সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ঋতুপর্ণা খাটুয়া:গুচ্ছ কবিতা

 


গুচ্ছ কবিতা

কবি 

  

আমি তাকে দেখিনি এখনও। 

দেখে ফেললে আমার অবয়ব ভেঙে যাবে। ভেঙে যাবে

তিল তত্ত্ব, রোমাঞ্চের শামিয়ানা টেনে নিয়ে চলে যাবে

বিদেহী সত্য। বসন্তের গাঢ় লাল রঙ মিলিয়ে যেতে পারে। 

যার কথা কইছি, তার বই কয়টি নীরবে পড়ে রয়েছে

আলমারিতে, তার কোনও ছবি নেই। গুটি কতক কথা

আমার কানে এসে নরম নরম পা ফেলে ঢুকে যায়

বিড়ালের মিউ হয়ে, আয়োজিত পরিসরে নবায়নযোগ্য 

জ্বালানি হয়ে ভেতরে তোলপাড় করে হাড়পাঁজরা। 

 

সে এক নবীন মেয়ে নাকি প্রৌঢ়া তা অনিশ্চিত, 

কিন্তু তার কবিতা আমার দেহে ভরে দিয়েছে সবুজের

মলমল, গালিচা পেতে দাঁড়িয়ে পড়েছে অবশ্যম্ভাবী 

এগোনো বয়সের গতি। 

 

দিলরুবাটি বেজে উঠছে মিহি সুতো হয়ে–

 

  

 বেরোনোর পথে যে দরজা 

   

ওই যে মুঠো খুলে দেখালে পথ, আয়ুরেখায়, সামান্য সামাজিক মাত্রা মেপে বেঁকে গেল জঙ্গলের দিকে, ওকে পরে আর পাইনি। কোথায় রাস উৎসব হলো, তার সাজানো রাধা কৃষ্ণ, তারাও কি উদ্ধারিতে আসে! যে পথে তারা নিজ নিজ সংকীর্তনে নেচে নেচে হারাল, আবিরের রঙ পড়ে তার পুরোনো বস্ত্র রাঙা হয়ে এল, ও পথেই আমি বসে থাকতে চেয়েছিলাম প্রলেতারিয়েত হয়ে

 

 ওই যে মুঠো খুলে দেখালে পথ, ওর পাশের জঙ্গলে আমি খোঁয়াড়ের গরু করে সাইকেল বেঁধে রেখে হারিয়েছে যে সময়, তাকে খুঁজে চলি। অকাল বার্ধক্য যৌবন তাড়াতে তাড়াতে আমারই পেছন ধরে। কোন দিকে যাব! সাজানো রাধা কৃষ্ণ গেল কোনদিকে! কালো ডোবার কাছে মন রেখে বসে দুদণ্ড জিরিয়ে নিই। পাশ থেকে মন বলে ওঠে হাত থেকে নেমে যাওয়া পথ আগুনের কণা হয়ে এলোমেলো হয়। অক্টোপাশের মতো চারপাশে ঘিরে ধরে নিয়ে আসে সামান্য বেঁকে যাওয়া আয়ুরেখাতেই। অথচ হাতে আসে না আর...

 

 নির্বাণের আশায় তারই মোহ আমায় ঘিরে ধরে

 

 ফিসফ্রাই 

 

  

দামী রেঁস্তোরায়, প্লেটে ঠুমরীর শব্দে তুমি মিশে গেলে। ওয়েটারের রিকোয়েস্টে ‘অর্ডার’ শব্দটির ধ্বনি মাধুর্য বেড়ে গেল। তুমি জানতে পারলে না, ততক্ষণে কত তরতাজা ভেটকি সুসজ্জিত হল তেলে, বেসনে লেপ্টালেপ্টি করে। লাচার নাচিয়েদের মতো ওরা এখন তোমার আমার প্লেটে মুজরা করতে আসবে। খাব আর কাতরানি দেখব, কী বেনিফিট! আর উন্মাদ টলটলে জল খেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবো, ক্যাবে বাড়ি ফিরে। সারাদিন তোমার সাথে প্রপারলি চলার মতো বুদ্ধি খরচ করলেও তোমার মনে হবে, আমি বোকার হদ্দ। কিন্তু তুমি বোধহয় জানো না, চালাক মাছেদের জালে ধরা পড়ার কথা

