আমার
স্বপ্নের অরুণাচল
ছবির মতো
সুন্দর একটি প্রদেশের নাম অরুণাচল। ভারতের যে কয়টি রাজ্য ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে
আকর্ষণীয় তার মধ্যে অরুণাচল একটি। দেশটির ২৯টি রাজ্যের মধ্যে সূর্যিমামা প্রথম
উঁকি মারে অরুণাচল প্রদেশেই। এজন্য অরুণাচলকে ভারতের " ভোরের আলোকিত
পাহাড়ভূমি " বলা হয় । একে " প্রকৃতির গুপ্তধন " ও বলা হয় ।
গরমের ছুটিতে
পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে যাবার মজাই আলাদা। এক্ষেত্রে পারফেক্ট ডেস্টিনেশন হতে
পারে উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ। গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে দেশের এই
অংশে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে ভীষণরকম । সেই দলে নাম লেখাতে কে না চায় । হিমালয়ের
কোলে অসাধারণ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা অরুণাচল প্রদেশে ঘুরতে গেলে কোন কোন জায়গায়
যাওয়া যেতে পারে তা আগে জেনে নিলে ভাল হয়।
পাসিঘাট
------
ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যের সময়ে এখানে জনবসতি গড়ে তোলা হয়েছিল। অরুণাচল প্রদেশের সবচেয়ে পুরনো
শহর এটি। কেন্দ্রীয় সরকারের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের মধ্যে এই সুন্দর শহর স্থান
পেয়েছে।
নামদাফা
ন্যাশনাল পার্ক ----
পূর্ব হিমাচল
অঞ্চলের অন্যতম বড় জঙ্গল এলাকা ওই নামদাফা ন্যাশনাল পার্ক। হিমালয়কে পিছনে রেখে এই
এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অনন্য।
সেলা
পাস-----
তাওয়াং ও
গুয়াহাটির মাঝে অবস্থিত সেলা পাস। সারাবছর এখানকার পর্বতের চূড়াগুলি বরফাবৃত থাকে।
এর পাশের সেলা লেক অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
তাওয়াং -----
এই জায়গাটি
পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে দ্রুত পরিচিত পাচ্ছে । ধীরে ধীরে এখানে পর্যটকেরা সংখ্যায়
বাড়ছেন ।
ঈগল নেস্ট
ওয়াইল্ডলাইফ স্যানচুয়ারি ----
ঈগল নেস্ট
ওয়াইল্ডলাইফ স্যানচুয়ারি ও তার পাশে সেসা অর্কিড স্যানচুয়ারিতে একবার এই
স্যানচুয়ারি পাখির
জন্য সারা ভারতে বিখ্যাত ।
গোল্ডেন
প্যাগোডা, নামসই ----
নামসই শহরটি
এই গোল্ডেন প্যাগোটার জন্যে বিখ্যাত ।
ইটানগর-----
অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী হল ইটানগর । এখানকার ইটা দুর্গা , গঙ্গা লেক প্রভৃতি দশনীয় স্থান।
বমডিলা ---
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪৩৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত বমডিলা অরুণাচল প্রদেশের একটি ছোট্ট
শহর । এখানে এলে মনে হবে স্বপ্নের রাজ্যে চলে এসেছেন।
অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগর যা ভালুকপং থেকে
১৫০কিমি দূরে। নতুন আর পুরনো দুই শহর নিয়ে গড়ে উঠেছে ইটানগর। পুরনো শহর
নাহারলাগুন (Naharlagun) ছবির মত সুন্দর। ছোট্ট এই শহরে
রয়েছে দোকানপাট, বাজারহাট সবকিছুই। মূল ইটানগরের কাছেই
