কী লিখতে চাই- এ আলোচনায় এক কথায় বলা যায়,
জীবনের কথা, মানুষের কথা লিখতে চাই যদি
একটু বিস্তারে যাই তো বলবো- মানুষের সুখ-দুঃখের , আশা আকাঙ্খার, ব্যথা বেদনার,
আনন্দ-উচ্ছ্বাসের, হতাশা- যন্ত্রণার কথা লিখতে চাই। প্রধানত ছোট গল্প লিখি; তাই
মানুষের গল্প লিখে ‘গল্পের মানুষ’ হতে চাই।
আমি নিছক সময় কাটানো কিংবা শখে লিখি না। লিখি
একটা তাড়না থেকে । যে সময়ে , যে সমাজে আমি বাস করি, সেই সময় ও সমাজের সংকট,
অবক্ষয়, মানবিক মূল্যবোধের ঘাটতি, মানুষের ক্রমশ একা হয়ে যাওয়া; এসব যখন আমি দেখি
ও অনুভব করি , তখন এগুলোই আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করে। তাছাড়া আমি নিজেও তো এই
সমাজের একজন। তাই নিজের যন্ত্রণা, ব্যাথা –বেদনা , অতৃপ্তির কথাও আমি লিখতে চাই
এমনভাবে , যাতে ব্যাথা বেদনা, যন্ত্রণাগুলো একান্ত ব্যক্তিগত না থেকে সর্বজনীনতা
লাভ করে। নিজের দুঃখ – যন্ত্রণাগুলো সকলের দুঃখ- যন্ত্রণা হয়ে প্রতিভাত হয়। আসলে
আমার লেখার মধ্য দিয়ে আমি সময় ও সমাজের প্রেক্ষিতকে ধরতে চাই।
আমি মনে করি সাধারণ মানুষ সমাজকে যে ভাবে দেখে,
একজন দায়িত্বশীল লেখক তাদের চেয়ে সমাজকে আরও গভীর ভাবে দেখে। সঠিক ভাবে বলতে গেলে
দেখা নয়, পর্যবেক্ষণ করে। তাই সাধারণ মানুষের কোনো বিষয়ে যদি ভাসা-ভাসা , গোল- গোল
ধারনা থাকে; লেখকের সে বিষয়ে ধারণা হবে আরও সথিক, স্বচ্ছ ও গভীর। অন্তত লেখকের তা
হওয়া উচিত বলে মনে করি । সেই স্বচ্ছ ধারণাটাকে সাধারণ মানুষ অর্থাৎ পাঠকের কাছে
সাবলীল ও সহজ ভাষায় পৌঁছে দিতে চাই। এতে হয় কী, সমাজের কোনও সমস্যা নিয়ে লিখলে
পাঠক অর্থাৎ সমাজের মানুষ লেখার মাধ্যমে সমস্যার গভীরে যেতে পারে। সঠিক সমস্যাটা
বুঝতে পারে। তাতে অনেক সময় সমস্যা সমাধানের একটা রাস্তা বেরিয়ে আসে। এতে সমাজ
উপকৃত হয়। লেখকের সামাজিক দায়বদ্ধতাও পরিস্ফুট হয়। লেখার মধ্যে দিয়ে যদি সমাজের
সামান্যতম উপকারও হয় তাতে ক্ষতি কী ? বরং তৃপ্তি ও সার্থকতা বোধ আসে।
আমার লেখা পাঠক পড়বে শুধুমাত্র টাইম –পাশের
জন্য কিংবা শুধুমাত্র আনন্দ মজা পাওয়ার জন্য, এটা আমি চাই না। অর্থাৎ আমার লেখা
কেবলমাত্র বিনোদন মূলক হবে এমন লেখা আমি লিখতে চাই না। তার মানে এটাও নয় যে আমার
লেখায় নান্দনিকতা থাকবে না। হাস্যরসও সাহিত্যের অঙ্গ। মাত্রা ঠিক রেখে তা অবশ্য
থাকবে। সেই সঙ্গে ভাবনার ব্যাপারটা থাকবে পাঠক আমার লেখা পড়ে এমন যেন কখনো না ভাবে, যে
তার সময় নষ্ট হল। সে যেন লেখা পড়ে কিছু চিন্তার খোরাক পায়। সবসময় যে এমনটা লিখতে
পারি ,তা নয়। তবে চেষ্টা করি।
পাঠককে শুধু মাত্র একটু হাসানো , বা একটু ভয় পাওয়ানো,
কিংবা যৌন সুড়সুড়ি উত্তেজনা ও আনন্দ দেওয়ার জন্য আমি লিখতে চাই না। আমার লেখাআর
মধ্যে যৌনতা ও বর্বরতা আমি পছন করি না। হ্যাঁ মানছি , এগুলোও জীবন ও সমাজের অঙ্গ। সমাজ নিয়ে লিখতে গেলে নিশ্চয় ও
বিষয় গুলোও আসবে। তবে, গল্পের জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু মার্জিত ভাষায় সীমারেখা মেনে
