আত্মদর্শন এক গভীর একাকীত্ব
ঘুণপোকার মতো চোখটা আমায়
ভিতর থেকেই খেয়ে যাচ্ছে। সহজসুন্দরীকে নির্বাসন দিয়ে ইড়া পিঙ্গলার সঙ্গী হয়ে তাদের
বগলদাবা করে পথচলছিলাম কিন্তু শরীরের তাপ বাড়তে লাগল। দুহাত ঊর্দ্ধে তুলে ত্রাহি
মধুসূদন হাঁক ছেড়ে সহজসুন্দরীর খোঁজে বেরোলাম। সে বেটিও এমন ভোজবাজি জানে ধরা
দেবার নাম নেই,
ছুঁতে গেলেই পগাড় পাড়। এদিকে চোখ রাঙানি দিনদিন বেড়েই চলেছে।
নিন্দামন্দ ছেড়ে চুপচাপ নাম জপছি। তবুও পাহাড়াদাড়িতে খামতি নেই। হিংসা, রাগ, সন্দেহ, কূটকাচালির মতো
সম্পদ বর্জন করলে জীবন পানসে হয়ে শুকিয়ে ওঠে। তখন সুরায় ভিজিয়ে রাখতে হয় খটখটে
জমি। আমার মতো ঘাসপাতাদের বিড়ম্বনার জীবন। ছাড়তেও পারিনা ধরতেও না। এদিকে রোজ রোজ
দেখা হয়েই যায়। চিত্রগুপ্তের জাবদা খাতায় কলমপিষতে হয়। কত ছটাক মনে মনে 'বেশ হয়েছে' বলে হেসেছি তাতেও ট্যাক্স বসে। দিশেহারা
আগাছার মতো রাগ বাড়ে। সেই রাগে আরো বেশি করে প্রতিবেশীর হাঁড়ির খবর রসিয়ে রসিয়ে
বিজ্ঞাপন দিই। নিজের দুখি হবার ঢাকটা জোরে জোরে পেটাই। সেই আওয়াজে সাহায্য
প্রার্থী ডাকিনী যোগিনী দূরে পালায়। আর চোখটা রাত বাড়ালেই শাসাতে থাকে। মন আমার হাতের বাইরে যায় দ্রুত গতিতে,
যত লাগাম কষি তত ছিঁচকাঁদুনি হয়ে শুদ্ধিব্রত যাপন করে। আরাম হয়
আমারও, উষ্ণতা ছড়ায় মজে যাওয়া জলাভূমিতেও। তবু অস্হিরতা কমে
না, কে কে আমাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নির্বাসন দিতে চায়?
সাঁট করি গুপ্তঘাতকের
সাথে, চোখটাকে
হত্যা করতেই হবে। খুঁজে পাবো পাবো মুহূর্তে পাথুরে খিলানের পাশ দেখি
অনিন্দ্যসুন্দর কান্তি 'হা কৃষ্ণ' নামে
বিহ্বল। হাত থেকে খসে পড়ে আয়ূধ, স্মরণাগত হয়ে পথে লুটাই।
নারকীয় হত্যালীলায় চোখ বন্ধ করে কাঁপতে থাকি। লুটিয়ে পড়েন ঈশ্বর, গোপনে সরে যায় শেষচিহ্ন। পাগলের মতো খুঁজতে থাকি, কাঁহা
গেলে তোমা পাই! নাই নাই। বসে থাকি যুগের পর যুগ। বালির ভিতর বৃষ্টি জমে, আলো কমে। এসে বসেন তিনি। স্মিত মুখের ভিতর জেগে থাকে অনির্বাণ চোখ। সে চোখ
মায়ার জ্যোৎস্নায় সদ্য অবগাহন সেরে এসেছে। সব সত্য তার জানা তাই এত একা একাকী!
অপরাধ ক্ষমা করো প্রভু। হাসেন জগদীশ্বর। তবে কি ক্ষমা চাইতে গেলেও অহংকার বর্জন
করতে হয়? বাতাসে লবণ ভাসে। গর্জন আসে সংসারের। হিসেব
বোঝাপড়ার তিক্ত সত্য আষ্টেপৃষ্টে ধরে। হাঁসফাঁস করি। মুখোশের ভিড়ে ম্লান মুখে
পিছিয়ে পড়েন ঈশ্বর। উদ্বাহু জনতার মিথ্যে স্তুতির সংকীর্তনের ঢেউয়ে ভাসতে থাকি,
ডুবতে থাকি, মরতে থাকি। গাছে উঠিয়ে মই কেড়ে
নিয়ে দাঁত মুখ বিকৃতি করে শ্বাপদের ভিড়। দিশেহারা হয়ে যাই। ত্রাহি মধুসূদন,
ত্রাহি মাম।
চোখটা এবার স্পষ্ট দেখতে
পাই। স্বপ্ন নয়,
যেন ছোঁয়া যাবে এতটাই বাস্তব তবু স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। তার গায়ে রোদ
ঝরে, জ্যোৎস্না ওঠে, বৃষ্টি বাসা
বাঁধে। স্বল্প জীবনবৃত্তের কথা মিহিসুরে বলে যায়। এখন আর ভাঙতে চায়না, ঘাড় গুঁজে ঠেসে রাখেনা এঁটেল মাটির গায়ে। মৃদু হাসে, যেন মাথার ভিতর পথ বয়ে গিয়েছে সুদূরে, সে পথে দুবাহু
তুলে ছুটে চলে গোরাচাঁদ, সব জানাই শেষ জানা নয়, চলো চলো আরো অনেক পথ বাকি। সত্য অসত্যের মাঝে সত্যকে চিনে নেওয়া দুরূহ।
ত্যাগ করো হে প্রাণসখা, ছোটো ছোটো লোভ পরিত্যাগের ভিতরেই
মহান হবার মহীরূহ ঘুমিয়ে থাকে। উঠতে গিয়ে পিছন ফিরি, আরশিনগরে
ও কার চোখ দেখি! বিসমিল্লাহ্ সুর ভেসে আসে কানে, চন্দন
গন্ধের ভোরাই বাজছে। এই তো নবজন্মের সঠিক সময়।
4 মন্তব্যসমূহ
অনবদ্য❤
উত্তরমুছুনআন্তরিক ধন্যবাদ
মুছুনআহা এক অপূর্ব অনুভূতি ছুঁয়ে আছে শব্দমালায়।রেশ রয়ে যায় অনুক্ষণ।
উত্তরমুছুনআন্তরিক ধন্যবাদ...(সৌমী)
মুছুন