বিশ্রাম
অনেক বিপ্লবের দিন কেটে
গেলে
আমরা নিরিবিলি খুঁজতে
বেরিয়েছি
অনেক মৃত যুগ পার হয়ে
একটি ধূসর যুগে আজ
এখানে চিৎকারগুলি পড়ে
আছে
হাওয়া আজও ক্রন্দনধ্বনি
বয়ে আনে
রক্তঘ্রাণে মৃতদেহগুলি
হাঁটে
আমরা ছায়া খুঁজি
অনেক নীরব ছায়ার কাছে
পাখিদের পাঠশালা, নদীর
দোকানে
আর অরণ্যের সবুজের কাছে
আমরা কিনতে চেয়েছি
বিশ্রাম
বিশ্রাম পাওয়া যায় ?
বিশ্বাসী নূপুর বেজে
উঠুক তবে
কাছে এসে হাত ধরে বসুক
আমরা অপেক্ষায় আছি…
রুমাল
তোমার রুমালটিতে একবার
মুখমণ্ডল মুছে নিয়েছি
জটিল সময়গুলি পার হতে
হতে
এটুকু সারল্য শুধু আজ
স্বীকারোক্তি হয়ে আছে
রাস্তার মোড়ে মোড়ে
যুদ্ধের মহড়া
তোমার সঙ্গেই মনে মনে
বিবাহ সেরে নিয়ে
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত
হওয়া
কত বিদ্বেষ বিদ্বেষী
আলো মেখে এসে দাঁড়িয়েছে
তাদের চকচকে আঁশ
উদ্ধত ছোবলের মুখ
পূর্ণ হয়ে গেছে বিষে
পিছিয়ে এসেছি তোমার
পুবের জানালার কাছে
চেয়ে দেখেছি তোমার
সংসারে কত গান বাজে
সেসব উজ্জ্বল স্বরলিপি
কিছুটা সাহসী করেছে
তোমার কুমারী রুমালটি
আমার সমূহ বিষাদ মুছে
নিয়ে গেছে
গণপিটুনি
আমার সমস্ত বোধ
গণপিটুনির দিকে চলে যাচ্ছে
হে রাষ্ট্র, কী করে
ফেরাব তাকে ?
রোজ সে মারা যায়
রোজ তার প্রাণ ভিক্ষা
চাই
জনরোষ বাড়তে থাকে রোজ
কী করে বাঁচাব তাকে ?
রাষ্ট্র কি ধর্মরাষ্ট্র
হবে ?
বজ্রের কৌশলে আলোড়িত
মেঘ
নীল হৃদয় ঢেকে ভয়
নামায় আকাশ
করুণার নক্ষত্র নেই,
মানবতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে
বোধের হাহাকার শুনি
আস্ফালনের ঘেরাটোপে
সাঁতার
রোজ সাঁতার দিতে দিতে
ওপারের তীরের দিকে যাই
এই জলরাশি, এই ঢেউ কৌশল
শেখায় রোজ
ভাসমান হয়ে থাকা এজীবন
শুধুই স্মৃতির কাহিনি
কিছুটা যদিও ভুলে যাই,
কিছুটা তবুও মনে রাখি
ওপারে কি সুখ আছে?
এপারের বিষণ্ণতা এসে
আমাকে শুধায়
নির্বাক তবুও আমি
বিস্ময় চিহ্নের মতো সচকিত হই
সাঁতার দিতে দিতে
নির্ঘাত সাঁতারু
ডুব মারি, ভেসে উঠি,
ক্লান্ত করে জলের উল্লাস
সম্পর্ক
যাকে মনে রেখে রেখে ফুল
ফোটাই
আমার বাঁচার বৃক্ষে
আবার নতুন পাতা আসে
যাকে মনে রেখে রেখে
আন্দোলিত শাখা-প্রশাখায়
এখনও বিলম্ব বসন্ত এসে
হাসে
সে কি আমার স্মৃতির পথে
আসে?
নিভৃত মুহূর্তগুলি যার
স্পর্শে রঙিন
রঙিন চপ্পল তার এইখানে
থেমে যায় এসে!
বরষার মেঘেরা সরে যায়
একে একে
জল দিতে দিতে তাদের কলস
শূন্য হয়
পাখিরা ডেকে ডেকে কত
ডাক রেখে যায়
শূন্য ঘরের দরজা এখনও
উন্মুখ জ্যোৎস্নায়
এখনও বাজেনি তার চুড়ি
অনন্ত বলয়ে এক সম্পর্ক
বাঁধা আছে!
আজ ভ্রমণ শেষ হল
রাতের শেষ তারাটির মতো
জেগে আছ
আমার ভ্রমণ শেষ হল—
নিপীড়িত পৃথিবীর
পাদপীঠে
বড়ো একা মনে হল
আজ
আরক্তিম যন্ত্রণায়
ঘিরে আছে রাতের সমাজ!
হাতের আঙুলগুলি গুনে
গুনে দেখি
ঠিকঠাক আছে সব —
নখের চিহ্নে এখনো
গোলাপি দাগ
বসন্তরশ্মির স্বরলিপি —
তুমি এসেছিলে নিশিপদ্ম
বনে
হৃদয় পেয়েছে ধূম তাই
জাগরণে।
আজ ভ্রমণ শেষ হল
ভোরের প্রলাপ নিয়ে
হেসে উঠুক সূর্য —
আমি ইতিহাসে ঢুকে যাওয়া
যুগ....
নিরুত্তর
মন শুধু পুড়তেই জানে
চোখের জলে চাঁদ ভাসিয়ে
দিই
নিজেকে বসাই সহানুভূতির
ঘরে
অরণ্যের পর অরণ্য জুড়ে
কত বাঘ সিংহ যায়
বাঘ সিংহরা অবিশ্বাস —
অবিশ্বাসদের রাখব
কোথায়?
নষ্ট হতে হতে কষ্টের
বারান্দায়
আজও কে ডাকতে আসে?
কে?
সমস্ত জীবনভর নিরুত্তর
স্তব্ধতায়