সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

সোনালি







ভোরাই 




“ রাই জাগো রাই জাগো শুক সারী বলে
কত নিদ্রা যাও গো রাধে শ্যাম নাগরের কোলে---
রাই জাগো গো
   জাগো শ্যামের মনমোহিনী বিনোদিনী রাই
জেগে দেখো আর তো নিশা নাই গো
জয় রাধে ----
শ্যাম অঙ্গে অঙ্গ দিয়া
আছো রাধে ঘুমাইয়া
লোক নিন্দার ভয় কি তোমার নাই গো
জয় রাধে---”
ভজু গোঁসাই কি তার জানালার কাছেই ইচ্ছে করে গলা ছাড়ে ?
বাবা রে বাবা !
লীলাবতী জোরে চোখ ঘষে । উফফ । খুলতেই চায় না চোখ যে । বালি কচকচ করে যেন । আঠা দিয়ে আটকানো চোখের পাতা ।
মা গো । এত তাড়াতাড়ি কেন সকাল হয় ?

লীলু কোন দিন সকালে উঠতে পারেনি ।
মা অবশ্যি জোর করতেন না কখনো । একটাই সন্তান । মেয়ে হবার পর পরই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মা । তারপর থেকে আর সন্তানাদি হয়নি । কোবরেজ খুড়ো বলতেন , “ না হয়েই মঙ্গল । আর ভার সহ্য হত না গো মা । যে ক্ষীণ মানুষ তুমি । একেবারে দ্বিতীয়ার চন্দ্রকলা । ” 
সে যাই হোক । একেশ্বরী লীলু বাবামায়ের আদরে একেবারে আল্লাদী মেয়ে হয়ে বড় হয়েছে ।
ঢের দিন বাবা ঠেকিয়ে রেখেছিলেন বিয়ে দেওয়া । শেষে জ্ঞাতিকুটুমরাও রাগারাগি শুরু করলেন , আর শ্বশুরমশাই পতিতপাবন বাঁড়ুয্যেও এক আত্মীয়ের  বিয়েবাড়িতে  সুন্দর মেয়ে দেখে পছন্দ
 করে ফেললেন। তখন মা অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলেন বাপ বেটি দুজনকেই ।
“ এত আদর করে যেখানে নিয়ে যেতে চাইছে , সাধা লক্ষ্মী পায় ঠেলতে হয়না । শ্বশুরঘরে আদর করে আবাহন কটা মেয়ে পায় বল তো ?
মানী মানুষ নিজে থেকে ভাগ্নের বিয়েতে দেখে পছন্দ করেছেন যে কালে , বাড়ির মেয়েমহল কড়া শাসন করার আগে দুবার ভাববে । অন্য জায়গায় সে জোর চলবে কি ? কুলীন বলে তো আর মেয়ে আইবুড়ো করে ঘরে রেখে দিতে পারবে না ?
আর হ্যাঁ , ঘরজামাই আমি রাখতে দেবো না আগেই বলে দিলাম । ”
বাপের একটু সাধ ছিল হয়তো ; কিন্তু গিন্নী এত শক্ত হয়েছেন দেখে গাঁইগুই করেও এখানেই বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন ।
শৈলবউ সাধারণত কোন ব্যাপারেই মত দেন না । স্বামীর মতেই তাঁর মত হয় । কিন্তু কোন ব্যাপারে তিনি মুখ ফুটে কিছু বললে স্বামী গুরত্ব দেন সে কথার । আর পাঁচটা পুরোনো দাম্পত্যের মত , এই জুটির সাংসারিক জীবনে কখনও মনমালিন্যের ছায়া পড়েনি । দুজন দুজনকে সস্নেহ সম্মান দিয়ে চলেন চিরকাল ।
এইবারে গিন্নী এত জোরের সংগে ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন বলেই গঙ্গাধর মুখুজ্জে মেয়ের বিয়েটা দিয়ে দিলেন বাঁড়ুজ্জেবাড়িতে।