রয়েছে এগারো শতকের ইটা দুর্গ এর ধ্বংসাবশেষ। ইটানগরে গেলে অব্যশই দেখা যাবে জওহর মিউজিয়াম। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
ছাড়াও অরুণাচলের নানা উপজাতির সমাজ ও সংস্কৃতি বুঝতে পারা যায় এখানে গেলে। লোকাল সাইট সিয়িং এ দেখে নেওয়া যায়
প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির, পোলো পার্ক, বোটানিকাল
গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা। ৬কিমি দূরে রয়েছে পিকচার পোস্টকার্ডের মতো গঙ্গা লেক।
অরুণাচল
প্রদেশকে এত সৌন্দর্যে সৌন্দর্যমন্ডিত
করেছে কয়েকটি শান্ত, স্নিগ্ধ ও মনোরম লেক। লেকগুলো আপনার
ভ্রমণের তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি কোমল আদরে ভুলিয়ে দেবে যান্ত্রিক জীবনের যত কষ্ট
। যেমন -----
গঙ্গালেক
----
ভ্রমণ
পিপাসুদের কাছে অরুণাচল প্রদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি টুরিস্ট স্পট হচ্ছে গঙ্গা
লেক । স্থানীয়দের কাছে এটি গ্যাকার সিন্নি নামে পরিচিত। অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগর থেকে মাত্র ছয়
কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । লেকটিকে ঘিরে রয়েছে একটি বিস্তির্ণ শ্যামল বন , যা মন এবং চোখকে জুড়িয়ে দেয় । লেকটির চারপাশের গাছ, অর্কিড এবং ফার্ন উদ্ভিদের সৌন্দর্যে যেন যৌবন দান
করেছে । লেকের জলে গাছের পাতা আর সূর্যের আলোর লুকোচুরি খেলা নিমেষেই নিয়ে যাবে এক
কল্পনার জগতে। সবচেয়ে
আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে চারপাশের সবুজ গাছগাছালি লেকটির জলকে সবুজ রং উপহার দিয়েছে
। ফলে লেকের জল
দেখতে পুরোটাই সবুজ ।
নৌকোয় ঘুরে
বেড়ানোর সুবিধে ছাড়াও লেকটিতে রয়েছে ফ্যামিলি পার্ক এবং সুইমিং পুল ।
এরপরে যে
লেকটির কথা মনে পড়ছে সেটি হলো মাধুরী লেক ------
অরুণাচল
প্রদেশের আরো একটি সুন্দর ও মনোরম লেকের নাম মাধুরি লেক । তাওয়াং বেড়াতে এলে
মাধুরী লেক না দেখে চলে যাওয়াটা জীবনের অনেকটাই বৃথা , ভ্রমণের আসল অংশটি-ই বৃথা হয়ে যাবে । ১৯৫০ সালের ভূমিকম্পের ফলে লেকটির জন্ম।
পাহাড় থেকে নামার
সময় লেকটির সৌন্দর্য বর্ণনাতীত । চারটি পাহাড়ের মাঝখানে লেকটি যেন আসন গেড়ে বসে
আছে । লেকটিকে ঘিরে
বেড়ে ওঠা পাহাড় আর হৃদয়কাড়া বাতাস যেন স্বর্গসুখের বার্তা নিয়ে আসে ।
সম্পূর্ণ লেকটিতে একবার ঘুরতে সময় লাগে থেকে ৩০
থেকে ৪০ মিনিট ।
এর পাশেই একটা
সেনা ক্যাফেটেরিয়া আছে, যেখানে নুডুলস-এর পাশাপাশি বেশ কিছু গরম খাবারের
ব্যবস্থা আছে ।
একে ঘিরে
রেখেছে সতেজ উপত্যাকা এবং তুষারাবৃত পাহাড় ,
যা একে প্রাণ দান করেছে। লেকটি ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত।
এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস হচ্ছে এখানে ভ্রমণের
উপযোগী সময় । বিশেষ করে ,বছরের শেষের দিকে লেকটি তুষারবৃত
থাকে ।
অবস্থান ----
বুমেলা রোডের কাছে ,
তাওয়াং , অরুণাচল, ভারত।
এরপর আসছি
------
লেক অফ
নো রিটার্ন
-----------------------------------------------
নাম শুনেই
বুকটা কেঁপে ওঠে। রহস্যময়
এই লেকটি " ভারতের বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল "নামে পরিচিত । নামের সাথে মিল
রেখে লেকটিকে নিয়ে বেশ কিছু গল্প প্রচলিত আছে যা আমাদের মনে সহজেই ভয়ের উদ্রেক
করে কিন্তু সুন্দর এই লেকটি আমাদের চোখ ও মনকে জুড়াবে নিমেষেই।
মায়ানমারের
নাগাস সীমান্তের
শহর পানসৌ এলাকায় এবং ভারতের অরুণাচল সীমান্তে অবস্থিত এটি । এই এলাকাটি ট্রাঙ্গস গোত্রের আবাসস্থল ।
ভারত ও বার্মার মধ্যকার
সম্পর্কের উন্নতির কারণে লেকটি আকর্ষনীয় এক পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে ।
লেকটির
নামকরণ এবং এর পেছনে রয়েছে অনেক গল্প । কথিত আছে , দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময় এলিট ফোর্স জরুরি অবতরণের জন্য এই লেকটি ব্যবহার করেছিল । এর
ফলে অনেক বিমান এবং তাদের ক্রু এই লেকে নিমজ্জিত হয়েছিল ।
আরও কথিত আছে
, রহস্যময় এই লেকটির কথা জানা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে।
সে সময় এই অঞ্চলে একটি রাস্তা তৈরি হয়েছিল । এই রাস্তার কাজ শুরু হয় ১৯২৩ সালে
। তখনই এই
লেকের খোঁজ পাওয়া যায়। এর অলৌকিক ক্ষমতার কথা ছড়িয়ে পড়ে অচিরেই। সেখানে যেসব মিলিটারী পাঠানো
হতো লেকের কাছাকাছি যাওয়ার পরপরই সেগুলো অদৃশ্য হয়ে যেত। এ সব ভূতুড়ে ঘটনা
প্রকাশিত হবার পর ক্রমে স্থানটি সম্পর্কে সত্য -মিথ্যা বিভিন্ন কাহিনী লোকমুখে
ছড়িয়ে পড়ে ।
এক কাহিনীতে বলা হয়েছে , যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা জাপানি সৈন্যরা তাদের পথ হারিয়ে এই লেকে এসেছিল । এখানে তারা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত
হয় এবং লেকে ডুবে মারা যায়।
লেকটির দৈর্ঘ্য ১.৪ কিলো মিটার এবং প্রস্থ ০.৮ কিলোমিটার ।
লিডো থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি।
রহস্যময় নানা
গল্প এবং এর আকর্ষণীয় সৌন্দর্যের কারণে দ্রুতই লোকটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্যে
পরিণত হয়। এটি
মায়ানমার এবং ভারতের জন্যে একটি
সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট ।
অবস্থান :
পাঙ্গসৌ পাস , পাঙ্গসৌ
, অরুণাচল।
এর পরে
আসছি--
পাংকাং তেং
সো লেক -----
পাংকাং গাছ
থেকে লেকটির নামকরণ করা হয়েছে। মূল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ‘পিটি সো লেক’ নামেও পরিচিত।
গ্রীষ্মে লেকটির চারপাশে ঘিরে থাকে নীলকান্তমণি ফুল। আর শীতে জড়িয়ে রাখে শুভ্র
তুষার। এই লেকটিও ভূমিকম্পের সময় জন্ম হয়েছে। পাইনের জঙ্গল আর শান্ত জল নিয়ে জেগে
আছে লেকটি। এর নীল জলে বনের মৃত গাছগুলো দেখতে অস্বাভাবিক সুন্দর। শীতকালে তুষারে
ঢাকা থাকে লেকটি। শান্ত নীল জল, পাখিদের কলরব, তুষারাবৃত
পাহাড়, উড়ে চলা মেঘের দল- সব মিলিয়ে অসাধারণ পরিবেশ। এটিও ভারতীয়
সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত।
নাগুলা লেক
---------
তাওয়াং শহর
থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এবং পাংকাং তেং সো লেক থেমে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে
অবস্থিত এটি। এপ্রিল এবং মে মাস ছাড়া সারা বছরই প্রায় তুষারাবৃত থাকে। লেকের
চারপাশে চোখে পড়বে অজস্র ব্রাহ্মিণী হাঁস। সীমান্তের খুব কাছাকাছি , তাই অগণিত সেনার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। লেকটির
জলে অপরূপ তুষারাবৃত
পর্বতের প্রতিচ্ছবি । বেশিরভাগ সময়ই লেকটি তুষারাবৃত থাকে। লেকটি ভ্রমণের জন্য
উপযুক্ত সময় হচ্ছে এপ্রিল-মে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর।
আরো একটি
লেকের নাম বলতেই হয়। সবুজ বনের
মধ্যে প্রাকৃতিক মেহাও লেকটি অরুণাচল প্রদেশের রোইং থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে
অবস্থিত। এই লেকটি ৪ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। লেকটিকে সমৃদ্ধ
করেছে এর আশেপাশের উদ্ভিদ এবং প্রাণীরা। ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট ভূমিকম্পের ফলে
প্রাকৃতিকভাবে এই লেকটির সৃষ্টি হয়। পরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গুনে এটি ক্রমশই
রোইংয়ের একটি প্রধান পর্যটন গন্তব্য হয়ে ওঠে। ভূতাত্ত্বিকরা এর নাম দিয়েছেন
অলিগোট্রফিক (নিম্ন পুষ্টিকর) লেক। কারণ এই লেকে কোনো মাছ নেই। এর পরিষ্কার জল এবং
বন্য হাসের বিশাল সংখ্যা বিমোহিত করে তুলবে নিমিষেই। লেকটিতে নৌকায় চড়ে ঘুরে
বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া এর পাশ ধরে বনে ট্রেকিং অন্য এক অভিজ্ঞতার সুযোগ এনে
দেবে।
পূর্বের এই
রাজ্যের আকাশেই সূর্য প্রথম সুপ্রভাত জানায় এই দেশকে। সবুজের সমারোহ দেখতে হলে
আপনাকে আসতেই হবে অরুণাচলে। পাহাড় থেকে নেমে আসা `কামেং` নদী এখানে জিয়াভরলি
নামে প্রবাহিত। নদী, পাহাড় আর অরণ্য মিলে এখানে রচনা করেছে
এক অপার্থিব সৌন্দর্য।
একবার এই
অরুণাচলে আসলে বারবার আসতে মন চায় যে ,
প্রকৃতির অসামান্য রূপকে দুচোখ দিয়ে দেখা আর তাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব
করা এ যেন জীবনের এক পরম প্রাপ্তি ।
কিভাবে
আসবেন------
কলকাতা থেকে
গুয়াহাটি পর্যন্ত ট্রেনে বা ফ্লাইটে এসে,
এখান থেকে গাড়ী ভাড়া করে যাওয়া যায়। অথবা কলকাতা
থেকে তেজপুর পর্যন্ত ফ্লাইটে এসে, তেজপুর থেকেও গাড়ী ভাড়া করা যেতে পারে।
কলকাতা থেকে
গৌহাটি অবধি যে ট্রেনগুলো যায় --------
শিয়ালদহ থেকে
সরাসরি গুয়াহাটি যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (ছাড়ে সকাল ৬.৩৫ এবং পৌঁছোয় পরদিন ভোর
৪ . ৩০)।
হাওড়া থেকে
সরাইঘাট এক্সপ্রেস ( ছাড়ে বিকেল ৩ . ৫০ এবং পৌঁছোয় পরদিন সকাল ৯.৩০ )।
এছাড়াও আরো
অনেক ট্রেন আছে ।
গৌহাটি স্টেশন থেকে ভালুকপং আসার জন্যে বাস পাওয়া
যাবে , তাতে সময় কম লাগে । অরুণাচল রাজ্য পরিবহনেরও বাস
পাওয়া যায় ।
ভালুকপং
-বমডিলা, বমডিলা-তাওয়াং , তাওয়াং-দিরাং
প্রভৃতি রুটে বাস চলে। তবে সংখ্যার কম। তাই অরুণাচল ভ্রমণের জন্য গুয়াহাটি থেকে
গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই ভালো ।