সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

নবনীতা চক্রবর্তী




 গ্রন্থ-বাসন্তিকা বাসস্টপ(কবি নিলয় নন্দী)
প্রকাশনা—স্রোত।প্রচ্ছদ—অয়ন চৌধুরী।

আলোচনায় নবনীতা চক্রবর্তী



“কাল তাকে ছুঁয়েছিলো মেঘ/আজ তাকে ছুঁলো বৃষ্টিজল”
—পূর্নেন্দু পত্রীর এই উপমা মূর্ত হয়ে ওঠে কবি নিলয় নন্দীর কবিতা-আবেগ এ।কবি,বৃষ্টিজলেরমতোই শব্দ বুনে দেন,অক্ষরে চিকমিক আবেগ !
২০১৯ এর বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর কবিতার বই ‘বাসন্তিকা বাসস্টপ’। পঞ্চান্নটি কবিতার সমাহার;নাকি আবেগের মায়াজাল !  প্রকাশনা স্রোত । যে বইয়ের কবিতা প্রবাহে স্রোতের মতোই বয়ে আসে শব্দ-আবেশ।প্রায় সব কবিতা জুড়েই অপরূপ ধ্বনিবৈচিত্র্যে বিমূর্ত দর্শন;রামধনু পার করেও আরও কিছু রং জুড়ে নেয় !
’প্রবেশক’ থেকেই আবিষ্ট শব্দের নরম পালকে বুলিয়ে দেন পাঠকের মন;কি মরমী আবেদন গোটা কবিতাকে জড়িয়ে! “আতঙ্ক বা নৈতিকতা পেরিয়ে/বৃষ্টির ছাঁট, বা করুণ কুয়াশা এসে বলে যায়/”লিখেছো?লিখেছো তুমি?”…..এইই সব/এইসব মধ্যদুপুর লবনাক্ত রাত তোমাকে লিখি/তোমারও কি কথা নেই কোনও?”প্রবল আবেগী অক্ষরবুনন ; তার হলুদ,কমলা গলি সাঁতরে কবির ভিতরঘরে চোখ মেলতেই মূর্ত হয় কবিমনের অনাবিল ‘পসরা’৷যেখানে তিনি অবলীলায় বলে ওঠেন—“আপাতত কবিতা বিছিয়ে বসে আছি/তুমি আসবে,গোটা একটা শ্রাবণ পেরিয়ে…” ।‘বাসন্তিকা বাসস্টপ’নামকরণেই লেখা কবিতাটি জুড়ে আছে এক অদ্ভুত বিষন্নতা—“তবু হয়ে ওঠেনা কিছুই,কথা রাখাও/যাওয়ার আগে বলে যায় যাচ্ছি”
এই বইয়ের ”শরীর জুড়ে কবিতা মহল্লা”,সর্বাঙ্গের ভাঁজে একে একে বাঁধা হয় নরম অনুভব সাঁকো । কয়েকটি কবিতার নির্মাণবৈচিত্র্য তার সিগনেচার প্রকাশ বলাই যায়---
যেমন ‘গন্তব্য’ কবিতায় ‘ থোড় বড়ি খাড়া’ বোঝাতে সপ্তকের ব্যবহার ।
 ‘শুরুর শেষ বা শেষের শুরু’ তে “আলোর ভূমিকা লিখতে গিয়ে/ঝুপ করে নেমে এল অন্ধকার” এই বক্তব্যের সাথে , পরবর্তী পঙ্কতির ভাবনা, সংখ্যার বিন্যাসের সাথে মিলিয়ে দেওয়া—“১.ফোটন বিচ্ছুরণ এবং সৌরআসবাব/২.অবোধ্য দেওয়ালচিত্র বা হায়ারোগ্লিফ/৩.সা রে গা মা অবিশ্রান্ত ক্যাকোফনি” ;প্রশংসার দাবী রাখে এই প্রয়োগ !  চমকে দেয় “”সা রে গা মা” র সাথে “অবিশ্রান্ত ক্যাকোফনি” র রসায়ন ।
‘উড়ান’ কবিতায়,সিঁড়িভাঙার মতো বাঁকে, কবিমননের উত্তোরণ প্রকাশের প্রয়োগ ,স্বতন্ত্র এবং অতীব আধুনিক।