লিখি। পাঠক যে বোকা এমন ভাবাটা ভুল। সামান্য ছোঁয়া দিলেই পাঠক ব্যাপারটা বুঝে নিতে পারবে। সেখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ও মনে উত্তেজনা বাড়িয়ে
দেওয়ার জন্য লেখায় ‘সেক্স – ভায়োলেন্স’ ঢুকিয়ে দেওয়া , রগরগে বর্ণনা দেওয়া, আমার
পছন্দ নয়। পাথকের যেন এ ধারণা না জন্মায় যে, লেখকের পরিমিতিবোধ নেই। সুস্থ জীবন ও
সুস্থ সমাজ –সংস্কৃতি পরিপন্থী কিছু আমি লিখতে চাই না।
এবারে আসি আমি কী ভাবে লিখতে চাই এ আলোচনায়। প্রথমেই বলবো, আমি যে ভাষায় কথা বলি; অর্থাৎ কথ্য
ভাষাতেই আমি লিখতে চাই। সহজ-সরল ভাষা, যা সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারে এমন ভাষায়
লেখাটা আমার পছন্দ। গল্পের ব্যাপারে যদি বলি, তাহলে বলবো গল্পহীন-গল্প আমি লিখতে চাই না। আসলে,
গল্পহীন গল্প কথাটাই আমার কাছে অবাস্তব। মিষ্টি জাতীয় জিনিস যথা চিনি, গুড় এ সব ছাড়া
যেমন মিষ্টান্ন হয় না; তেমনি গল্প বা কাহিনি ছাড়া গল্প হয় না। চেতনা প্রবাহের গল্প নামে যা লেখা
হয়, তেমন গল্প আমি লিখতে চাই না। আমি গল্পর প্লট, ক্যারেক্টার, থট এ তিনটিকেই রাখতে
চাই। অবশ্যই ‘প্লট’ অর্থাৎ কাহিনি থাকবে। তবে কতটা কাহিনি রাখবো কিংবা শুধুই কাহিনি রাখবো, না দর্শন থাকবে, এ সব ভাবনা হবে গল্পের
প্রয়োজন
অনুযায়ী। খুব বেশি কাহিনির ঘনঘটা থাকবে এমন নয়, আবার শুধুই মননশীলতা পাতার পর পাতা,
তা-ও আমি করতে চাই না।
আমার গল্প চরিত্র নির্ভর হবে। গল্পের চরিত্র কখনো আমি নিজেই হতে পারি, আবার কখনো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। তবে
যাকে চরিত্র করতে চাই, অবশ্যই তা যেন আমার দেখা চরিত্র হয়। আমি গল্পের যে চরিত্র তৈরি
করি, তাকে সবসময় একটা শ্রেণির প্রতিনিধি হিসাবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করি। যাতে একান্ত
ব্যক্তিগত একটা চরিত্র না হয়ে কিছু তেমন চরিত্রের মানুষের সঙ্গে মেলে। আর একটা কথা,
কোনো চরিত্র তৈরি করতে গিয়ে কোন বিষয়ে আমি বায়াস্ট’ হয়ে যাতে না পড়ি, সে ব্যাপারে
সচেতন থাকি। বায়াস্ড’ হয়ে চরিত্র গড়লে গলদ থেকে যায়। বায়াস্ড’ না হয়ে চরিত্র
আঁকলে সঠিক ছবিটা ফুটে ওঠে। তাতে অবশ্য অনেক সময় রাষ্ট্র ব্যবস্থা, প্রশাসন ব্যবস্থা
বা আমলাদের ক্ষুব্ধ করা হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। আঘাত করলে করবে।
‘থট’ অর্থাৎ ভাবনা, মননশীলতা গল্পে থাকবেই। তার জন্যই
তো গল্প লেখা। আমার ভাবনাটা আমি পাঠকের
মনে সঞ্চারিত করার জন্যই তো গল্প লিখি। তবে সচেতন থাকতে হয় ভাবনাটা যেন সদর্থক
হয় এবং পাঠকের বিরক্তির কারণ না হয়।
আমি আমার গল্পের মধ্যে
ডিকশন, কনভারসেশন, ন্যারেশন এ তিনটিই রাখতে চাই। ডিকশন’ অর্থাৎ গ্রন্থনা বা নির্দিষ্ট
একটা গঠন শৈলী থাকবে। তাতে পাঠকের গল্প বুঝতে সুবিধা হয়। গল্পের খেই হারিয়ে যাওয়ার
সম্ভাবনা থাকে না। গল্পের বুনন হবে বাছাই করা প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করে।
‘কনভারসেশন’
অর্থাৎ সংলাপ আমার গল্পে প্রাধান্য পায়। চরিত্র উপযোগী ছোট
ছোট সংলাপ গল্পের মাধুৰ্য বাড়ায় বলে
আমি মনে করি। বিশেষত বিশেষ কোনও এলাকা, জেলা কিংবা বিশেষ কোন জাতি-উপজাতির চরিত্র হলে
