ত্রয়োবিংশ অধ্যায়
এখন লক্ষ্য কাম্যক বন। ধৃষ্টকেতুর রথ ছুটেছে দ্রুত গতিতে। স্থির দৃষ্টিতে সামনের পথের দিকে তাকিয়ে আছে করেণুমতী। কিন্তু সে কিছু
দেখছে না। কিছু শুনছে না। বুকের কাছে ধরে
রেখেছে ঘুমন্ত শিশু পুত্রটিকে। বনের সীমান্তে পৌঁছে রথ থামাতে
হোল। বৃক্ষময় জটিল পথে রথ প্রবেশ করতে পারবে না। ক্ষিপ্র পায়ে নেমে এল করেণু। অসংকোচে এগিয়ে গেল।
“এত নিবিড় এ অরণ্য। পথ খোঁজা সহজ কথা নয় বোন।”- উদ্বিগ্ন স্বরে ধৃষ্টকেতু ভগিনীকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করলেন।
কঠিন হাসি ফুটল করেণুর মুখে। এক অহোরাত্রের মধ্যে তার বয়স অনেক
বেড়ে গেছে যেন। “এতগুলি মানুষ একত্রে আছেন এই স্থানে। শুনেছি বহু ব্রাহ্মণ তাঁদের সঙ্গে বাস করছেন। যেখানে মানুষ,
সেখানে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হবেই। দূর থেকেও প্রকাশ পায় অগ্নিশিখার
ঔজ্জ্বল্য। তাই দেখে খুঁজে নেব তাঁদের।”- এমন দৃঢ়তায়
উচ্চারণ করল সে বাক্যগুলি, যেন সত্যই তার সামনে কোনো বাধা নেই। আর পিছু ফিরে না তাকিয়ে নিমেষের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল ঘনসম্বদ্ধ বৃক্ষদের
আড়ালে।। ধৃষ্টকেতু ও সারথি অগত্যা ক্ষিপ্র চলনে অনুসরণ করতে
লাগলেন তাকে। তাঁরা দেখলেন বনচারী শবরদের দু একটি গোষ্ঠী এখানে বাস
করে। তাদেরই একজন দিক নির্দেশ করে দিলে।
অল্পক্ষণ চলার পরেই, তাঁরা শুনলেন কিছু দূর থেকে ভেসে আসছে অনেক সম্মিলিত
মানুষের আলাপের ক্ষীণ গুঞ্জন ধ্বনি যেন।সেই দিক লক্ষ্য
করে নির্বাধে এগিয়ে চলেছিল করেণুমতী। অনভ্যস্ত পাতার স্তূপ ঢাকা সরু পথ। মাঝে মাঝে ছোট ছোট কাঁটা বিঁধে যাচ্ছিল তার পায়ের তলায়। ভ্রূক্ষেপও করছিল না সে।
হঠাৎ এক ঘন পাতায় ঢাকা বৃক্ষের অন্তরাল থেকে তাদের ঠিক সম্মুখে বেরিয়ে এলেন
একটি মানুষ। অর্ধস্ফুট বিস্ময়ের শব্দ করে উঠল করেণু। এক প্রিয় পরিচিত মানুষের সঙ্গে তাঁর কিছু সাদৃশ্য আছে বটে, কিন্তু
বৈসাদৃশ্য অনেক বেশি। তার বিগত কালের চেনা মানুষটির গাত্রবর্ণ ছিল মার্জিত
তাম্র ফলকের মতো। এমন মলিন নয়। রুক্ষ কেশ এঁর। গ্রীবা ও গন্ডে পরিচর্যাহীন অযত্নের শ্মশ্রু-গুম্ফ। সামান্য কৃশ। কঠিন গ্রীবা। গাঢ় তাম্র বর্ণের নক্ষত্র তারকা দুটি। আয়ত, ঈষৎ রক্তাভ নয়নে উগ্র ক্রোধ। কিন্তু পর
মুহূর্তেই তাকে দেখে চাহনিতে ফুটে উঠল অপ্রত্যাশিত বিস্ময় আনন্দ। ধৃষ্টকেতুর দিকে ফিরে তিনি বললেন, -“এমন ভাবে এলে? বড় কঠিন দায়িত্ব এখন
তোমার উপর। তোমার ভগিনী ও ভাগিনেয়কে রক্ষনাবেক্ষণের ভার, তোমাকেই
নিতে হবে।” – ঈষৎ মলিন হাসি হাসলেন নকুল। ধৃষ্টকেতু
স্বভাবে আবেগময়। রূপবান মহাবলশালী ভগ্নিপতিকে আজ এমন সহায়সম্বলহীন
অবস্থায় দেখে চোখে জল এল তাঁর। অশ্রু শাসন করতে গিয়ে কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বলতে পারলেন না তিনি।
নকুলই তখন আবার বললেন,-“উত্তর দিকের ওই শাল্মলী গাছের সারি লক্ষ্য করে আরো