গভীরভাবে মনে রাখার মতো কবিতা ‘ইয়েট ইয়েটস্’ ; আইরিশ কবি ইয়েটস্ এর চার পঙ্কতি দিয়ে কবিতার শুরু।পুরো কবিতার নেপথ্যে মালা গাঁথবার মতো জড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ,ইয়েটস্ এবং রোদেনস্টেইন  ; কোথাও প্রকটভাবে না বলেও এই তিনজনের সৃষ্টির নান্দনিক নির্যাস আঁকা হয়ে গেছে কবিতার প্রবাহে ; “কাঁধে হাত রাখেন ইয়েটস্”,পুরো কবিতাটি শেষমেষ মিলে যায়,মিশে যায় ,ইয়েটস্ এর প্রথম চার পঙ্কতির অব্যক্ত ভাবনার সাথে।
‘একটি যৌন কবিতা’—প্রতি ছত্রে শব্দবন্ধ মূল অর্থে ভালোবাসার কথা বলে।অদ্ভুত কিছু রূপকের মাধ্যমে তীব্র কামনার ইঙ্গিত বহন করে শুধু ;যেমন,”হড়কা বাণ” বা “আঙুরের রঙ চড়ছে” ।তারপর আবারও বাঁক নিয়ে কবি বলে দেন,ভালোবাসা ছাড়া যৌনতা ব্যপ্ত হয়না ।
তবে ‘পাখিজন্ম’কবিতাটি ভাবনাবিন্যাসের নিরিখে সবার চেয়ে স্বতন্ত্র।আত্মবিবৃতিতে কবি শুরু করেন ,”যারা পাখিজন্ম চায় আমি তাদের দলে পড়িনা/আমার ফুসফুসে অতো জোর নেই”;তরপর তীব্র অভিঘাতমূলক বাঁকবদল—"আমি চঞ্চুতে ঢেলে দিই উড়ানমন্ত্র/ডানা মেলে শঙ্খচিল…/শঙ্খ লাগে শরীরে জলে উড়ালপুলেও…/আর দৌড়তে থাকে অস্ট্রিচ সঙ্গমের দিকে/পাখীজন্ম তার কাছে এক অনিবার্য অভিশাপ”…কাব্যিক অক্ষরবিন্যাসে কি গভীর দর্শন! অনি্র্দেশ্য চলনই এই কবিতাকে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।
‘দোজোখনামা লাইভ’ এ কবি বলেন “শূন্যতায় ডুব দিই।নীল অবগাহন।/যদিও চারপাশে চড়া রোদ,হাওয়া,ব্যস্ত বাসস্টপ/আমাকে ঘিরে আছে রাস্তা,বিড়ম্বনা বৃত্ত/আমাকে চিনে রাখে চিঠি,নিঝুম গজল/আমাকে ছুঁয়ে থাকে ট্রাম,অসমাপ্ত শহর”।পরিমিত অথচ গভীর আবেগ ফুটে ওঠে  প্রতিটি ছত্রে…”তাকে দিই লুকানো খাতার না লেখা পাতা সব”।এখানে “বিড়ম্বনা বৃত্ত” ফ্রেজটির পর এই শেষ পঙ্কতির মেলবন্ধন অপরূপ আবেদন গড়ে তোলে।সেইসাথে মেটাফর ব্যবহারের বোধ এবং তার স্বতঃস্ফূর্ত প্রয়োগে মনে দাগ কেটে যায়।
ভালো লাগে বিভিন্ন কবিতায় ব্যবহৃত,  ‘নিঝুম গজল’,’কাব্যিক আড়াল’,’প্রতিবেশী চাঁদ’,’আলোর সংলাপ’,’ইচ্ছে শহর’,’বনলতা চোখ’,’ব্যক্তিগত নৌকা’,’চকিত শ্রাবণ’,’দুরত্ব অভিসার’ ইত্যাদি মেটাফরের যথাযথ প্রয়োগ।ঠিক তারই সাথে  মন কেড়ে নেয় সিমিলিসের প্রয়োগও—"ঈর্ষার রং নীল” বা “গন্ধের নাম গোধুলী” ইত্যাদি।

আঙ্গিক আর প্রকাশের ভিত্তিতে অন্যরকম জায়গা করে নেয় তিনজন কবি এবং সাহিত্যিককে নিয়ে লেখা তিনটি কবিতা।বিভূতিভূষনকে মাথায় রেখে লেখা কবিতা ‘আরণ্যক’এ;কবিতার প্রথম দুটি পঙ্কতিতে আঁকা হয়ে যায় তাঁর প্যাশনেট প্রকৃতিপ্রেম এর নির্যাস—“আমার অলিন্দের নাম ফুলডুঙরি/আমার নিলয়ের নাম এঁদেলবেড়ে”।‘পথের পাঁচালী’র দিকনির্দেশও করা হয় সবিশেষ দক্ষতায় !