মস্ত বাড়ি লীলাবতীর শ্বশুরের । বিশাল ঠাকুরদালান । উঠোন ঘিরে চওড়া চওড়া সিঁড়ি পেরিয়ে বারান্দা। খিলেন দেওয়া থাম । আর উঁচু উঁচু ঘর ।
লীলাবতীর বর এবাড়ির ছোট ছেলে । পিছনের দিকে একটু একটেরেতে তার শোবার ঘরখানা ।
রাতে রান্নাঘরের কাজ শেষ হলে ঘরের সারির মধ্যে দিয়ে কুপি হাতে হেঁটে আসতে লীলার ভয় ভয় করে। তার বর বারান্দার শেষ প্রান্তে কাঁচের ছোট্ট শেজ হাতে দাঁড়িয়ে থাকে সেই জন্য ।
লীলা জানে সে আছে । তাই আলোর রেশ দেখা যাবে আশায় ভয় গিলে ফেলে চটপট পা চালিয়ে আসে । একবার দেখতে পেলেই ব্যস , নিশ্চিন্ত । দুজনের মুখেই যে হাসি খেলে , বড়রা দেখলে আর রক্ষা ছিল না ।
হয়ত বউহ্যাংলা ছেলে বলে ছেলেকে নির্বাসনই দিয়ে দিত বাইরের মহলে । বাবা , সবার যা মেজাজ এখানে ।
লীলাবতী ভাবে , এই নাকি মা বলল ঠাকুর আদর করে নিয়ে যাচ্ছেন , তাই কেউ আর বকবে না । কোথায় কি ? কথায় কথায় কত যে খুঁত ধরে অন্দরের মেয়েরা ।
--এইখানে পা দিলে কেন ?
--ওইখানে ওটা রাখলে কেন ?
--এত বড় মেয়ে কুটনো কুটতেও শেখোনি ?
--শাড়ির আঁচল অমন লটপট করে , মা কি শিক্ষেই দিয়েছেন ?
বাবারে বাবা ।
নেহাত বর জিতেন্দ্রনাথ মহাশয় পইপই করে বলে দিয়েছে , “ খবরদার ঘোমটা তুলবে না আর কথা কইবে না , বোবার শত্রু নেই ”,তাই । নইলে চুপ করে থাকত নাকি লীলাবতী ?
বর অনেক বুঝিয়ে বলেছে , “ দেখচ বড় বৌদিদিকে ? কথা কন বলে কি ছিদ্দত ?”
সত্যি । খুব খারাপ লাগে লীলার । সবাই মিলে সারাদিন খোঁটা দেয় পিঠোপিঠি বয়েসের বড় জাকে ছুতোনাতা নিয়ে । মনে হয় দল বেঁধে একটা মানুষের ওপর অত্যাচার করে ভারি আনন্দ পায় মেয়ে মহল । বেচারা বুঝি একটু গরিব ঘরের মেয়ে । পিসি দিদা , বিধবা বড় ননদ , খুড়শ্বাশুড়িরা এ কাজে ও কাজে খুঁত ধরে কত কাজ যে ওকে দিয়ে আবার আবার করে করায় । বাপের বাড়ি সম্পর্কে ঠেস দেওয়া কথা শুনতে শুনতে কখনও বা ফুঁসে উঠে জবাব দেয় মেয়েটা । ব্যস ,সবাই মিলে ঘিরে দাঁড়িয়ে তেড়ে গালি দিতে থাকে , যতক্ষণ না ঝরঝর করে জল পড়ে ওর চোখ দিয়ে ।
কোন কোন দিন খুব বাড়াবাড়ি হলে শাশুড়িমা এসে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যান নিজের ঘরে । সেখানে কি যে শাস্তি হয় কেউ জানে না । বড়গিন্নীকে কিছু জিগেস করার সাহস কারো নেই।
মাঝেসাঝে দিদিরা বড় ভাসুরের কাছে রাতে খেতে বসলে নালিশ করে । রাত্তিরে বড় জাদের ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পায় তখন লীলা । বুকটা কেমন করে কষ্টে ওর । আহা , গরিবের মেয়ে বলে তাকেকেউ আদর করবে না ?
ওর বর জিতু , ওর সংগে অষ্টমঙ্গলায় ওর বাপের বাড়িতে গিয়েই বলে দিয়েছিল , “ খবরদার ,বাড়ি ফিরে দিনমানে আমার সঙ্গে কোন কথা বলবে না । তাকাবেও না । এমন থাকবে যেন চেনই না আমায়। ”
“ সেকি ? তুমি যে আমার বর । তোমার দিকে তাকাবো না তো ওরা তোমার জন্য বউ নিয়ে এল কেন ?”

