনে ছোটে।তুই যদি ওদের খিদে মেটাতে পারতি তাহলে আর এদিকে আসত না।আর
এদেরকে আমার ভোগপ্রসাদ কিছু দিতেই হবে ।নইলে ভক্তির ফান্ড আসবে কোথা থেকে! "
তাপস উঁচু পর্দায় হেসে উঠল কথাটা বলে।
কৌশিক মরিয়া হয়ে বলল,"অনেক হয়েছে ।এবার চলো বিনায়কদা।"
তাপস কৌশিকের উদ্দেশ্যে বলল,"তুমি কোথায় থাকো?আগে দেখিনি
তো!"
কৌশিক কড়া ভাবে বলল,"আমাদের দলটাকে তো আর ধর্তব্যের মধ্যে
রাখেন না।নইলে আপনার নজরে নিশ্চয়ই পড়তাম ।"
"এবার থেকে ঠিক পড়বে।চিন্তা নেই । "
কৌশিক অবাক চোখে একবার তাকাল তাপস চক্রবর্তীর দিকে ।
তাপস বলল,"সারা রাজ্যে তোমাদের দলের যা অবস্থা,সেখানে তোমার বিনায়কদার
মিউনিসিপাল ইলেকশনে নিজের সিট টা ধরে রাখা সামান্য ব্যাপার না ।ওর কাছ থেকে রাজনীতির
পাঠ আমিও নিয়েছি।তুমিও শিখে আমাদের দলে চলে আসো।কারণ সামনের ভোটে তোমার বিনায়কদার
ক্যারিশমাতে আর কাজ হবেনা ।সেটা ও নিজেও জানে ।তাছাড়া আমরা এখন বুড়োর দলে।তোমরাই
সব।তাই সেখানেই থাকো যেখানে কাজ করতে পারবে। "
বিনায়ক চিৎকৃত স্বরে বলে উঠল,"বড় সাহস হয়েছে তো তোর।থেমে
যা।"বিনায়ক কৌশিকের দিকে তাকিয়ে রইল ।ও আশা করে আছে ওর সহচর একটা প্রতিবাদ
করবে।কিন্তু ওকে আশ্চর্য করে দিয়ে কৌশিক চুপ করে থাকে ।
তাপস হেসে বলে, "তুই রাগ দেখাচ্ছিস কেন?এমন তেজী
স্পষ্টবাদী ছেলেই তো আমার দরকার ।ম্যান্তামারাদের নিয়ে আর পোষাচ্ছে না।তুই ললিতকে
পেয়ে যাবি।এদিক দিয়ে ক্লাচের কড়া চাপ খেলেই তোর কাছে গিয়ে ও হাফ ছেড়ে বাঁচবে ।বরং
তুই কৌশিককে আমায় দিয়ে দে।
আর ধমকের সুরে কথা বলতে পারল না বিনায়ক ।ওর মাথা
ঘোরাচ্ছে ।ওর নজরে পড়েছে কৌশিকের মুখে যেন একটা আত্মগর্বের আভা ঝিলিক দিচ্ছে ।
তাপস হঠাৎ বলে উঠল,"শোন,তুই আমার প্রস্তাবে রাগ করতে
পারিস না।যোগ্য দাম মেটাব তার জন্য ।তোর সম্মান তুই ফিরে পাবি।"
অন্য সময় হলে বিনায়ক হয়তো তাপসকে একটা চড়ই কষিয়ে
দিত।কিন্তু ওর মাথা এখনও ঘুরচ্ছে।শরীর দুর্বল লাগছে।আর ফিরবার সময় পায়ে হেঁটে
ফিরতে হবে কিনা -এই প্রশ্নে বিনায়ক অস্থির হয়ে পড়ে ।
বিনায়ক কিছুতেই এই সাধারণ প্রশ্নটা কৌশিকের দিকে ঠেলে
দিতে পারছে না।চেষ্টা করছে তবু পারছে না ।মুখের ভিতর জিভটা কেমন অবশ হয়ে আছে ।
0 মন্তব্যসমূহ