১
করুণ সংকল্পটি
বেশ নাচ্ নাচ্ মনে হচ্ছে পৃথিবীকে
এত ঢেউ উঠছে, হাসির ফোয়ারা ছড়াচ্ছে
আর কলকাকলির জোয়ার আনছে
সকাল থেকেই উৎসবের মেজাজ
আমার মৃতদেহ কোথায় রেখে যাব তবে?
শকুনেরা মাংস ছোঁবে না,
কীট পতঙ্গেরা ঘৃণা করবে
আমার চেতনারাও কি তবে
জল প্রবাহে মিশে যাবে না?
এই মাটিতে শুয়ে শুয়ে রোজ
বৃষ্টিকে ডাকি
মেঘ আর বাতাসের বৈভবে
নিজেকে সঁপে দিই
তবু আনন্দযজ্ঞে আমার এই
আহুতি ভয়
আমার এই করুণ সংকল্পটি
লিখে রাখি
জন্মদিনের স্মারকধুলোয়
২
মায়ের কাছে
আজ সারাদিন বৃষ্টির পর মা হারিয়ে গেল
মেঘেরা বাঁশি বাজাল
শোঁ শোঁ বাতাসে ছেড়ে গেল অদৃশ্য জাহাজ
আমরা পাখির মতো অদৃশ্য ডানা ঝাপ্টালাম
আমরা মাথা ঠুকলাম কঠিন পাথরে
মা হারিয়ে গেল
মায়ের সাদা থান ভিজে গেল
বৃষ্টিফুল ফুটল মায়ের আঁচলে
সূর্য এল না আজ
বৃষ্টিভেজা ভাঙা পৃথিবীর
একখণ্ড মাটিতে আমরা
দাঁড়িয়ে থাকলাম
মাটির সংসারে হা হা করে বাজল
হাঁড়ি বাসন
ঘর উঠোনে মায়ের আত্মার পদধ্বনি
বৃষ্টিস্বরে মা বলছে, আয়, মাটির কাছে আয়!
অনেক বৃষ্টি,শূন্যতা এবং তুমুল
মাটির ভেতর
আমরা সবাই ঢুকে যেতে থাকি
আমরা সবাই মনে মনে মায়ের কাছে যাই
৩
উল্লম্ফন
এত উল্লম্ফন কখনও দেখিনি
সবাই উঠে আসছে নিরন্তর
সীমাহীন প্রাচুর্যের উল্লাস নগরে
এইখানে অবিরাম সূর্য
সূর্যের বার্ধক্য নেই
কিছুটা যৌনগোধূলি যদিও
গোলাপি রঙের মায়ায়
বিশ্রামের পাঁচালি পাঠ করে
তারপর নিরুক্ত শয়ন ঘর
প্রাণশস্যে ক্ষুধা নিবৃত্তির আয়োজন
এসব তবুও দূরের সমাচার মনে হয়
আমাদের কারুণ্য নির্ভর পর্যটন
কোথাও ঝরনার আবেগ খুঁজে ফেরে বাহ্যত সংকট শুধু আর সব মৃত্যুযাপন
দুরপনেয় বোধ কাঙ্ক্ষিত শোভার কাছে
মাথা নত করে দেয়
উল্লম্ফন চলতে থাকে
বস্তুত জাগতিক প্রশ্রয়
৪
সব প্রেম খুন হয়ে গেছে
কাঙাল বলে নীরব হতে থাকি
মানুষ হতে চেয়ে বার বার প্রশ্রয়
ভিখিরি
কোথাও হৃদয় নেই, হৃদয়ের ঘরদোর নেই
সব প্রেম খুন হয়ে গেছে
গোপন প্রতারণাগুলি কখনো মরেনি
কখনো বদলায়নি স্বভাব
কোন দিকে কোন হাওয়া যায়
কেউ বলে দিতে পারে?
কোন অস্ত্রশালায় শান দেয় তরবারি
কে জানতে পারে?
সব লীলা, সব অন্ধকার, মানুষের অবিরাম জ্বর
ব্যাকরণ সম্মত নীল সমাজগুলি অনির্বচনীয় ব্যজস্তুতি শিখে নেয়
তারপর প্রয়োগ ঘটায়
সম্মোহনের দায় থেকে মুখোশ পরে নেয়
রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকি
ধ্বসে পড়া তীরভূমি থেকে আসে হাহাকার
0 মন্তব্যসমূহ