বলতে কি এই ফর্সা টুকটুকে হাশিখুশি ছোট্ট ছেলেটাকে লীলাবতীর বড্ডই ভাল লেগেছে । যখন তখন আড় চোখে চেয়ে দেখে আর আল্লাদে গদগদ হয়ে যায় । সেই ভালোলাগাটুকুই দিন ভোর ঘোমটার তলায় পাতলা হাসি হয়ে লেগে থাকে পাতলা ঠোঁটের খাঁজে ।
আর এই আনন্দটুকুর খাতিরেই তো বাপের আদরিনী লীলু বকাঝকা শাসন সব মুখ বুজে সয়ে যায় । নইলে এত দিনে কেঁদেকেটে হুলস্থূল বাধাত না ? লোকে চাট্টি কথা শোনাবে আর সে মুখ বুজে সয়ে যাবে , তেমন মেয়েই নাকি লীলাবতী দেব্যা ?
প্রথমে অবশ্য খুব ভয় ছিল মনে । মায়ের খাস কাজের লোক ক্ষেমঙ্করী মানে ক্ষেমুপিসি দুবেলা ভয়  দেখাত যে ;
হলুদ জব্দ শিলে আর তেঁতুল জব্দ ওলে
 আর দুষ্টু মেয়ে জব্দ হয় শ্বশুর বাড়ি গেলে ---
শুনলেই গা জ্বলে যায় । লীলাবতী খুব জোরে চোখ বুজে ঠাকুরকে বলত ,আমার যেন বিয়ে না হয়   ঠাকুর আমি শিলে ছেঁচা হলুদ হব না । আমি বাবামায়ের কাছে আমার নিজের খাটে শুয়ে ঘুমুবো ।তাই  বিয়ের জন্য মা যখন জোর করছিলেন বাবাকে খুব রাগ হয়েছিল ।মায়ের সংগে আর কথাই বলবে না ঠিক করে গোঁজ হয়ে থাকত বিয়ের আগে ।

শুভদৃষ্টির সময় হাতের পানপাতার ঢাকা সরিয়ে বরের হাসিখুশি মুখখানা দেখেই সব রাগ গলে জল। চোখাচুখি হতেই একদিকের ভুরুটা তুলে মিচকে হেসেছিল বাঁড়ুয্যেদের ছোট খোকা জিতেন্দ্রনাথ । লীলাবতী চোখ নামিয়ে নিয়েছিল সাথে সাথেই । চারপাশে সব ভাইবোন  পিসিমাসিরা মিলে যা হইহই করছিল । আবার পিঁড়ি উঁচু করে বরের চেয়ে কনে বড় দেখানোর চেষ্টা করতেই বেদম চেঁচিয়ে ছিল লীলা । একেই নাপিত ব্যাটা পাশে দাঁড়িয়ে ছড়া কাটছিল কি সব , আবার বলছিল পিঁড়ি থেকে পড়ে গেলেই বউ নাপিতের হয়ে যাবে । ইশ !
তারপর আবার বাসরঘরে দিদিদের হুজ্জুত কত ।   
সবাই যখন ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছে ,এক ফাঁকে নতুন বর চাদরের খুঁট থেকে কড়া পাকের সন্দেশ বের করেছিল । নিজের মুখে পুরে ওর হাতেও একটা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল , “ খাও , খিদে পায়নি ?
মিষ্টি খেতে ভারি ভালবাসে লীলাবতী । এক গাল হেসে সন্দেশ হাতে নিয়েই জিতু নামক বরের প্রেমে হাবুডুবু হয়ে গেল সে ।
সেই থেকে লীলাবতী বাধ্যের বউ ।

বাপের বাড়িতে মা একটু অবাকই হয়ে যান । একটু হিংসে দুঃখ ও করেন মাঝেমাঝে ।
“ কি মা শ্বাশুড়ি বুঝি খুব ভালমন্দ খাওয়ান , তাই এত মধু শ্বশুর বাড়িতে এসেই যাই যাই কর ?”
“ হ্যাঁ ভাল খাওয়ান তো ”, বলে প্রথম প্রথম ঘাড় কাত করত লীলা ।পরে মায়ের মুখখানা কাল হয়ে যায় দেখে কেমন ধন্দ লাগল । মেয়েবুদ্ধি খাটিয়ে একটু ঠাওর করার চেষ্টা করে আজকাল । তাই আজকাল জড়িয়ে ধরে মাকে ।
“ না মাগো , তোমার মত অত ভাল রান্না নয় গো ওখেনে । সময় মত না ফিরলে সবাই বকবেন তো,
তাই বেশি থাকতে পারিনা ।”
মায়ের মুখের মেঘ একটু কাটে বুঝি ।

 এমনি করে ক্রমেক্রমে বউ হওয়ার অভ্যেস হয়েই যাচ্ছে লীলাবতীর । ওই ভোরে ওঠাটাই খালি এখনও কষ্ট হয়। গালে গোলাপি ছোপ লাগে সুন্দরী মেয়ের ।
নাহ , তারজন্য ঘরগেরস্তালিকে দোষ দেওয়া যাবে না । এ বাড়ির হেঁশেল সন্ধে সন্ধেতেই গোছানো হয়ে যায় । বিধবা পিসিশ্বাশুড়ি , দিদিরা সব আগে সধবাদের খাইয়ে , এঁটোশকড়ি ধুয়ে মুছে গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে তবে খেতে বসে কিনা । ছোট বউয়ের খাওয়া হলেই আলো হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাকে হুস হুস করে ঘরে পাঠিয়ে দেয় ।
কিন্তু সেই যে আরেকজন ?
যিনি সেজ হাতে থামের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন লীলাবউ আসবে বলে ?
উফ । কি দস্যি বাবা ।
আবার এদানিং কালিদাস পড়ে শোনানো হচ্ছে বউকে । কি অসভ্য , ইস ।
বললেই বলে , কি বলছ , এ না পড়লে কোন মানুষকে শিক্ষিত বলে ধরাই হয়না তা জানো ?
কি শিক্ষের ছিরি বাবা ।
মনে পড়তেই মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হেসে ফেলে লীলা ।
শিক্ষে না হাতি , বদমায়েসি কেবল ।
তবে লীলা তো আর হাবাগবা ভালমানুষটি নয় , সেও চুক্তি করে নিয়েছে ।
তুমি আমার ওপর যা যা লেখাপড়া অভ্যেস করবে , আমিও তোমার ওপর সেই রকম বিদ্যে ফলাবো । তোমায় চুপটি করে শুয়ে থাকতে হবে তখন । নইলে আমার ধারে কাছে এস না, হ্যাঁ ।
মশাই বড় বেকায়দায় পড়েছেন তাই । লীলাবতীর বিদ্যেশিক্ষার চোটে শিউরে উঠতে উঠতে  দুজনে প্রায় রাতকাবার করে ফেলছে আজকাল । শেষে ক্লান্ত হয়ে কখন দুজনে দুজনের কোলে ঘুমিয়ে পড়ে টের ও পায়না ।
তাই ভজু গোঁসাই যেই নরম ভোরের আলোয় খঞ্জনী বাজিয়ে বলেন ,
“ শ্যাম অঙ্গে অঙ্গ দিয়া
আছো রাধে ঘুমাইয়া গো –”
ধড়মড় করে উঠে বসে সারা খাটে ছড়িয়ে থাকা শাড়িখানা টেনে নিয়ে অঙ্গে জড়ায় লীলা ।