এক চতুর্থাংশ ক্রোশ পথ গেলে আমাদের নূতন আবাস দেখতে পাবে।”-
ধৃষ্টকেতু ও সারথি, সে স্থান ত্যাগ করার পর, নকুল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন
করেণুমতীর কোলের ঘুমন্ত শিশুর দিকে। ধীরে ধীরে মুখের কঠিন রেখাগুলি
কমনীয় হোল। আবিষ্ট হোল চাহনি। হাত বাড়িয়ে
পত্নীর কোল থেকে নিলেন তাকে। তার শিশু শরীরের ঘ্রাণ নিলেন। তাঁর প্রতিরূপ যেন এই শিশু। আরো কতকাল তিনি দেখবেন না একে।
“জন্ম সংবাদ পেয়ে, সেই মহা বিপর্যয়ের মুহূর্তেও, জ্যেষ্ঠ বড় আনন্দিত
হয়েছিলেন।”- নকুল বললেন।
কিন্তু যুধিষ্ঠিরের উল্লেখ মাত্র ক্ষোভে কুঞ্চিত হয় করেণুর সুন্দর ভ্রূ
জোড়া। “জ্যেষ্ঠ, কত দায়িত্বজ্ঞানশূন্য মানুষ ভাবি শুধু। সর্বস্ব হারাবার পরেও ভ্রাতাদের, আপন পত্নীকে পণ রাখে কোন উন্মাদ!”
“জান করেণু, ভ্রাতাদের মধ্যে প্রথম পণ রেখেছিলেন তিনি আমাকেই। কেন? বিমাতার সন্তান বলে কি? অথচ মনে হোত আপন ভ্রাতাদের তুল্যই স্নেহ করেন
আমাদেরও।”
“তিনি কাউকে স্নেহ করেন না, শ্রদ্ধা করেন না। অন্তরে নিষ্ঠুর
তিনি। আপনি---আপনারা চারটি ভ্রাতা তাঁর পাদপীঠ শুধু। যেখানে অবস্থান করে নিজের যশ গাথা প্রচার করবেন তিনি দিকে দিকে।”- ক্রুদ্ধ মুখে বলে করেণু। শুধুই বয়োজ্যেষ্ঠতার কারণে কেউ
শ্রদ্ধেয় হতে পারে না, এই বিশ্বাস তার অন্তরে দৃঢ়তর হয়ে উঠেছে।
তার দীর্ঘক্ষণের সঞ্চিত ক্রোধের উষ্ণ অশ্রু এবার অবশে বয়ে যায়। তার স্বামী, পরম সুন্দর এই জ্যোতির্ময় পুরুষ আজ নিঃস্ব। পরাজিত। কি কঠিন এ জীবন। “আমি
সুক্তিমতীর প্রাসাদে যেতে চাই না। আপনার সঙ্গে অরণ্যবাসেই আমার
শান্তি।”- উচ্ছ্বসিত ক্রন্দনের আবেগে ভেঙে ভেঙে যায় তার
কণ্ঠস্বর।
জটিল বনপথের দিকে তাকিয়ে থাকেন নকুল। “যত্ন প্রয়োজন
এ শিশুর। প্রয়োজন শিক্ষারও। এই দুর্গম
অরণ্যে কেমন করে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব তাকে। অনেকগুলি
ব্রাহ্মণ আমাদের প্রতি প্রীতিবশত স্বেচ্ছায় দুঃসহ অরণ্যবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সকলের ক্ষুন্নিবৃত্তির আয়োজনেই সময় চলে যাবে। এ সুকুমার শিশুর
রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন! আর মাত্র ত্রয়োদশ বছরের পরেই সকল দুর্ভোগ শেষ হয়ে যাবে ভেব না। মহাসর্বনাশের খাঁড়া উদ্যত হয়ে থাকবে, মাথার উপরে। স্বাভাবিকভাবেই
ভয়ঙ্কর যুদ্ধ আসন্ন। অবধারিত লোকক্ষয়। দ্রৌপদীর
অবর্ণনীয় সেই লাঞ্ছনা যদি দেখতে নিজের চোখে। তার কাতর
আর্তনাদ আমার কানে ভেসে আসে এখনও। ভীষণ ক্রোধে সমগ্র পৃথিবী ছারখার
করে দেবার বাসনা জন্মায়। ত্রয়োদশ বর্ষ পরে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী তাই, জেনে রেখ।”
“আমি অনুভব করতে পারছি হে স্বামীন, তাঁর সেই অবমাননা। আহ্আহ্”- আহত
পশুর মতো আর্তনাদ করে করেণু। “নারীর কি চরম অসম্মান। সে কথা ভেবে যন্ত্রণায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে আর্যপুত্র। রক্তলিপ্ত একবসনা রাজ্ঞীকে কেশাকর্ষণ করে, প্রকাশ্য সভায় নিয়ে এসেছিল নরাধম
