পুঁই
চচ্চড়ি
ফ্রিজের দোতলায় যেতেই একটা কৌটো নড়ে উঠল খটখট করে। ভয়ে ভয়ে ও দিকে তাকাতেই
দেখি কৌটোর ভেতর থেকে কে যেন নাকি সুরে বলছে- কীঁ রেঁ আঁমায় ভুঁলে গেঁলি? সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে দেখি কৌটোর ভেতরে একটা দু আধখানা করা ইলিশ মাছের মুণ্ডু
ঘোলা ড্যাবা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! খুব লজ্জায় পড়ে গেলাম। সত্যিই তো,
একদম ভুলে গেছিলাম ওর কথা।
এরপর বাজারে গেছি। আচমকাই আমায় পুঁই শাক নাম ধরে ডাক দিল পেছোন থেকে। চমকে উঠলাম ওকে দেখে। এত্ত সুন্দর রূপ হয়েছে যে, যে কেউ খারাপ নজর দেবে। ওর কচি সবুজ ডগায় চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে লাগিয়ে দিলাম। দোকানী দেখলাম মুখটা একটু হাঁ করে আমাকে দেখছে। সে দেখুক, আমি ততক্ষণে ওর গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে ওর কুশল জেনে নিয়েছি। আমার এই অতিরিক্ত স্নেহেই ও দেখলাম আমার কোলে চড়ে বসল। তা থাক একটু, এই ভেবে আমি লাল টকটকে পাকা কুমড়োর কথা যেই মনে এনেছি, দেখি সামনে তিনিও ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এসে হাজির। জিজ্ঞেস করলাম, কী হল রে? খোঁড়াচ্ছিস কেন? তোর তো কী সুন্দর বলের মত চেহারা ছিল, বেশ গড়িয়ে গড়িয়ে যেতিস, আসতিস... আমায় শেষ করতে না দিয়েই ও বলতে শুরু করল, “ আর বলনি বাপু, রাত্তিরে দিব্যি ঘুমোচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি একটা চাকু এসে আমার এক দিক ফালি করে কেটে নিয়ে চলে গেল! আমার চ্যাঁচামেচি শুনে কোথায় লোকে এসে আমাকে বাঁচাবে, তা না... উল্টে আরও একটা চাকু আরও এক ফালি কেটে নিয়ে চলে গেল। বুঝলাম, এভাবে আমি হাপিশ হয়ে যাব আর একটু থাকলে। তক্ষুণি গড়াতে গিয়ে দেখলাম, পারছি না, তাই ল্যাংচাতে ল্যাংচাতেই পালিয়ে এলাম।“ তা বেশ করেছিস। নে, এবার এই পুঁই খুকিকে একটু কোলে নিয়ে দাঁড়া এককাত হয়ে চুপটি করে।
দেখলাম বেগুন আর ঝিঙে বেশ ভদ্র টাইপ। কোন রঙঢঙ নেই, বাতেল্লা নেই, বেশ একটা ডেডিকেসন রয়েছে ওদের অ্যাটিটিউডে। আমার দুপাশে আমাকে গার্ড অফ অনার দিয়ে বাড়িতে নিয়ে এলো। এবং যেভাবে বুঝিয়ে দিলাম, ওরা নিজেরাই মাপ মত কেটেকুটে নিল নিজেদের। আমি এরপর ওই খুকিকে নিয়ে পড়লাম। আর অর্ধেক মুণ্ডু দুটোকে বললাম, দেখ- তোর কেমন বিয়ে দিই আজ। সে তো শুনে লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে উঠল। তার ঘোলা চোখে যেন সর্ষেফুল ফুটছে দেখলাম। কিন্তু ওই ফুল দিয়ে আমার কোন কাজ আপাতত নেই। সর্ষের সাথে কাঁচালঙ্কা বাটা হচ্ছে আর এদিকে কড়াইয়ে আলু, কুমড়ো, বেগুন, ঝিঙের মিক্সড কম্বো মিলে মিশে একটা দুর্দান্ত ফিউশন হচ্ছে। এবার মুণ্ডুর ওই গান শুনতে শুনতে মাথা ঘুরে যাওয়ার পালা। সব শেষে আসরে নামবেন খুকি রাণী পুঁই। উপসংহারে সর্ষে-কাঁচালঙ্কার চমক।
একটু জিরোতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল হল আমার কাঁধের ওপর থেকে হাওয়া খেলছে যেন! মাথাটাই নেই আর আমার। তাড়াতাড়ি কড়ার কাছে গিয়ে দেখি, আমার একজোড়া অর্ধেক মাথা পুঁইয়ের সাথে খুব মাখামাখি করছে। আর আমার শূন্যস্থানের দিকে তাকিয়ে সর্ষেফুল দেখা দুটো চোখ আঁখ্ মটকাচ্ছে।
তুষ্টি
ভট্টাচার্য
সুস্মিতা নাথ