সেখানকার বা সে চরিত্রের ব্যবহার্য ‘ডাইলেক্ট’ আমি ব্যবহার করি। অবশ্য যদি সে ভাষা
অধিগত থাকে তবেই। অধিগত না থাকলে সে অঞ্চলে গিয়ে ভাষাটা যতটা সম্ভব আয়ত্ব করে ব্যবহার
করি। এতে চরিত্রটা জীবন্ত হয়ে ওঠে।
‘ন্যারেশন অর্থাৎ বর্ণনা আমার গল্পে থাকে। সচেতন
ভাবেই রাখি। বর্ণনা বা চিত্রণ থাকলে পাঠকের মনে পটভূমির ছবিটা ভেসে ওঠে। একটু ডিটেলিং
রাখলে পাঠক ওর মধ্য দিয়ে গল্পে ঢুকে পড়ে। এতে লেখকের ভাবনার সঙ্গে পাঠকের ভাবনার
সেতুবন্ধন গড়ে ওঠে।
সবশেষে
বলি, সব শ্রেণির পাঠকের কথা মাথায় রেখে লিখতে চাই। শুধুমাত্র ইনটেলেকচুয়াল কিংবা
শুধুমাত্র এলিট শ্রেণির কথা মাথায় রেখে লিখি না। দর্শকহীন স্বর্ণময়ূর, স্বর্ণভাল্লুক
প্রাপ্ত আর্টফিল্মের মতো পাঠকহীন
পুরস্কার প্রাপ্ত লেখা আমি লিখতে আগ্রহী নই।
এলিনিয়েশনের
গল্প লিখে নিজেকে এলিনিয়েট করতে চাই না।
সর্ব সাধারণের লেখক হতে চাই। এতে অবশ্য অনেকে আমাকে প্রাচীন পন্থী গল্পকার বলতে পারেন।
আমি তা মাথা পেতে নেব।
আসলে আমি
পেছনে ফেরাও নই আবার পেছন ছেঁড়াও নই এমন লেখক হওয়ার জন্য লিখতে চাই। তবুও আসল কথা
তো সময় বলবে, তাই
সময়ের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনারও বদল ঘটতে পারে।
এ আলোচনায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জাঁ পল সাত্রের রচনার
উল্লেখ খুব একটা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রচনায় যে সুগভীর
ইতিহাসবোধ , জীবন অভীপ্সা ও সাধারণ মনীষার পরিচয় দিয়েছেন; তা অনস্বীকার্য
উপ্ন্যাসের চরিত্র সৃজন ও অনন্য রসায়ন পরিবেশনার নিরীখে বিচার করলে , বাংলা
সাহিত্যে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ।
‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের
সেইসব চরিত্র–কুবের , মালা, কপিলা ,রাসু, গনেশ দকলেই স্বমহিমায় চোখের সামনে জেন
উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । প্রাকৃতিক তান্ডব , সামাজিক অবক্ষয় , ক্ষমতাশালীর শাসন-শোষনে
মানুষের জীবন সংগ্রাম ভীষন ভাবে জীবন্ত করে তুলেছেন তার লেখায়। কোথাও কোনও বাহুল্য
নেই , নেই জটিল দর্শনের কচকচানি। চরিত্রগুলির ক্রমিক উন্নয়নয়ের মধ্যে দিয়েই হৃদয়
ভাবনার উৎসারণ ঘটেছে । সেই সময়কে, সমাজকে, রাজনীতিকে আশ্চর্যজনক শিল্প সৌকর্যে ও
বলিষ্ঠ নিপুনতায় ধরেছেন তিনি । ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় পর্যায়ক্রমে ঘনীভূত করেছেন। যন্ত্র
বিজ্ঞানে মানুষের দীক্ষা , ভৌগোলিক আবিষ্কারের অভিযাত্রা এবং সামাজিক মানব –সম্পর্কের
ক্ষেত্রে প্রয়োজনের স্বীকৃতি ; এই তিনটি বিষয়ের ভাবনাকে অসাধারণ দক্ষতায় চিত্রিত
করেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
দুঃখের সঙ্গে জানি , কালের নিয়মেই এখন এই বাংলায়, তথা সারা
পৃথিবী জুড়ে এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এগুলিও একসময় ইতিহাস হবে। এই ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা –সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বেঁচে থাকলে কি লিখতেন!
