(এক)
জুন
ভরা জুন মাস ঘোলা মেঘে কার স্মৃতি?
কার কান্নায় ভেসে গেছে সারা রাত!
বোবা ফুল চুপ,কথা বলে তার বৃতি।
ভরা জুন মাস ঘোলা মেঘে কার স্মৃতি?
ইতি টেনে ফের শুরু হয়,এই রীতি,
বন্ধ্যা বাতাসে কে যেন বাড়ায় হাত।
ভরা জুন মাস ঘোলা মেঘে কার স্মৃতি?
মেঘের
মাংস মুখে নিয়ে হাসে চাঁদ।
(দুই)
কাল সারারাত
কাল সারারাত চোখে ঘুম ছিল না
আমার মাথার চুলে থেকে থেকে বিলি কাটছিল বাতাস
পেছন থেকে জোছ্না এসে টিপে ধরছিল চোখের পাতা
ঘুম আসেনি
তোমার দেহের বিচ্ছুরিত আলোয় কাল
সমস্ত অন্ধকারেরা পালিয়েছিল দূরে
কাল সারারাত তোমার চুলের গন্ধ ঠোঁটে নিয়ে
বাতাস শিশুরা করেছে হুড়োহুড়ি
তোমার অনাবৃত বাহুতে কাল শীতল জোছ্না এঁকেছে
চুম্বনের রেখা
কিছুতেই ঘুম আসেনি চোখে
তোমার বুকের কাছে হাত রেখে
সারারাত দেখেছি তোমায়
কোনো এক সম্মোহিত মাতালের মতো
কী রূপ তোমার!
সহসা বাতাস এলো
দুকূলের ফাঁক দিয়ে উপচে উঠল তোমার বুকের রেখা
তোমার বুকের ত্বকে চমকে উঠল চকচকে ছোট্ট একটি তিল
ঠিক কালো জিরের মতো
কী রূপ তোমার!
কাল সারারাত চোখে ঘুম ছিল না
বৃষ্টি
এক বৃষ্টি
ধুইয়ে দিল দুঃখ আমার
এক বৃষ্টি
জন্ম দিল ডাগর ভারি
আর এক বৃষ্টি নদীর মতো এগিয়ে দেবে
এখন আমি যেমন খুশি বাঁচতে পারি
বৃষ্টি,
আমি তোমায় নিয়েই বাঁচতে পারি
(চার)
ঋণ
শরীর অনেক ছিল
তবু কেন তোমায় বেসেছি
অনেক আলোকবর্ষ পার হয়ে
এখানে এসেছি
তোমায় দারুণ ছোঁবো বলে
আরো এক ডাক ওঠে
ফুল ফোটে বুঝি বা তিমিরে
রূপ চিরে
আর এক রূপের মধ্যে হতে
হবে লীন
তোমার নিকটে ছিল অলৌকিক স্পর্শগত ঋণ
( পাঁচ )
তখন ছিলাম
তখন ছিলাম পাথর এখন নদী
আমায় তুমি ধরতে আসো যদি
পিছলে পালাই বনবনানীর দিকে
পাথর পাথর দিনগুলো সব ফিকে
পাথর কেঁদে গড়ায় এবং গড়ায়
বান ডেকেছে
পাথর- পাতা চড়ায়
তখন ছিলাম পাথর এখন জল
শুকনো নিথর দিনগুলো চঞ্চল
(ছয়)
মৃত বিবর্ণ কথা
কেউ বেসেছিল ভালো
বিদ্যুৎ ঝলকালো।
বিদ্যুৎ নয়,মেঘে মেঘে নীল লতা...
ঝোপে আর ঝাড়ে
ফিস ফিস করে
মৃত বিবর্ণ কথা।
(সাত)
গহীন বনে
গহীন বনে লুকিয়ে আছে দিঘি
দিঘির তলায় রহস্যময় শামুক
খোলের ভেতর মন-পোড়া এক মেয়ে
বৃষ্টি যদি নামবে চোখে, নামুক
অরূপ খোলে পিছটানুনী লতা
উঠছে জেগে, নড়ছে দুলে জলে
কাঁদছে লতায় মনপোড়া সেই মেয়ে
রহস্যময় খেলাই শুধু চলে
(আট)
সভ্যতা
এত আলো
আমাদের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে
এত গতি
আমাদের গড়িয়ে দিচ্ছে স্থাণুত্বের গহ্বরে
এত মুখরতা
আমাদের ছুটিয়ে নিয়ে চলছে ভয়ংকর স্তব্ধতার দিকে
আজ আর আমাদের কোনো সৃষ্টি নেই
এত নির্মাণ
আমাদের ডেকে নিয়ে চলেছে ধ্বংসের কিনারায়
(নয়)
চাই
যতো কিছু যত্নে সাজাই
আগুন ছাড়াও দেখি
ছাই
অবৈধ প্রণয় কিছু থেকে যাবে মাটিতে আকাশে
তাই
চাই
এমন কিছুই
যা আমার কাছে ভেসে আসে
স্বাভাবিক
জলের মতন
বহু ডাকে
যে এলো না তাকে
ভুলে গেলে কী দোষ আমার!
আরও বেশি গভীরে নামার
সময় হয়েছে
আজ তাই
তাকে
যে আমায় গভীরভাবে ডাকে
অবৈধ
হলেও তাকে চাই
(দশ)
রাত্রি
নখের মতো রাত্রি বাড়ে,রাত্রি বাড়ে।
ঝরনা-নদী,খোবলানো মেঘ,জটিল বৃক্ষ
পাতাল-
সমতল ডিঙিয়ে এই পাহাড়ে
নখের মতো রাত্রি বাড়ে, রাত্রি বাড়ে।
সারছে ডিনার সময়--- নিজের মাংসে হাড়ে;
মিশকালো দাঁত দারুণ কিন্তু দুর্নিরীক্ষ্য।
নখের মতো
রাত্রি বাড়ে, রাত্রি বাড়ে।
ঝরনা-নদী,খোবলানো মেঘ,জটিল বৃক্ষ।
--------------------------------------
ছবি ঋণ: তাপস দাস
0 মন্তব্যসমূহ