শূন্য দশকের কবি : ইলিয়া কামিনস্কি
অনুবাদ কবিতায় অভিজিৎ পালচৌধুরী
রুশ-মার্কিন কবি ইলিয়া কামিনস্কির জন্ম ১৯৭৭ সালে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওডেসা শহরে, যা বর্তমানে ইউক্রেন দেশের প্রধান বন্দর শহর । মাত্র চার বছর বয়সে বধির হয়ে যান ইলিয়া । শব্দ শুনতে না পেলেও শব্দ তাকে ছাড়েনি মননে, অবচেতনে । ১৯৯৩ সালে সপরিবারে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেন । বর্তমানে তিনি সান দিয়েগো ইউনিভার্সিটি'তে ক্রিয়েটিভ লিটারেচরের অধ্যাপক । ২০০৪ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "ডান্সিং ইন ওডেসা" পাঠক মহলে উচ্চ প্রশংসিত ও সমাদৃত হয় । রাশিয়ান ও ইংরেজী দুই ভাষাতেই কবিতা লেখেন শূন্য দশকের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় উল্লেখযোগ্য এই কবি, ইলিয়া কামিনস্কি ।
১.
একটা শান্তির সময়ে..
চল্লিশ বা ঐরকম কিছু
বছরের বাসিন্দা পৃথিবীর
আমি একবার নিজেকে
আবিস্কার করলাম একটা শান্তিপূর্ণ দেশে । আমি দেখি
প্রতিবেশীরা ফোন খুলে
একজন পুলিশ একজন লোকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স চাইছে দেখতে । যখন লোক টি ওয়ালেট
বার করতে যায়, পুলিশটি গুলি করে ।
গাড়ির জানালায় । গুলি
করে ।
এটা একটা শান্তিপূর্ণ
দেশ ।
আমরা আমাদের ফোন পকেটে
পুরে ফেলি এবং যাই । দাঁতের ডাক্তারের কাছে, শ্যাম্পু কিনতে, বাচ্চাদের স্কুল থেকে
তুলতে,
বেসিল পাতা কিনতে ।
আমাদের দেশটি এক দেশ
যেখানে পুলিশের গুলিতে নিহত একটি বালক ফুটপাতে পড়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ।
আমরা তার হাঁ- করা মুখে
সমগ্র জাতির নগ্নতা
দেখি ।
আমরা দেখি । দেখি
অন্যদের দেখা ।
একটি বালকের শরীর
ফুটপাতে পড়ে থাকে একদম ঠিক একটি বালকের দেহের মতো ।
এটা একটা শান্তিপূর্ণ
দেশ ।
এবং এটি আমাদের
নাগরিকদের দেহগুলি সহজেই মুড়ে ফেলে, যেমনভাবে
রাষ্ট্রপতির স্ত্রী
তাঁর পায়ের নখগুলো ছাঁটেন ।
আমাদের সবার তবু
দাঁতের ডাক্তারের
অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার কঠিন কাজটি করে যেতে হবে,
একটি গরমের স্যালাড
বানানোর কথা মনে করা : বেসিল পাতা, টমেটোগুলো, এটা একটা মজা, টমেটোগুলো, একটু নুন
দেওয়া।
এটা একটা শান্তির সময়
।
আমি গুলির শব্দ শুনতে
পাই না,
কিন্তু দেখি মফস্বলের
উঠোনে পাখিদের
ডানা ঝাপটানো । আকাশটা
কত উজ্জ্বল
যেন রাজপথে তার অক্ষে
ঘুরছে ।
আকাশটা কত উজ্জ্বল
(ক্ষমা করো)
কত উজ্জ্বল ।
মূল কবিতা : in a time
of peace
২.
শহর দেখে ওরা আলফন্সোকে
তোলে..
এখন আমাদের
প্রত্যেকে
একটি সাক্ষীর কাঠগড়া :
ভাসেঙ্কা আমাদের দেখে,
আমরা দেখি
চারজন সৈন্য আলফন্সো
বারাবেনস্কিকে রাস্তার ধারে ছুঁড়ে ফেলতে ।
আমরা ওদের তুলতে
দিয়েছি ওকে,
আমরা সবাই ভীতু ।
আমরা যা বলি না
আমাদের সুটকেসে, কোটের
পকেটে এবং গলায় বহন করি ।
রাস্তার ওপারে ওরা তাকে
দমকলের
হোসপাইপে ধোয় । প্রথমে
সে চিৎকার করে, তারপর সে থেমে যায় ।
এতো রোদ--
একটা টি-শার্ট টাঙ্গানো
কাপড়ের সারি থেকে খসে পড়ে এবং একটা বুড়ো লোক দাঁড়ায়, সেটা তোলে, তার মুখের
উপর চেপে ধরে ।
প্রতিবেশীরা সব লাইন
দিয়ে দেখে রাস্তার ধারে তাকে ছুড়ে ফেলা যেন কোনো মজার তামাশা : বাঃ বাঃ ।
এতটাই রোদে--
আমরা প্রত্যেকে
কীভাবে
একটা সাক্ষীর কাঠগড়া
:
ওরা আলফন্সো কে
তোলে
আর আমরা কেউ উঠে
দাঁড়াই না ।
আমাদের নীরবতা আমাদের
হয়ে দাঁড়ায় ।
মূল কবিতা : Town
Watches Them Take Alfonso
অনুবাদ : অভিজিৎ
পালচৌধুরী
0 মন্তব্যসমূহ