দুঃশাসন। দুর্যোধন ঊরু দেখিয়ে অশ্লীল ভঙ্গি করেছিল। কর্ণ কুৎসিত উল্লাসে হাসছিল ‘বেশ্যা’ ‘বেশ্যা’ বলে। নরকের কীট ওরা। আমি বলছি আর্যপুত্র, চরম যন্ত্রণাময় মৃত্যু নির্ধারিত
হোক ওদের জন্য।”- দৃপ্ত ক্রোধে করেণুর মুখ রক্তাভ হয়ে ওঠে। অগ্নিবর্ষী দুই চোখ।
শিশুটি এবার ঘুমের ঘোরে উসখুস করে। তারপর চোখ খুলে
তাকায়। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে সে। মুহূর্তের মধ্যে
কোমল হয়ে যায় তার মুখের ভাব। আহা ক্ষুধা পেয়েছে ওর। কতক্ষণ দুগ্ধ পান করেনি। ঘুমের মধ্যে কত সময় কেটে গেছে। সে একটি বৃক্ষ কান্ডে পিঠ রেখে ভূমিতে বসে। শিশুকে যত্নে
কোলে নিয়ে উন্মুক্ত করে বক্ষের নিচোল।
দুগ্ধভারাবনত দুটি জননী স্তন প্রকট হয় নকুলের সামনে। শ্যামবৃন্ত,
নিটোল, পূর্ণ। দুগ্ধ পানের তৃপ্তিতে শিশুর চোখে আবার ঘুম নেমে আসে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন নকুল। প্রথম দেখলেন এ দৃশ্য। নির্জন এই ছায়াময় অরণ্যে পিতৃত্বের অনুভবে প্লাবিত হন নকুল। পুত্রের মাথায় আলতো করে হাত রেখে মৃদু স্বরে কত কি যে কথা বলে যান। অর্থহীন সব কথা, নির্ঝরিণীর মতো নিম্নগামী অপরূপ স্নেহের উদ্ভাস।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ একটি স্মৃতি মনে পড়ে নকুলের। উদ্দীপ্ত হয়ে
ওঠে মুখ।
“মনে পড়ে করেণু, এক রাত্রে নিদ্রার আবেশে শুনেছিলাম যেন তুমি বার বার আমাকে
কত কি প্রশ্ন করছিলে। খুব উত্তেজিত মনে হয়েছিল তোমাকে। তুমি একটি নাম
উচ্চারণ করছিলে কতবার। ‘নিরমিত্র’ ‘নিরমিত্র’। মনে পড়ে?”
অব্যক্ত আর্তনাদ ঝড় তোলে তখনই করেণুমতীর প্রতিটি রক্তকণায়। ওষ্ঠাধর ব্যদিত হয়। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে শুধু। নকুল লক্ষ্য করেন না।
“এ শিশুর জন্মবার্তা এসে পৌঁছাল যখন, আমরা বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত তখন। তবু আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলাম সকলে। বংশধারা তো
নদীস্রোতের মতো। কুলনামকে বহন করে নিয়ে যায় কাল থেকে কালান্তরে। অর্জুন বলেছিলেন, এ পুত্রের নাম হোক নিরমিত্র। জান শুনেই করেণু
আমার মনে হয়েছিল কবে যেন তোমার মুখে শুনেছিলাম এই নাম।”
বিস্মিত মুখে নকুল দেখেন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে করেণু। জড়িত স্বরে বলে,-“আর্যপুত্র, যুদ্ধ কি অবধারিত?”
“অবশ্যই। নিরুপায় আমরা। ভেবেছ কি যে,
ধার্তরাষ্ট্রগণ ত্রয়োদশ বর্ষের পরেও সুশীল বালকের মতো আমাদের হাতে ফিরিয়ে দেবে সকল
সম্পদ? আর নারীত্বের সে লাঞ্ছনার প্রতিশোধ যদি না নিতে পারি, তবে বৃথা এ জীবন। বৃথা যুদ্ধের বিরুদ্ধে আমি সত্য, কিন্তু এ যুদ্ধে যদি অংশ গ্রহণ না করি,
তবে ধিক আমাকে।”- পরুষ কণ্ঠে বলেন নকুল। করেণুর মুখভাব
দেখে সহসা অসহিষ্ণু হয়েছেন তিনি। “তুমি কি ভীত?”