‘স বিনয় নিবেদন’ ।কবি বিনয় মজুমদারের কবিতা ভাবনা কে পটভূমিতে রেখে লেখা কবিতার নামকরণই নজর কেড়ে নেয়।অলীক অবয়বে ছুঁয়ে যায় গায়ত্রীপ্রেম ! কবির বিনয় প্রেমকে চিত্রায়িত করে, পরবর্তী তীব্র শব্দক্ষেপণ,”কান্ট,দেরিদা বা ফুকো ছেড়ে বিনয়ে আবার” ।
ছোট ছোট শব্দবন্ধে বিমূর্ত ছবিতে আঁকা হয়, কবি পিনাকী ঠাকুরের কবিতাবোধ ,তাঁকে নিয়ে লেখা কবিতা ‘অসমাপ্ত’তে ;সেইসাথে তাঁকে ঘিরে বাসন্তিকা কবির আবেগী হাহাকারেও সম্পৃক্ত হয় পাঠক-হৃদয় !চেনা পরিসরে কবি পিনাকী ঠাকুর আজ আর নেই ; কবিমানসে তো আদানপ্রদান চলতেই পারে ;”আগে তো কখনও কথা বলা হয়নি,কবি/কিভাবে যে কথা শুরু করি !”কি আবেগী প্রকাশ !

পাঠককে সবচেয়ে বেশি আবেশে জড়িয়ে রাখে একাধিক কবিতায় কবির  প্রবল “তুমিময় স্রোত”….
‘লাইফ ইন আ মেট্রো’কবিতায় “তুমি চেপে ধরছো আঙুল।আমি ভারসাম্য/তোমাকে গড়ে তুলবো আমি।উচ্চাকাঙ্খা”। ‘সামুদ্রিক’ কবিতায় “আমি তাকে চিনি, যে আমার সাথে কখনও সমুদ্র দেখেনি/আমি তাকে চিনি যে অলক্ষ্যে আমার নাম বালিতে লিখেছে “ কিংবা একই নামকরণে  “ধূসরতা অনিবার্য্ জেনেও/তোমাকেই ডাকি” ।‘ঘরোয়া’ কবিতায় “সমস্ত গানের শেষে তোমার মুখ।সব কবিতার শেষেও”।ঠিক তার পরের পঙ্কতিতেই অভিঘাত—“কিন্তু সব ঘরের শেষে বারান্দা থাকেনা/একটা ঝুলবারান্দা….তুমি কি হেঁটে যাবে কোনওদিন?”    কবির হৃদয় নিংড়ে প্রবল প্যাশনেট ফ্যান্টাসির ঢেউ !মোহাবিষ্ট পাঠক ডুবতে থাকে।
রোজকার ওঠাপড়া আর দৈনন্দিন জীবনে জড়িয়ে থাকা আবেগও নিপূণ শব্দসৌন্দর্য্য নিয়ে ধরা দেয় কবির লেখনীতে।স্যাটায়ারেরও কি চমৎকার প্রয়োগ ! ‘আসবাব’ কবিতায় কবি লিখছেন “সেরেস্তায় একমনে হিসেব কষে বাণীব্রত/কতটা রাজস্ব জমা পড়ে বা কত শতাংশ মুনাফা/হিসেবের গরমিলে দেরাজে পড়ে থাকে সুরা বা সুরাহা”।শেষ পঙ্কতিতে দীর্ঘশ্বাস শব্দের ব্যবহার না করেও আরও ব্যপ্ত মননপ্রসারের দিকে ঠেলে দেন পাঠককে—“গোপন আসবাবে সযত্নে তোলা থাকে প্রশ্বাসকাহিনী” আর আসবাব..নস্টালজিয়া এবং তার সাথে জড়িয়ে থাকা দীর্ঘশ্বাসকে একসুতোয় গেঁথে দেন।এখানেই বোধকরি কবি ও কবিতার সাফল্য।
‘ঘরোয়া’ কবিতার প্রথম চারটে পঙ্কতিতেই মুন্সিয়ানায় কবি এঁকে দেন নিঃস্বতা অথবা একলাযাপনের দেওয়াল -ছবি;শেষে এসে নদীর মতো বাঁক—“ঘর জানলা,ছাদ,কাপড় মেলার দড়ি,টেলিগ্রাফের তার,হাওয়া/পাড়ি দুর../আমার আর ঘরোয়া হওয়া হল না”।চার দেওয়াল থেকে দেওয়াল পার করে ভেসে যাওয়া,অসীম,অপার…পুরো স্তরটি উপস্থাপিত হয়েছে কি স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশে !
‘প্রিয় শব্দ ও আনুষঙ্গিক’ কবিতায় নিঃসঙ্গতাকে এঁকেছেন সৌভিক মায়ায়—"চশমা খোয়া গেলে চিঠি।/চিঠি ফুরিয়ে গেলে বাস।/বাস পেরিয়ে গেলে স্তব্ধতা”এখানে যতিচিহ্নের ব্যবহারও কবিতার আবেগকে চিত্রায়িত করে।   কতগুলো কবিতার ডিকশন পাঠককে চমকিত করে।
যেমন-‘এখনো নামকরণ বাকি রয়ে গেছে’ কবিতার শেষ পঙ্কতি,”শ্রেষ্ঠ কবিতার খবর কারো কছে পৌঁছয়না আর/এখনও নামকরণ বাকি রয়ে গেছে”।‘মহাকাব্যিক’ কবিতায় “এভাবেই ইন্দ্রিয় চিনে নেয় গোপন অসুখ…এভাবেই মহাকাব্য লেখা হয়”।‘আমিষ অক্ষর’ কবিতায় ‘আমার কবিতায় বেড়াল ঢোকেনা আর” ‘কুয়াশা’ কবিতায় “আমি জড়িয়ে ধরেছি কুয়াশা।গাছ নয়/আমি ঠোঁটে মেখেছি কুয়াশা।ঠোঁট নয়”।‘গুটিপোকা’য় “খিদেও বন্ধ হয়।কোকুন লুকোয় কাম ক্রোধ/আর কিছু সন্ধিপদী বোধ/পিউপা ডানার দিন গোনে,মানুষ রেশম”।‘নিশিনাগরিক’ কবিতায় ‘আমার বাড়ির আলো নিভেছে তো কবেই,/ আজ প্রতিবেশী চাঁদ/ব্ল্যাকবোর্ডে কষে চলে পাটিগণিতের হিসেবনিকেশ” পরপর তিনটি পঙ্কতিতে ভিন্নতর ভাবনায় পাঠককে নিয়ে চলেন কবি।একইরকমভাবে ‘বৃত্ত’ কবিতায় অভিনব ভাবনার প্রকাশ,”বৃত্ত আসলে অভিসন্ধি/আর,কম্পাস আনুষ্ঠানিক”।‘ভ্রমণকাহিনী’কবিতায় আত্মবিবৃতিতেও কি তীব্র শব্দোচ্চারণ !’আঁধারের বায়োগ্রাফি লিখি।আলোর সংলাপ”।অদ্ভুত আয়রনি পাওয়া যায় ‘ভ্রূণ’কবিতায় “প্রেমিক বেকার হলে প্রেমিকাও সারারাত জাগে/….প্রেমিকা সম্ভবা হলে প্রেমিক পিছন ফিরে শোয়”|
‘আত্মহত্যা’ কবিতায় অপরূপ শব্দনৈপূণ্যে আঁকা হয়ে যায় ব্যাথাতুর কোলাজ, “তবু আকাশ নীল।যোনি লাল/বুক জুড়ে পায়রা উড়াল।অস্থির প্রচ্ছদ” তারপরই তীব্র স্যাটয়ার  “স্নানঘরে শিশ্নপুরুষ।ধুয়ে যাওয়া পাপ/তখনো খানিক লেগে আছে।…প্রেম আর আসক্তির তফাৎ বোঝা দায়“ এবং অমোঘ শেষের তিন “কিছু কবিতা সাজানো থাক।তাক/বাকি সব মুখস্থ/প্রবাহ,পসরা বা জ্যোৎস্নারং অমাবস্যা”।নামকরণ থেকে শেষ পঙ্কতি অব্দি পাঠককে ভাবনার কোন স্তরে পৌঁছে দেন কবি !
কবিতার ডিকশন হিসেবে ‘আমিষঅক্ষর’,’ফেরা’,অসমাপ্ত’,’গন্তব্য’,’বাইশে শ্রাবণ”,’ভিনসেন্ট’ প্রশংসার দাবি রাখে।‘হেমন্তের এস এম এস’ কবিতায় হেমন্ত শেষের শীত মুহুর্ত ,নিশ্চুপ রাত অবলীলায় আঁকা হয়ে যায়।“এপিটাফ” শব্দের প্রয়োগ আরও বাঙ্ময় করে তোলে কবিতার ভাবকে।
  ‘উড়ান’ এর শেষ পঙক্তি পাঠকের গোপন ডাকবাক্সে অনন্ত বার্তা পাঠায়---“ফানুসমানুষ গোনে ক্ষয়ে যাওয়া মুখ” ।আবার ‘ফেরা’ কবিতায় কবি অনিবার্য ডাক দিয়ে যান—“ফিরে এলে সোনালী ফসল/ফিরেএলে প্লাবনের ডাক”।
 ‘কথোপকথোন’,’উঠোন’ বা ‘রাত্রিকালীন দুচার লাইন’এ এঁকে দেন মায়াময় তুলির জাদুকরী টান—“আঙুলে আঙুল খুঁজে পেলে চূড়া ছুঁয়ে যায় চুম্বনগ্রাফ/উপচানো ওয়াইনের স্যাক্সোফোন কারুকাজ শ্রাবস্তী শরীরে/অন্ধকার বাড়লে জ্যোৎস্নাও মাত্রাহীন হয়”(রাত্রিকালীন দুচার লাইন’)--আবেশী শব্দবিন্যাস!বৃষ্টিফোঁটার মতো শুধু ভিজিয়ে দিয়ে যায়,ধরা সে দেয় না।
‘মেয়েটি’,’রেনম্যানিয়া’,’বারিস্তা’ কবিতায় ছন্দের জলতরঙ্গ।সাথে ভাবাবেগের দরাজ মীড় বা গমক। কুয়াশাঘেরা কাফেটেরিয়া…বসন্তস্রোত বা বৃষ্টিছাঁট অনায়াসে তিনসপ্তকে পাড়ি দেয়।সচ্ছ্বল সে গতি।বৃষ্টিজলের মতোই অনাবিল শব্দ বোনা হয়ে যায় !
কবির ভাবপ্রকাশের পরিমিতি বোধ,সলিডিটি,সুন্দর শব্দচয়ন,নির্মাণের আঙ্গিক প্রতিটি কবিতাকে আলাদা মাত্রা দেয়।কিছু কবিতায় ,একটিবাক্যে প্রথম অনুচ্ছেদ রচনার ধারা ,যেমন ‘পাখিজন্ম’,’অসমাপ্ত’,’উড়ান’,’কোলাজ’,’মহাকাব্যিক’,’উড়ান’,’কুয়াশা’ ইত্যাদি,পাঠকের কাছে, কবিতাটিকে বাড়তি গভীরতা নিয়ে ভাববার পরিসর যোগ করে।
সামগ্রিকভাবে ‘বাসন্তিকা বাসস্টপ’ কবিতাপ্রেমী যেকোনও পাঠকের কবিতাতৃষ্ণা তৃপ্ত করবার যাবৎ উপাদান সমৃদ্ধ একটি কবিতার বই। কবি নিলয় নন্দী আদতেই ‘এক মগ্ন শব্দগ্রাহক’, অনুভব শৈলীতে জড়িয়ে নেন পাঠকের মন।সে অস্ফুটে বলে ওঠে…..”সেই ভালো,শুধু শব্দে থেকো”


বই—বাসন্তিকা বাসস্টপ।কবি—নিলয় নন্দী।

মূল্য-১২০টাকা