১
এই প্রতিদিনকার অবক্ষয়ের ভেতর একটা রাগ আছে
ঘরে ঘরে রাগ রেখে সেই রাগ অভিলাষ করা।
এখন কোথাও কোন সমাজশুদ্ধির কথা নেই।
শাড়ি আছে, পর্দা আছে, বেডকভার আছে।
এখন কোথাও কোন অবলম্বন নেই, কোন ভালো করা নেই
শুধু আছে নিরতিশয় বালক বয়স আর অনন্ত লুচিমাংস।
কেননা জীবন আজো ঘরবাড়িময়।
২
তোমাকে রাগ জানায় কে ?
সেইকি হেলে পড়া বটগাছের কোটরে থাকে?
সেই কি পঁচিশ বছর ধরে তোমার ভেতরে জমিয়ে রাখছে সব?
সেই কি যে ছেঁড়া কাঁথাকানিও ফেলতে পারে না?
সেই কি, যে একদিন তোমার ভেতর থেকে ফেটে বেরোয়,
যেভাবে পুঁটলির ভেতর থেকে উদয় হয় দৈত্য, জিন?
এই অন্যমন বেঁচে থাকার মধ্যে মধ্যে
লুকিয়ে যাচ্ছ রাগ
যেভাবে আটার কৌটোর তলায় মেয়েরা পয়সা জমায়।
৩
অতর্কিতে আক্রমণ করবে সে।
নিচু নিচু কথা বল
সংকীর্ণ সব পথ দিয়ে হাঁটো।
জীবনে দরজার অভাব অনুভব করছেন সেই মেয়ে
যার স্বামী অক্ষম, ছেলে গুজরাতে রান্নার হোটেলে কাজ করে
আর তিনি, একটা ঘরের ছাত দিতে গিয়ে নিঃস্ব,
শুধু স্বপ্ন দেখেন লোহার দরজার।
লোহার দরজা না দিলে যে বাইরের পুরুষেরা
লাথি দিয়ে ভেঙে ঢুকে আসবে ঘরে।
নিশ্চিন্তি আর নিরাপত্তার দরজা কি তুমি তাকে দেবে?
তুমি তার বন্ধু হবে?
তুমি তাকে দেবে হাজার হাজার টাকা ধার?
কুসুম, কুসুম, তোমার ঘরবাড়ি নাই, কুসুম?
৪
অন্ধকার অন্ধকার সব রাস্তা চলে গেছে
কোথাও আলো টিমটিম করে
কোথাও নেই হালকা সবুজ সেই চাদরের গন্ধ
হাসপাতালে যেটা পেয়েছিলে, আর
মনে হয়েছিল ভেতর অব্দি সাবান সাবান হয়ে গেল।
রাস্তার মোড়ে ইঁট, রাস্তার মোড়ে বমি করতে করতে ঝুঁকে বসে
পড়া মেয়ে।
রাস্তার মোড়ে ভেঙে পড়া গাছ, গত ঝড়ের।
রাস্তার মোড়ে বাইকে হেলান দেওয়া দুষ্ট যুবকগুলি, চোরা
চাউনি মেখে।
এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে তুমি আসো
নিজের বাড়িতেই ফিরে
হাতে দু দুটো ভারি বাজারের ব্যাগ।
আর ভাব পাঁচফোড়নের কথা
আর ঝাঁঝে চোখ জ্বালা করে ওঠার কথা।
বাড়ি বাড়ি কাজ করা মেয়ের মত নিরাসক্তভাবে
তুমি কেন আজকাল নিজের বাড়িতে ঢোক?
৫
এক অন্ধ পথের ভেতর হঠাৎ তোমার আত্মচেতনা এল।
ব্যাস , সমস্ত সকাল গেল কালো হয়ে, পুরুষের চাউনিতে
তুমি কামাসক্ত হয়ে গেলে।
তুমি পাবলিক বাসের মধ্যে একমাত্র মহিলা হয়েছ যেন।
যেন বেলুনের বেঁধাল কেউ পিন
তুমি হাওয়া ছেড়ে দিয়ে একা বসে রইলে, আর কান্নার
ভেতরে ভাবলে, আহারে , আমি কত দুঃখী।
সমস্ত কান্না কালিমাময় হয়ে গেল তোমার।
তারপর থেকে শুধু সার্কাসের খেলা
বাড়িঘর নেই, তবু ক্লান্ত হও, কাজ করে করে
তাঁবু পালটে পালটে
বাড়ি থাকলে ভাব আমি খাটুন্তি পিটুন্তি ঝি এক।
আরো চাপ তাপ বিরক্তি অনুযোগ তাই।
আজ
তুমি রোদেলা ঘর্মাক্ত সকালের
তুক ভেঙে স্নানে ঢোকো, ঝরনা চালিয়ে
নিচে বসে থাকো।
কাঁদো।
দেখ , ভেঙে যাচ্ছে আবার আত্মসচেতন এই খেলাধুলো, ঝাঁঝ।
1 মন্তব্যসমূহ
খুব সুন্দর লিখেছেন। মুগ্ধতা রইলো।
উত্তরমুছুন