কয়েক মুহূর্ত আনত নয়নে বসে থাকে করেণুমতী। খুব দ্রুত কত কি
ভাঙা গড়া চলে তার মধ্যে। তারপর শিশুকে বুকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। স্থির এখন সে। আর কোনো আশঙ্কা নাই। আপন লক্ষ্যে অবিচল। তার মুখে ঔদ্ধত্য নাই, শুধু দৃঢ়তা। স্পষ্ট উচ্চারণে
বলে,-“হ্যাঁ আর্যপুত্র। সত্যের আলোক সহসা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে তীক্ষ্ণ এক
বল্লম হয়ে। বিদ্ধ করেছে আমার হৃদয়কে। আমি জেনেছি—আমি জেনেছি
মঙ্গল কি? অমঙ্গলই বা কি? তাই আমি ভীত। এ ভয়ে অগৌরব নাই। আমার সর্বশক্তি দিয়ে রোধ করতে চাই যুদ্ধের মহা সর্বনাশকে।”
চকিতে মনে পড়ে নকুলের মাত্র কয়েক দিন পূর্বে বিদুরকে বলা অগ্রজের কথাগুলি।
এগিয়ে চলে করেণু, উত্তর দিকের শাল্মলী বৃক্ষসারির পথ ধরে।
আর পিছন ফিরে তাকায় না। নকুল বিমূঢ় ভাবে অনুসরণ করেন তাকে।
চতুর্বিংশ অধ্যায়
অরণ্যের যে অংশে পান্ডবদের পর্ণকুটির, করেণুমতী পৌঁছায় সেখানে। কুটিরের চারিদিকের কিছু স্থান পরিষ্কৃত করা হয়েছে। সে দেখে বহু
মানুষের সমাগম হয়েছে এখন। রয়েছেন দ্বারকার যাদবাধিপতি কৃষ্ণও। পান্ডবসখা। তার পিতৃহন্তা। আগে যতবার দেখেছে সে তাঁকে, নীরব বিদ্বেষ স্রোত প্রবাহিত
হয়েছে তার অন্তরে। কিন্তু এই মুহূর্তে, তা আর অনুভব করছে না সে। তার দিগন্ত রেখা বিস্তৃত হচ্ছে ক্রমশ। দূর থেকে আরো
দূরে।
সে কুটিরের সামনে দ্রৌপদীকে বসে থাকতে দেখে। অপমান,
অগ্নিশিখার মতো আজও প্রজ্বলিত তাঁর সর্বাঙ্গে। রুক্ষ কেশরাশি
ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর মুখে, কাঁধে। অনবদ্য দেহলতা আবৃত সামান্য বসনে। প্রসাধনের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নাই। সম্পূর্ণ
নিরলঙ্কার। অল্প কৃশ হয়েছেন তিনি। কঠিন গ্রীবা। আয়ত, ঘন পল্লবের ছায়া পড়া দু চোখের মণিতে অপার্থিব জ্বালা। তবু কি অপরূপ এই সৌন্দর্য! যেন অগ্নিগর্ভ বৃক্ষ এক!
