' এবং সইকথা ' - র জন্য ধারাবাহিক মুক্তগদ্য ( দ্বিতীয় পর্ব)
(২)
মুক্তগদ্য-র একটা সুবিধা আছে ,
ওর পায়ে কোনো শিকল বাধা নেই। এটা একটা দিক। অন্যদিকটি হল পেছন থেকে কেউ লেখাটিকে নিয়ন্ত্রণও
করে না। স্বাধীনভাবে লেখা যায়।
আর মুক্তগদ্য-র যে একটি মজবুত ডানা আছে আমরা সকলেই কমবেশি জানি।
এতশত জানার মধ্যে কিছু অজানাও থেকে যায়। প্রথম অজানাটি হল : লেখাটির প্রেরণা
পেলাম কীভাবে ?
দ্বিতীয় তথা শেষ অজানাটি হল : কেউ কি অন্তরিক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছেন এবার
শুরু কর।
যেমনভাবে 'সাক্ষাৎকার ' বা ' নোটবই ' -এর কবিতাগুলি লেখার সময় বাতাসে ভেসে
এসেছিল : এবার তুমি শুরু কর সাক্ষাৎকার লিখতে ! এখন লিখে ফেল নোটগুলি !
কে বলেছিলেন তার একটা অনুসন্ধান থাকবেই। আর তিনি যে অন্তরিক্ষ থেকেই বলেছিলেন
সেটির নাম দিলাম কল্পিত-সত্য। যা সোজাকথায় বললে বলতে হয় : কল্পনা-ঘটিত সত্য।
তাহলে কবিতার সত্যাসত্য যখন লিখেছিলাম , তখন তো কল্পিত-সত্য বা কল্পসত্য-র
কথা জানা ছিল না। এই কল্পসত্যটি একটি নতুন কনসেপ্ট। বিষয়টা যে পুরোটাই নতুন এটা বলার
অধিকারী আমি নই। এসব বলবেন মহাজনেরা। পণ্ডিতবর্গের গণপতিরা।
আমি আমার মতো করে বলি। যতটুকু লিখি , নিজের মতো করে লেখার চেষ্টা করি ।
কেউ কেউ সেই চেষ্টা দেখতেও পান। দেখেও নীরব থাকেন। তাঁদের নীরবতা ভাঙাবার কোনো দায়
আমার নেই। দায়িত্বও নেই। আমি যতটা সম্ভব নিজেকে নিয়েই মেতে থাকি।
গতকাল অন্তরিক্ষ থেকে শুনতে পেলাম কেউ যেন বলছেন : বিশেষ বিশেষ অনুভব এবং
অনুভূতি-কে অনুবাদ করাই কবিদের কাজ । এই কথাটিকে মান্যতা দিলে মেনে
নিতে হয় অনুভব এবং অনুভূতি-র অনুবাদ হল কবিতা ।
কবিতা কী , এই নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে। যেগুলি বিদ্যায়তনের পাঠ্যসূচি। আমি
সেই পাঠ্যসূচি বা সিলেবাস বদলের কোনো প্রস্তাব দিচ্ছি না। তা দেবারও কোনো অধিকার আমার
নেই। সেটা আমি ভালো করেই জানি। আর জানি বলেই ক্রমাগত লিখে যেতে হয় , আপনকথা।
একটা কথা আপনাদের জানা আছে।, কোনো শব্দ ব্যবহারের পর আমি অভিধানের কাছে
পৌঁছে যাই, অর্থের সন্ধানে। এ অনেকটা নদীর উৎস সন্ধানে মতো। অভিধান আমাকে জানিয়ে দেয়
শব্দটির ব্যবহার যথাযথ হল কিনা। সেই অভ্যাসবশে
আমার অভিধান-চর্চা।
অনুভব এবং অনুভূতি - অর্থ পেলাম।কী পেলাম ?
সেটা তো পাঠকের থেকে আড়ালে রাখব না আধুনিকদের মতো । আধুনিকরা আড়াল চাইতেন।
তাঁদের আড়ালের প্রয়োজন ছিল। আমার কোনো আড়ালের প্রয়োজন নেই , কারণ আমার সবটাই ওপেন।
অনুভব = জ্ঞান , উপলব্ধি , বোধ । ২. প্রভাব , মাহাত্ম্য।
অনুভূতি ॥ মনের সুখ-দুঃখ-র বোধ। ২. শরীরের ছোঁয়া স্পর্শ ব্যথা-র
বোধ , সাড় , চেতনা।
এখন অর্থ দ্যাখার পর কনফার্ম হতে পারছি , কথাটা ভুল বলিনি।
একটা কথা আমার মনে হচ্ছে , তা হল অনুভব শব্দটির যে কোনো একটি -কে গ্রহণ
করা যাবে না। গ্রহণ করতে হবে তিনটি অর্থ-কে একত্রে।
একটু বুঝিয়ে বলি।
যেমন কেবলমাত্র আমি যদি জ্ঞান-কে অনুবাদ করি কবিতায় , সেটা আর কবিতা থাকবে
না । হয়ে যাবে জ্ঞানচর্চা-র দলিল ।আবার সব উপলব্ধি-কে অনুবাদ করা যায় না। কিছু কিছু
উপলব্ধি অন্তপুরে বসবাস করা পছন্দ করে। আবার
অনুভব = বোধ ধরে এগিয়ে খুব বেশি দূর যাওয়া যায় না। এমনটাই আমার ধারণা। সম্ভবত 'বোধ
' -এর একটি সীমাবদ্ধতা আছে।
আর আমাদের এখন সীমা অতিক্রমই একটি প্রধান কাজ।
আমরা গরমজল এবং ঠান্ডাজলের পার্থক্য বুঝি। এটা আমাদের সহজাত তথা জন্মগত । এর জন্য আমাদের নতুন কোনো স্কুল-শিক্ষার প্রয়োজন
হয় না।
এটা আমাদের 'অধীত বিদ্যা ' নয়।
এখন কবিতার সঙ্গে এমন অনেক কিছুই থেকে যায় , যা অধীত বিদ্যা নয়। অধ্যায়ন
করে তা অর্জন করা যায় না। যদি যেত তাহলে বাংলাসাহিত্য নিয়ে পঠনপাঠন করেছেন এবং গবেষণাও
করেছেন তাঁরা সকলেই কবি হয়ে যেতেন। তার অর্থ এই নয় যে যিনি কবিতা লিখতে আসবেন তাঁর
বানান , ছন্দ এবং কবিতাচর্চার ইতিহাস না জেনেই তিনি কবি সেজে যাবেন।
কবি সাজা-র জন্য তাঁকে অবশ্যই অনুভব এবং অনুভূতিকে কবিতায় অনুবাদের কৌশলটি
অবশ্যই রপ্ত করে নিতে হবে।