সম্পাদকীয়
শিশুদের স্কুল ছুটি, চাকুরেদের
বোনাস, কিছু বেশি আয়,
পরস্পরের কাছে আসা, এসব
মানবিক বিষয়ের আবহে থাকে, ভাঙা ভাঙা মেঘ, নীলাকাশ, কাশফুল, শিউলিফুল।
মা আসছেন। দুর্গা। কোনও এক পুরাণ নির্ভর অকাল বোধন।
নতুন পোশাক, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে
ঘোরা, মেলার মতো বেচাকেনা,
খাওয়া দাওয়া, মন
খুলে খরচ করা, এবং বাইরে ঘুরতে যাওয়া, এইসব
মিলিয়ে উৎসব। শিক্ষিত বাঙালির সাহিত্য চর্চার এক বিরাট সুযোগও ঘটে এই পূজা উপলক্ষ্যে।
আমাদের সাহিত্যেও উঠে আসে পূজা ভিত্তিক পরিবেশ। – তৈরি
হয় আমাদের পূজা সংখ্যা।
সাহিত্য কখনোই দেশকাল নিরপেক্ষ নয়। একজন সাহিত্যিক এবং একজন পাঠক নিশ্চয়
সচেতন নাগরিক। একারণেই আমরা সাহিত্যে যেমন, ব্যক্তি
জীবনেও লগ্ন হয়ে থাকি সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতিতে, পরিবেশে। দেশের রাজনৈতিক সংকট, বেকারত্ব,
অর্থনৈতিক দুর্ণীতি, ধর্মীয়
উন্মাদনা,
সব কিছুই আমাদের বিচলিত করে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম আমাদের
আতঙ্কগ্রস্ত করে । যখনই সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতা বেশি আসে, যখন দেশপ্রেম জাতিপ্রেম থেকে নিজের স্বার্থ বেশি হয়ে দাঁড়ায়,তখন সাহিত্যও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে।
এই মুহূর্তে আমরা সবচেয়ে বেশি অসহায় ভাবে দেখেছি, সলমন
রুশদির উপরে মৌলবাদী হামলা। ধর্ম সব সময় প্রশ্নহীন আনুগত্য দাবি করে। পৃথিবীর
সচেতন মানুষেরা সেই অন্ধ অনুগতিকে প্রশ্ন করে। অশিক্ষিত মানুষেরা, এবং
ভাবতে অবাক লাগে বহু শিক্ষিত মানুষও,
তাদের সঙ্গে যোগ দেয়, অথবা
নীরব সমর্থন করে। এবং প্রচুর ভালো মানুষ এসব দেখেও কোনও এক অজ্ঞাত(?) কারণে কোনও প্রতিবাদ করেন না। তখন সাধারণ মানুষ বেদনা অনুভব করে। আমাদের সাহিত্য
সেই বেদনাকে, অথবা প্রতিবাদকে ফুটিয়ে
তোলে। এ যেন আমাদের চিরন্তন কর্তব্য। আমাদের খুব সচেতন হতে হবে পরিবেশ, উষ্ণায়ন,
পলিথিনের ব্যবহার
সম্পর্কেও। আমরা
যেভাবে প্রতিদিন প্রকৃতির স্বাভাবিকত্ব নষ্ট করছি, পরিবেশও
তার শোধ নিতে শুরু করেছে।
বাংলা ভাষার মত অন্তরঙ্গ ভাষা দুনিয়ায় আর একটিও ভাষা নেই।
এই নিয়ে আমাদের গর্ব হয়। বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর জন্যে একুশে ফেব্রুয়ারীতে
বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছিল,আমরা সবাই
জানি। ওই দিনটিকে ইউনেস্কো পৃথিবীব্যাপী মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
তারপরও এই কিছুদিন আগে বাংলাভাষা পৃথিবীর কোমল ও মিষ্ট ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বিশ্বের দরবারে আবার স্বীকৃতি বাংলার। দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দিল ইউনেস্কো।
কারণ অধ্যাত্মিকতা,শিল্পকলা ও সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটে এই
উত্সবে।
প্রেম ও সমর্পণই চির
সত্য ও সাবলীল সাহিত্যের ধারাকে নির্মল করে রাখে। শরত আসতে না আসতেই আমরা সার্বজনীন
হয়ে উঠি। ভাষা ও ভাব প্রকাশের উন্মাদনা দেখা দেয়। 'এবং সইকথার' এই পূজা সংখ্যায় আমরা উৎসবের মেজাজে যেমন আছি, তেমনি আছি সচেতনতায়, এবং গভীর মননশীলতায়। লেখক শিল্পী পাঠক আমরা
সবাই যেমন মেতে উঠব উৎসবে তেমনি প্রতিমুহূর্তে সচেতন থাকব দায়িত্ব অনুভব ও কর্তব্য
পালনে।
শীলা বিশ্বাস
২৫/০৯/২০২২
0 মন্তব্যসমূহ