সেই জনসমাবেশে তার পরিচিতেরাও ছিলেন অনেকেই। ভোজ, অন্ধক,
বৃষ্ণিবংশীয় প্রধানগণ, কুরু কুলের সম্পর্কিত আত্মীয় ও জ্ঞাতি, বন্ধুস্থানীয় কয়েকজন
নৃপ। বহু ব্রাহ্মণও উপস্থিত সেখানে। আর ছিলেন পান্ডব
ভ্রাতাদের অপর পত্নীরা। সুভদ্রা ও তার পুত্র অভিমন্যুও ছিল। সপুত্র করেণুকে
বিশেষ কেউ লক্ষ্য করে না। সে শোনে কৃষ্ণ যুধিষ্টিরকে সম্বোধন করে দৃপ্ত স্বরে
বলছেন,-“আপনাদের এ দুর্গতি এক ক্ষণিক অবস্থা শুধু। আমি অনুভব করছি,
ভারত ভূমি আজ তৃষ্ণার্ত। দুর্যোধন, দুঃশাসন, শকুনি ও কর্ণের রক্ত পান না করে
তৃষ্ণা মিটবে না ধরিত্রীর। আরো রক্ত—আরো রক্ত—ঐ দুরাত্মাদের অনুগত যারা, তাদের
শোণিতও পান করবেন মাতা পৃথিবী। ঘৃণিত ব্যক্তির অনুগামী যারা,
তারাও ঘৃণিত। কারণ তারা বিশ্বের অশুভ শক্তি বৃদ্ধি করে।” ভীষণ ক্রোধে তাঁর দুই নয়নের শ্বেত অংশ রক্তিম হয়ে উঠেছে। মুষ্টিবদ্ধ দক্ষিণ করতল। যেন সম্মুখে দেখতে পাচ্ছেন
যূথবদ্ধ শত্রুকে। এখনই সংহারে উদ্যত হবেন।
সেই উন্মাদনা প্রবল বন্যার মতো প্লাবিত করে উপস্থিত জনতাকে। সমস্বরে জয়ধ্বনি করে ওঠে তারা।
কলরব স্তিমিত হলে দ্রৌপদী উঠে দাঁড়ালেন। দীর্ঘ আলুলায়িত
কেশ স্পর্শ করেছে তাঁর জঙ্ঘা। গাছের ঘন পাতার ফাঁক দিয়ে
সূর্যরশ্মির রেখা এসে পড়েছে তাঁর মুখে। নারীর সহজাত সৌন্দর্যে ভাস্বর এই
নিরাভরণা নারী। সমুদ্রোত্থিতা লক্ষ্মীর উপাখ্যান মনে পড়ে তাঁকে দেখে। ভীম ও অর্জুন দাঁড়ান তাঁর দুপাশে দুটি সুউচ্চ স্তম্ভের মতো। দ্রৌপদী বলেন,-“হে সমাগত মাননীয়গণ, জানি পান্ডুপুত্রদের প্রতি প্রীতিবশত আজ
এই গহন অরণ্যে আপনাদের আগমন ঘটেছে। তবু, তাঁদের বক্তব্য প্রকাশের
পূর্বে, এই সামান্যা নারীর বেদনা কাহিনী নিবেদিত হোক আপনাদের সম্মুখে।”- তাঁর তীব্র মধুর কণ্ঠস্বর অনুরণিত হয় বনান্তে। মোহাবিষ্ট জনতা
নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এই অলৌকিক রমণীর দিকে। কারোর মনে পড়ে
কত কাল আগে, সেই স্বয়ম্বর সভার কথা। রক্তাম্বরা, রত্নালঙ্কারশোভিতা
কুমারীকন্যা তখন। সলাজনয়না, অনিন্দ্যসুন্দরী বটে, কিন্তু আরো কয়েকটি সৌর
বর্ষ যেন আরো সূর্যালোক, আরো নক্ষত্রের প্রভায় অভিসিক্ত করে আজ তাঁকে অলৌকিক
জ্যোতির্ময়ী করে তুলেছে। পৃথিবীর ভূমি ও আকাশ এমন রূপ কি দেখেছে আগে? দ্রৌপদী
বলেন, তাঁর চরম লাঞ্ছনা কথা। রোদনের বেগে কখনও জড়িত হয়ে যায়
তাঁর কণ্ঠ। কখনও ক্ষুধিত ব্যাঘ্রিণীর গর্জন হয়ে ছিন্ন করে ফেলতে চায়
ত্রিলোককে। অবশেষে তিনি তীব্র মর্মভেদী দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন সুদূর
নীল শূন্যের দিকে। বলেন তাঁর গভীর নিঃসহায়তার কথা, কেউ নাই তাঁর। স্বামী নাই, পুত্র নাই, পিতা, ভ্রাতা, সখা কেউ নাই। নীলকমলের মতো
দুটি করতলে নিজের মুখ ঢাকেন তিনি। অবিরল ধারায় অশ্রু নামে, তাঁর
গন্ড, কণ্ঠদেশ পেরিয়ে অতিক্রম করে সুজাত দুটি স্তনের উচ্চাবচ রেখা।
জম্বুদ্বীপের বীরশ্রেষ্ঠ পুরুষেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকেন। ঐ নারীর অবমাননার কারণে আজ নিজেদের হীনবীর্য মনে হয়। ওই অশ্রুধারা
মোছাতে প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারলে, তবেই যেন জীবনের সার্থকতা। পাপাচারীদের
