কুমড়োলতা
কলতলায় গোড়ালি ঘষতে ঘষতে মা ভাবে কুমড়ো গাছটার কথা। ফুল'দি তখন লকলকিয়ে বাড়ে একহাত
করে রোজ। কানভাঙানো চাঁদের আলোয় --এই পাছা ছুঁইছুঁই চুল
--দেবদারু মাথায় মাথায় ; তাকে দেখলে মেঘ ডেকে ওঠে, বিদ্যুৎ হয়
বর্ষার বাতাস হর্ণ বাজাতে বাজাতে ঢুকে পড়ে স্কুল বাসে.. দৌড়
মারে কুমড়ো ডগা
পাহাড় টপকে জলকাদায় পগারপার...
(মা'র মুখ থেকে অনর্গল বেরিয়ে আসে 'দুগ্গা দুগ্গা' ধ্বনি)
ধরণীর সামান্য কুমড়ো গাছ অসামান্য হতে হতে বেড়ে যায় আরও এক
হাত...
পাল উড়াইয়া দে...
নামমাত্র
স্নান সারা হল। পাড় ভাঙা জখম
নিয়ে
অতি কষ্টে নদী বহে যায়... বৃষ্টির তর্জনী নেমে
আসে।
মাজায় চুনহলুদ ; ভাটিয়ালি -ভালোবাসা ডলে দেয় মাঝি।
ভুলে যাওয়া প্রিয় সারিগান... মনে পড়ে
দিন শেষে আসে হলী--বলরাম।নদীজলে ধুতে ধুতে লাঙলের ফাল
প্লুতস্বরে কান্না করে : নদীরে বাঁচবি ক-টা দিন...?
ধীরিধীরি বহে চলে নদী ; হুমড়ি খাওয়া
বটগাছ , আব্বাসউদ্দীন আর
বোবা জল নিয়ে...
অপ্রস্তুত
রূপকথা
["...এক রানী যে রাক্ষসী.. কেহই জানে না..।রাজার হাতিশালে হাতি মরিল, ঘোড়াশালে
ঘোড়া..."--- দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার ]
আষাঢ়ের লম্বা সন্ধ্যে। সওয়ারি আমরা ঝিমকি-নদীর ