সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

সজীব পাল


 ভরা সন্ধ্যার কাব্য


কখনো কখনো পরিচয়ের দূরত্ব মাপা যায় না শুধু অনুভব করা যায় । হঠাৎ পঁচিশ বছর পরতার মাঝে বয়ে গেছে অজস্র না দেখা স্রোতের নদী।
অর্ণবের সাজানো বাগান,সাজানো কথা ,সাজানো সুখ ভালো লাগে না। তবুও এই বয়সে এসেও কেন জানি মন সাজানো বাগানে নির্ভয়ে ঘুমাতে চায়।মানুষ বুঝি এমন হয়? আরেকটা হুবুহু নদীর জলে পা ডুবিয়ে রাখা মানুষের প্রতি এমন পিছুটান,যেন কত যুগ কত কাল মানুষটার সাথে কথা হয় নাই। কেন এমন হয় শুধু মানুষেরপৃথিবীতে কত প্রজাতিওই যে উড়ে গেল শঙ্খচিলটা তারও কি এমন হয়অর্ণব অসংখ্য উপন্যাস পড়েছে। আজ তার কাছে মনে হয় কোনো লেখক নেপথ্যে বসে তার জীবনের উপর ইচ্ছে কলমের টান দিয়ে যাচ্ছে অবিরত। সে ভবঘুরে, ঘর থেকেও পথবাসি স্বজন থেকেও নেই। এই পথ এই নদী, এই প্রাঞ্জল সবুজ পাহাড়িই তার মনের মানুষ ,কাছের মানুষ, প্রাণের মানুষ।

পঞ্চাশ বছরের মানুষ আজকাল হয়ে যায় ,আগেকার সত্তর বছরের বৃদ্ধের ন্যায়। পক্ককেশ,হার মজ্জায় ঝং ধরা এক জীর্ণ-শীর্ণ মানুষে পরিনত অর্ণব দত্ত তাকে বয়সে যতটা না ঘায়েল করেছে ,তার চেয়েও বেশি মানসিক যন্ত্রণায় পরাহত।
সন্ধ্যার আকাশ ক্রমশ চোখের পলকে ম্লান হয়ে আসছে। কাছে কোথাও থেকে আসছে সন্ধ্যার কাসা উলুধ্বনির শব্দ যদিও এই রীতিটা অর্ণব প্রায়ই অনুভব করে যে আজকাল সন্ধ্যা ধূপ ধুনা ওঠে গেছে। বৈজ্ঞানিকগন ধারনা দেন ধূপকাঠির ধোঁয়া থেকে এজমার সম্ভাবনা রয়েছে তাই সভ্য সমাজ এইটা এড়িয়ে চলতে চেষ্টায় ব্রতি।
মুসলমানদের মসজিদ থেকেও আজানের সুর আসছে। অর্ণব দত্ত একবার মাথা তোলে আকাশ দেখলো। সন্ধ্যা কিভাবে উজ্জ্বল স্বচ্ছ দিনকে কালো যবনিকায় আচ্ছন্ন করে ফেলছে।
একটা লোক দেখা যাচ্ছে এখনো কোদাল দিয়ে ধান ক্ষেতের আল কাটছে। কি অদ্ভুত এই সন্ধ্যা। যা কিছু লুপ্তপ্রায় এইগুলিই যেন আজ এই সন্ধ্যায় সে প্রত্যক্ষ করছে। আচমকা তার মাথাটা অসহ্য যন্ত্রণা করছে। আশেপাশে কেউ নেই সে স্বগত বলছে,এইটা ব্রেইন স্ট্রুক এর লক্ষন নয়তো? কেন জানি তার মনে হয় আজ আমার দুঃখকে অবহেলা আর উপহাস করার সময়। মৃত্যু লগি হাতে অপেক্ষা করুক সময় নদীর ঘাটে। কিছু বোঝাপড়া করে আসছি। সে অবলীলায় মাথার যন্ত্রণাকে পিছনে রেখে ওই কোদালিয়া লোকটির কাছে এগোতে থাকলো।

লোকটির বয়স আন্দাজ করা কষ্টকর কারণ পরিপূর্ণ মাংস পেশি। অথচ কি ব্যঙ্গচিত্রযেন বৃদ্ধের প্রতিচ্ছবি। আবার যুবকদের মতো স্ট্রং। খুব তাড়াহুড়ো করে আল কাটছে অর্ণব দত্তের কাছে কৃষকরা হলো উচ্চজাতি। তাঁরা ঈশ্বরের মঙ্গল শক্তি
"
এই যে শুনছেন দাদা "- অর্ণব জিজ্ঞেস করলেন।
লোকটি মাথা না তুলেই বলল," শুনবার সময় নেই যা কয়োনের কন এইদিকে কাজের মাথা কাজে খায়।"
বলছি আশেপাশে কোথাও থাকার জায়গা আছে?
এইবার লোকটি বিস্ময়কর চোখে দেখলো , এইগ্রামে আবার কার সখ জাগলো থাকার ! থাহনডা বড় কথা না। আপনার বাড়ি কোথায়আমার বাড়ি নেই আমি যাযাবর
যাযাবর কি আইনের লোক?
না না,ঘুরে ঘুরে পদভ্রমণ আমার কম্ম । আচ্ছা দাদা আপনার নামটা জানতে পারি?
হু, সুয়েল মিঞা
হঠাৎ করেই অর্ণব দত্ত ধপাস করে আছড়ে পড়ল মাটিতে। সুয়েল মিঞা কাজ স্থগিত রেখে অর্ণবের কাছে এসে বলল,"কি হলো কি হলো রহম করো আল্লাহ এই লোকটির পরিচয়ও ঠিকঠাক জাইনতে পাইরলাম না তুমি এই কোন বিপদে ফেলাইলা কও "
সুয়েল মিঞা ক্ষেতের থেকে আঁজলা ভরে জল নিয়ে অর্ণবের চোখে ঝাপটা দিলো কিছুক্ষণ পর অর্ণব চোখ মেললো বলল, আমি এখনো মরিনি?
ধুর ছাই মরলে কি আর এই কথা জিজ্ঞেস করতে পাইরতেনআপনার নামটা বলুন। কিছু একটা হলে তো বিপদে পড়ে যাইতাম
আমার নাম অর্ণব দত্ত। আমাকে আপনার বাড়ি নিয়ে যাবেন? ভীষন ক্ষুধা পেয়েছে। সারা দিন কিছুই খাই নি
আহারে! কিন্তু আমরা তো মুসলমান
এখন এইসব মানে না। মানবতাটাই প্রথম। ধর্ম হলো একটা শব্দ। যা বর্তমানে অনেকেই তোয়াক্কা করে না। একজন বলেছিল," একটা পরকাল কয়েকটা ধর্মগ্রন্থ "সুতরাং অনেক গন্থের উপর জাত বিচার করে সহজ সুন্দর সরল স্বর্গকে কঠিন করবো কেন?
এতো কথা বলার দরকার নেই। আপনাকে ভীষন ক্লান্ত লাগছে। চলুন আপনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের আপত্তি নেই
সমস্ত আকাশ কালো হয়ে গেছে। একটা তরুণীর চিৎকার ভেসে আসছে" মা ওইদেখো ছায়াটা আমার সঙ্গ নিচ্ছে। ভয় করছে ভীষন! " সুয়েল মিঞার এক কাঁধে কোদাল রেখে। ডান হাতে অর্ণবের বাহুতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুবের দিক লক্ষ্য করে। ধীরে ধীরে দুইজন মিলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে




সজীব পাল