আঘাত হানতে, তাঁদের ধমনীতে প্রবাহিত রক্তস্রোত উদ্দাম হয়ে উঠেছে। অসংখ্য ক্রুদ্ধ পতঙ্গের গুঞ্জনের মতো শোনায় তাদের ক্ষোভ ও আক্ষেপের উত্তেজিত বাক্যগুলি।
কৃষ্ণ তখন শান্ত হতে আহ্বান করেন জনতাকে। দ্রৌপদীকে
সম্বোধন করে বলেন,-“হে ভামিনি, যাদের উপর তুমি ক্রুদ্ধ হয়েছ, মহাকাল তাদের গ্রাস
করতে উদ্যত। আজ তুমি যেমন কাঁদছ
তাদের পত্নীগণও আপন আপন পতির রক্তাক্ত মৃতদেহের উপর লুটিয়ে পড়ে, তোমারই মতো
আকুল কান্না কাঁদবে। সেই দিন আসন্ন। সে অনাগত দিনকে
আমি দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে। যেদিন তুমি এই আসমুদ্র হিমাচল
বিস্তীর্ণ জম্বুদ্বীপের একচ্ছত্র রাজমহিষী। যদি আকাশ পতিত,
হিমাচল ক্ষয়ীভূত হয়, যদি সমুদ্র শুকিয়ে যায়, ভূমন্ডল যদি খন্ড বিখন্ড হয়, তবু
নিশ্চিত জেনো, আমার বাক্যের অন্যথা হবে না।” – এত কঠিন ও
প্রত্যয়ী তাঁর কণ্ঠস্বর, উপস্থিত জনতা কেমন ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল।
আর দ্রৌপদী পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন তাঁর দিকে। সেই
সদ্যোবিবাহিত জীবনের শুরুতে ‘সখা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন যে তেজোময় সুন্দর পুরুষটিকে। কত কৌতুকালাপ, কত প্রীতিময় মুহূর্তের স্মৃতি আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠল। কত দিন পরেও আজও সেই স্নেহ-প্রীতির বন্ধন অক্ষুন্ন রয়েছে তবে। হৃদয়ের গভীরে স্নিগ্ধ স্পর্শ পেলেন যেন দ্রুপদনন্দিনী। এই ভীষণ
বিধ্বস্ত সময়ে, নিদ্রাহীন রাত্রে গাঢ় অভিমানে বার বার মনে হয়েছিল তিনি বুঝি অনাথা। আজ বিগত কয়েক দিনের দগ্দগে সেই ক্ষতে প্রলেপ পড়ল।
করেণুমতী নিবিষ্ট মনে শুনছিল কথোপকথন। প্রত্যেক
উচ্চারিত শব্দের গভীরে প্রবেশ করে যাচ্ছিল নিজেরই অজান্তে। বাক্যগুলি
সুস্পষ্ট চিত্রকল্প তৈরি করছিল তার মানস দৃষ্টির সামনে। তাই দ্রৌপদীর
মুখে এমন স্বস্তির ছাপ দেখে শিহরিত হোল সে।
পঞ্চবিংশ অধ্যায়
সূর্যাস্ত হয়েছে। এখনই অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে। অরণ্য বাতাসে
নীড়গামী পাখিদের কোলাহল। কৃষ্ণ ফিরে গেছেন ভগিনী সুভদ্রা ও তাঁর পুত্রকে নিয়ে। আগামী ত্রয়োদশ বর্ষ তাঁরা দ্বারকাতেই বাস করবেন। ফিরে গেছেন
অন্যান্য পান্ডবপত্নীরা যে যার পিত্রালয়ে। বিভিন্ন দেশের
রাজাগণও। পান্ডবভ্রাতারা কিছু দূরে অগ্নি প্রজ্জ্বলনের উপকরণ
গুছিয়ে রাখছেন। করেণুর ভ্রাতা ধৃষ্টকেতুও তাঁদেরই সঙ্গে।
অরণ্যের বাতাস শীতল হচ্ছে ক্রমশ। করেণুমতী এখনও কুটির
প্রান্তে বসে আছে। সে তার পুত্রটিকে বসনে আবৃত করে দেয় সযত্নে। দ্রৌপদী একটি দুটি কথা বলেছেন তার সঙ্গে। ইন্দ্রপ্রস্থের
রাজেন্দ্রাণী, সেই নারী, এখন প্রায় নির্বাক।
করেণু এই নির্জনতার অপেক্ষা করছিল। সে এসে বসে
দ্রৌপদীর পদপ্রান্তে। নিজের বোধকে শব্দে অনূদিত করতে হবে এখনই। অনেক দেরি হয়ে যাবার আগেই।
“যাও ভগিনী, গৃহপথে ফিরে যাও এবার। সন্ধ্যা ঘনিয়ে
আসছে। কত না বিষাক্ত কীট, পতঙ্গের উপদ্রব শুরু হবে এবার, এই
অরণ্যভূমে নিশাচর প্রেতের গল্পও বলে আদিম উপজাতিরা। জানি না কি
সত্য! কিন্তু সুকুমার শিশুর পক্ষে উপযোগী নয় এ স্থান।”- শান্ত
বিষাদপূর্ণ ভাবে দ্রৌপদী বললেন।
“আর্যা, ত্রয়োদশ বর্ষ পরে আপনি কি যুদ্ধ চান?”