ভাবে ছি ছি , গোঁসাই টের পেলেন কি করে ?
তারপর বরের গায়ে ধুতিখানা টেনে দিয়ে পা টিপে টিপে বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে । বেরোবার আগে চেয়ে চেয়ে দেখে দুচার নিমেষ । দেখে দেখে আশ মেটে না ।
“আমার বর । আমার । ”
ঘর থেকে বেরিয়ে হাই ওঠে । চোখ কচকচ করে । ঘেরা দালানে ঢাকা দিয়ে রাখা এক ঘটি জল গায়ে ঢেলে রাতের শাড়িখানা দালানে সিঁড়ির ধারে ছেড়ে রাখে লীলা । ধোয়া কাপড় পরে মাথায় ঘোমটা টেনে দালান বরাবর হাঁটে । শাশুড়ির ঘরের দরজায় টোকা দেয় গিয়ে রোজ তিনি চওড়া লাল পাড় শাড়ির আঁচলে বাঁধা চাবির গোছাখানা পিঠে ফেলে দরজা খুলেই বলেন “এসো ।”
শ্বশুর শাশুড়ির মস্ত শোবার ঘর । পাশের লাগোয়া ছোট ঘরে ঠাকুরের সিংহাসন । শাশুড়িমা ভোর থেকে সেটি পরিষ্কার করে , ফুল দিয়ে সাজিয়ে , ঠাকুরদের জল মিষ্টি দিয়ে তবে রান্নাঘরের দিকে যান। লীলা বউয়ের নাকি এই সব কাজে সাহায্য করতেই সকালে এঘরে আসা ।
বড় ঠাকুর ঘরে তো ঠাকুরমশাই বেলায় এসে পুজো করেন ।
 এই শোয়ার ঘরে মেহগনি কাঠের উঁচু পালঙ্ক । সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় । সেখানে , ছত্রিতে কি কাজ । উলটো দিকের দেওয়াল ঘেঁষে একখানা ছোট চৌকি । বাচ্চারা ছোট থাকতে , যে যখন সবচে’ ছোট ঐ বিছানাতেই শুয়েছে ।
রোজ লীলা ঘরে ঢুকলে মা  দরজায় ছিটকিনি দ্যান । তারপর বলেন , “ যাও মা , শুয়ে পড় গিয়ে ।”
শ্বশুরমশাই তখন পুব দিকের জানালার সামনে রাখা আরামকেদারায় বসে পাথরের গেলাসে বেলের পানার শরবত খান ।
লীলা গুটিসুটি হয়ে ছোট চৌকিতে একখানা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে । আর শুয়েই ঘুম , যতক্ষন না মা প্রসাদ দেবেন বলে ডাক দেন এসে ।
প্রথম দিন মাজননী শুয়ে পড়তে বলায় থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়তেই বকুনি খেয়েছিল ।
“ কই যাও ? নতুন নতুন সিঁদুর পড়লে এয়োতির বড় ঘুম পায় । শুয়ে পড় । আমি ডেকে নেবো। ঘুমের ঘোরে বঁটি টটিতে হাত কাটলে তো কেলেঙ্কারি হবে । ”
লীলাবতী অবাক হয়ে দেখেছিল বেলের পানা হাতে শ্বশুরমশাই এদিকে ঘুরে হাসছেন। মাজননী তাঁর দিকে ফিরতেই দুজনে কেমন থির চোখে চেয়ে রইলেন । তারপর মায়ের ঠোঁটে এক চিলতে রহস্যময় হাসি আর মাখনরঙের গালে সেকি দুধে আলতার ছিটে
সেদিন থেকেই লীলাবতী পাকাপাকি ভাবে এ বাড়ির লোক হয়ে গে




সোনালি