তথাগত,এসো আমার তাপিত তন্দ্রায়
১.
তথাগত, তোমার কথা লিখতে
গেলেই পাহাড়ের ছায়া থেকে বের হয় এক আহত
সৈনিক! তার
কব্জির ব্যাণ্ডেজ গড়িয়ে নামে
রক্তমাখা পতাকার রঙ!
আকাশের মুখ ঘন কালো; অবিরাম
দুঃখ পুড়ে পুড়ে আমার সমস্ত
চাওয়া যেন ধুমের কুণ্ডলী!
চতুর্দিকে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে
ক্লান্ত পদধ্বনি! যে যার মতো সব
পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছে!
মুহূর্তের জন্য
আমার লড়াকু মন ছিটকে ওঠে
তথাগত, তুমি কোথায়? আমার জিজ্ঞাসার পাশ থেকে
ছুটে চলেছে
অসংখ্য যুদ্ধ ফেরত ঘোড়া!
রাজ্যহারা অথচ তাদের বাদামি
কেশর জুড়ে কী অবিচল
প্রত্যয়! তথাগত,এভাবেই
কী আমাকে জীবন শেখাচ্ছো!
২.
তথাগত, ভুলে যাওয়া পৃথিবী থেকে
কখনও যদি ফিরে আসো
চিনে নিও মথুরার ঘাট
যেখানে অকথ্য শ্রাবণে ঘোলা হয়ে
সান্ধ্য জোয়ারের জল। কোনো
পড়শিবাড়ির রাধা খুলে রাখে
মৃন্ময়ী বদ্বীপ
তথাগত,মাটি-মাংস ও মানুষের মোহনীয় ঘ্রাণে আজও
তুমিও তো তেমনি উন্মনা পুরুষ!
শরীরে নাগিন জড়িয়ে
মেলে ধরছো নিজস্ব বিভাস!
আজ যেন সব কিছুই কোনো
অপার্থিব মুহূর্তের কাটাকুটি! খুব
বেশিরকম স্মৃতিকথা কিংবা
প্রবল ধর্মজিজ্ঞাসা
তথাগত, আমারও ঘটেছে জন্মান্তর
চোখের সরলতা মেখে একা আমি
জলগামী হংসিনী
ডুবু ডুবু উথালিপাতালি পরান
অপেক্ষা করি কখন সেই অপরূপ
ঘোরের রাত্রে আমাকে চিনে নেবে
অন্তরপুর কাঁপিয়ে ছুঁয়ে দেবে
কামনার রঙিন কোরক!
৩.
আমার অঘোর জ্বরের ভেতর
কে তুমি শোভন পুরুষ!
পুড়ে যাওয়া ওষ্ঠের ভেতর ঢেলে
দিচ্ছো সজিভ চুম্বন!
শুশ্রূষা, শুশ্রূষা...
তোমার সুগন্ধি নিঃশ্বাসে বেজে
উঠছে কালের মন্দিরা! বহুকালের
দুঃখবোধ থেকে যেন
এইমাত্র কোমল ধৈবত পেরিয়ে এলে!
তোমার পরশে ভুবন বেহাগময়
ধ্বনির ভেতর ধ্বনি
সুরের শৃঙ্গারে বুকের পাখিটি
জেগে উঠছে!
দিগন্তের নীচ থেকে মূর্ছা যাওয়া
অন্ধকার ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে আলো
কে তুমি? ওই অরূপ-রূপদৃষ্টি যে
বড়ই চেনা
তুমিই কি সেই ব্যথিত পুরুষ!
তুমিই তথাগত! এতদিনে
বিস্মৃতির আলো নিয়ে ফিরে এসেছ!
ওগো পরম
এসো,এসো আমার তাপিত -তন্দ্রায়
তথাগত,এসো ভুলে যাওয়া সংরাগের
ভেতর থেকে উঠে এসো
প্রশমিত করো আমার শরীরী হলকা!
0 মন্তব্যসমূহ