“অবশ্যই।”- কষাঘাতের মতো বাতাসে আস্ফালিত হয় এবার দ্রৌপদীর স্বর। “কেন অন্য কোন্ পথ খোলা আছে মনে কর?”
“আর্যা, কৃষ্ণ শুভ ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করেছেন বটে। কিন্তু—”
“হ্যাঁ বলেছেন তিনি, আমি এই জম্বুদ্বীপের অধিশ্বরী হব।”- দর্পিত কণ্ঠে
বলেন দ্রৌপদী। “কিন্তু এ কথা যদি তিনি উচ্চারণ না করতেন, তবু যুদ্ধ
নিশ্চিত। সিংহিণী আহত হলে সে কি ঘাতকের পথ ছেড়ে দেয়? নাকি তার
উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আপ্রাণ শক্তিতে নখে, দাঁতে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় তাকে?”
“পশুর বিবেচনা নাই, পশুর বৃহত্তর কোনো পরিমন্ডল নাই। ভবিষ্যৎ কাল ও
জীবনের প্রতি দায়িত্ব নাই তার।”
“তোমাকে কখনও নারীর চরম অসম্মান সহ্য করতে হয়েছে করেণুমতী? রক্তলিপ্ত বসনে
কেশাকর্ষণ করে কোনো দুরাত্মা প্রকাশ্য সভায় নিয়ে এসেছে তোমাকে? আগে সেই ভূমিকায়
নিজেকে অধিষ্ঠিত কর। তবেই বুঝবে প্রতিহিংসার ভাবনা কোন পরিস্থিতিতে উন্মাদ
করে দেয় নারীকে--
“এ জীবন বহু বিস্তীর্ণ দেবী, তুচ্ছ প্রতিহিংসা---
“তুমি না ক্ষত্রিয় কন্যা—ক্ষত্রিয় বধূ—তবু এমন বিপরীত চিন্তা তোমার? তবে শত ধিক্তোমাকে---”
“আপনার লাঞ্ছনা, সকল নারীরই লাঞ্ছনা স্বরূপ দেবী। জম্বুদ্বীপের
আকাশ, বাতাস এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে ঐ নরাধমদের নিন্দাবাদে। কিন্তু যুদ্ধ যে
চেতনাহীন। তার অন্ধ শক্তি উন্মত্ত ঝড়ের মতো, ভূকম্পনের মতো,
আগ্নেয়গিরির ফুটন্ত লাভা স্রোতের মতো। প্রবল ক্ষুধায় গ্রাস করে যা সামনে
পায়। অপরাধী, নিরপরাধী বিচার করে না। প্রভাবশালী
ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরের যে লোভ ও ঈর্ষা, তাই শেষে মহাযুদ্ধের রূপ নেয়। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয় শত সহস্র সাধারণ বৃত্তিভোগী মানুষ, নির্বোধের মতো
পরষ্পরকে আক্রমণ করে প্রবল জিঘাংসায়। যুদ্ধ যে কত বলি নেয়! কত পুত্র,
কত স্বামী, কত ভ্রাতা নিহত হয় প্রতিদিন। আর যুদ্ধ শান্ত
হবার পরেও কালচক্র থেমে যায় না। সূর্যোদয় হয়, সূর্যাস্ত হয়। অমোঘ নিয়মে সময় প্রবাহিত হয়। অতীতের যুদ্ধক্ষেত্র তখন এক
মহাশ্মশান। পড়ে থাকে শুধু অগণিত মৃতদেহ আর হাহাকার।”
“মহাকাল সকলই গ্রাস করেন। ক্ষত্রিয়ের পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে
প্রাণ ত্যাগেই গৌরব। তা পরিতাপের বিষয় নয়।”
“আপনি তবে কোন বিজিত ভূমির সাম্রাজ্ঞী হবেন? আপনার পতি, পুত্রগণ, পিতা,
ভ্রাতা, স্বজন, তাঁরাও কি নিরাপদ এই হননভূমিতে?”
প্রজ্জ্বলিত চোখে তার দিকে তাকান দ্রৌপদী। এই দুর্বিনীতা
বালিকার এমন স্পর্ধা হোল কি করে যে তাঁকে ঔচিত্যবোধের শিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু সাধারণী নারীর মতো কলহে লিপ্ত হতে ঘৃণা হয় তাঁর। উপেক্ষাই শ্রেয়। তাঁর রক্তিম ওষ্ঠাধরে নিমেষের জন্য বিদ্রূপের তিক্ত হাসি
ফুটে ওঠে। তিনি দুই হাত বাড়িয়ে করেণুমতীর কোল থেকে সযত্নে গ্রহণ
করেন শিশুপুত্রটিকে। তার সুন্দর মুখ চুম্বন করে বলেন,-“হে বৎস, কুরুকুলের
নূতন মানুষটি, আজ অবোধ শিশু তুমি। কিন্তু ত্রয়োদশ বর্ষ পরে আবার
তোমাকে দেখব যখন, তখন তুমি হয়ে উঠবে শাল্মলী তরুর মতো উজ্জ্বল এক কিশোর। তুমি ততদিনে জানবে তোমার এই দুর্ভাগিনী দ্রৌপদী মায়ের অবমাননার কথা। সেদিন তোমার ক্ষত্ররক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, জননীর অমর্যাদার প্রতিশোধ কামনায়। কারণ প্রকৃত পুরুষ কখনও নারীর অমর্যাদা সহ্য করেন না। শত্রুকে পিষ্ট
করে যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটবে তোমার বিজয় রথ। শত্রুরক্তে
ললাটে পরবে তিলক। যুগে যুগে তোমার কীর্তি বন্দনা গান হয়ে ভাসবে
জম্বুদ্বীপের আকাশে। চিরবিজয়ী হবে তুমি।” দ্রৌপদী
নবজাতককে আবার প্রত্যপর্ণ করলেন স্তম্ভিত করেণুমতীর ক্রোড়ে। কোমল কণ্ঠে
বললেন,-“আর বিলম্ব কোর না ভগিনী। দূরের পথ।”
---------------------------
করেণুমতী জানে না কত পথ হেঁটে এসেছে সে। যুগে যুগে
পথপ্রদর্শকেরা এই পথেই এসেছেন। তাঁদের নাম নাই, লিঙ্গ নাই, কুল
নাই, জাতি নাই। নাই দেশ ও কাল। শুধু অন্তরে
প্রজ্জ্বলিত সত্যের অনুভব দীপখানি। কেউ তাঁদের অনুগমন করেছে। কেউ করেনি। নির্লিপ্ত কাল লিখে রেখেছে তাঁদের চেতনার ইতিহাস। লিখে চলেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু নাম লেখেনি সব সময়ে।
রথ চলছে শুক্তিমতীর দিকে। রাত্রি নিবিড় হয়েছে এখন। করেণুমতীর কোলে নিদ্রাতুর শিশু। অন্ধকারে দৃষ্টি চলে না। তবু করেণু দেখতে পায় এই শিশুর মধ্যে মিলে গেছে বিপুলা পৃথিবীর লক্ষ কোটি
শিশু। আসন্ন কালের প্রতিনিধি যত। জননী রক্ষা করতে
চেষ্টা করেন শিশুকে। প্রয়াসই জীবনের ইতিকথা। সাফল্য নির্ধারণের
ভার বৃহত্তর কোনো অজ্ঞাত শক্তির হাতে। করেণু দেহ দিয়ে, প্রাণ, মেধা,
মমতা দিয়ে সে ইতিকথা রচনা করে চলে।
সে শুনেছে আচার্য বীতিহোত্র সুক্তিমতী ত্যাগ করে চলে গেছেন সুদূর উত্তরে। তাঁর সংবাদ কারোর জানা নাই। রথের চাকার ঘর্ঘর ধ্বনির সঙ্গে
মিলে যায় পথের দুপাশে, ক্ষুধার্ত
শিবাকুলের উল্লসিত ডাক। মাথার উপরে মাংসাশী নিশাচর
পাখীদের ডাক। অন্ধকার রজনীতে দিকভ্রম হোল কি সারথির? কোথায় চলেছে এ
রথ? যুদ্ধ শেষের কোন মৃতের ভূমিতে বুঝি? জননীর দল মশাল হাতে যেখানে খোঁজে আত্মজের
শব? খুব মৃদু, প্রায় অস্ফুট স্বরে করেণুমতী ডাকে, -আচার্যদেব কোথায় আপনি? সে
ভূমিতে কি এখন সূর্যোদয় হচ্ছে? কোথাও কি এখন সূর্যোদয় হচ্ছে?
সমাপ্ত
0 মন্তব্যসমূহ