 

 

 আস্তিকস্য মুনির্মাতা ভগিনী বাসুকেস্তথা 

  

বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যায় আদি গাঙ, তবু পাপস্খলনের পথ নেই... বিষহরি কোনও নারী আমায় উদ্ধার করতে আসেনি বলেই তপ্ত মস্তিষ্ক নিয়ে আপ্রাণ প্রয়াস করি কপট ভালোবাসার আশ্রয় নিতে। দগ্ধ যত এস্কেপিস্ট তাদের জড়ো করে রইরই স্লোগান তুলি। বিদেহী পূর্বপুরুষ ও তাদের সঞ্চিত পাপবিন্দু হয়ে জমে রই। কাশীধামে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায়ও আমার মুক্তি নেই। যা দিতে চেয়েছি, যা দিতে চাইনি তা সবই আহাম্মক প্রবঞ্চকের পাশার চাল ভেবে নিয়ে তুমি খেলে যাও যুধিষ্ঠির। আমি শকুনি অথবা নিজের জালে জর্জরিত কোনও অসুর। আমি নিমিত্ত মাত্র, এতটুকু জেনে মাথায় হাত রাখো। এ দেহ মোহ এই বিষাদ ষড়রিপুর থেকে মুক্ত হয়ে আমি অগ্রিম সন্তান হব এই পৃথিবীর। বাগানের গাছটি বড় করুন হয়ে চেয়ে রয়, আমি ওর শিকড় হব

 

মাটি থেকে উঠে এসে হেঁটে যাব নিষ্পাপ শিশু সাপ হয়ে...

 

  একটি প্রেমের কবিতা 

  

মনে হয়, তোমাকে নিয়ে পাহাড়ে যাই। জঙ্গলে চিনচিনে কাঠের কটেজ, তোমার কঠোর মনকে পেস্তার মতো দুরমুশ করে দিক। যেখানেই তুমি তাকাবে, মনে হবে, জন্ম ইস্তক এ পৃথিবীতে কিছুই অসুন্দর ছিল না। সম্পর্কের জটীলতা ছিল না। কাঠের গুঁড়িতে শ্যাওলার ছোপ, মনের ভেতরে গোপন যে আয়োজন করে বসবে, তুমি আজ সেখানে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি। আমাকে মনে হবে সাম্পান, যে তোমায় কোনও অজানা দ্বীপে নিয়ে এল। এখন কোনও গোলাপ গালিচা খুঁজে এলিয়ে দাও তোমার শরীর। আলগা করো দেহ বল্কল, সমস্ত বোতামকে ছুটি দাও আজকের রাতের জন্য। তীব্র সুগন্ধি ভেবে আমায় মেখে নাও সারা শরীরে, অথবা মদিরা হয়ে আমিই শুষে নিই তোমার ভয়ের সব আসক্তি

 

 টলোমলো পায়ে চৌকাঠ পেরোতে গেলে আমার এ ক্ষুদ্র বুকে রেখে দিও তোমার দেহের প্রলয় চিহ্ন...ওটুকু স্বস্তিক, প্রকৃতি স্বরূপা মহাবিশ্ব, অতটুকু আলতা পায়ের আকার দিয়ে...

  


ঋতুপর্ণা খাটুয়া

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. লেখাগুলি খুব ভালো লেগেছে আমার। নতুন লেখা। আপনকথায় ভরা এই লেখা মনে আরাম ঢালল।

    উত্তরমুছুন
  2. আহা ! পড়ার যে আনন্দ, সেই আনন্দ পেলাম ঋতুপর্ণার কবিতা পড়ে। বেশ ভালো লাগল।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব ভাল লাগল ঋতুপর্ণা খাটুয়ার কবিতা গুলো

    উত্তরমুছুন