কেমন ভাবে গর্জে উঠতো তাঁর কলম! তা জানার দুর্নিবার আকাঙ্খায় তাঁর উত্তরসূরীদের দ্বারস্থ হয়েছি।
কীভাবে বর্তমান, সময়, সমাজ, রাজনীতি, শাসন- শোষণ, অবনমন বা উত্তরণকে কলমে ধরেছেন
এ প্রজন্মের লেখকঃ তা জানার জন্য এ প্রজন্মের লেখকদের লেখাগুলি পড়া খুবই দরকার। কে
বলতে পারে যে, এঁদের মধ্যেই আরেক জন মানিককে খুঁজে পাওয়া যাবে না!
বর্তমান সময়, সমাজ, সংকট , সন্ত্রাস,
সংঘাত, এই ‘স’ গুলি জাঁ পল সাত্রের ‘জেনোসাইড’ নামক দ্বিতীয় অধিবেশনের ভাষণের কথা
মনে করিয়ে দিচ্ছে। উনি বলেছিলেন –বর্তমান গণহতা সমাজের অসম বিকাশের যে শেষ পরিণাম,
সামান্যতম পারস্পরিকতার নামগন্ধ ছাড়া এ হল শুধু এক পক্ষের সীমাহীন সর্বাত্মক যুদ্ধ’।
জাঁ পল জীবিত কালে এবং বাংলায়
উপস্থিত থাকলে উনি নিশ্য়চ একই কথার পুনরাবৃত্তি করতেন বিশেষত ১৪ মার্চ ২০০৭ এর
ঘটনাকে উনি ‘জেনোসাইড’ বলতে দ্বিধা করতেন না। বহুলিখিত ও বহুচর্চিত শিল্পের জোয়ার
, জমি অধিগ্রহণ , অধিগ্রহণ –প্রতিরোধ , বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মী ও পুলিশের দ্বারা
গুলি, বোমা বর্ষণ , অসংখ্য মানুষের নিধন এসবের বিস্তৃত বর্ণনাতে যাচ্ছি না। সকলেই
জানেন। উনি থাকলে উনিও জানতেন এবং নিশ্চয় মুখ বুজে থাকতেন না , মুখ বন্ধ করার শত
চেষ্টা করলেও। উনি থাকলে কী বলতেন? অই একই কথা নাকি অন্য কিছু? তা জানার জন্যই ওঁর উত্তরসূরীদের শরণ নিয়েছি।
তাই সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষিত লেখা এখনকার গল্প লেখকদের গল্প গুলি পড়া দরকার। এখনকার বাংলার দার্শনিকরা
(কবি ও লেখক মাত্রই দার্শনিক) জাঁ পলের মতই গণহত্যা বলছেন, নাকি মুখ চাপা থাকায়
বলতে পারছেন না, কিংবা বুখের সামনে রসগোল্লা সাজানো থাকায় সব তালগোল পাকিয়ে অনৃতভাষণ
করে ফেলেছেন ! খুব জানতে ইচ্ছা হয় ।
মেরুদণ্ডী লেখকদের এখন খুব অভাব। সেই
গতানুগতিক প্রেম-কাহিনী, সম্পর্কের টানা পোড়েন আর যৌন ক্রিয়ার বর্ণনার বাইরে
পৃথিবীতে আরও অনেক বিষয় রয়েছে লেখার। সে বিষয় বর্তমান লেখকগণ লিখছেন কিনা লেখার
সাহস আছে কিনা তার সন্ধান করে চাওয়া উচিত এখনকার সমস্ত পাঠকের। আমি অনন্ত সাহসী
হয়ে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে লিখতে চাই। পারি না পারি তা স্বতন্ত্র কথা ।
সুকুমার রুজ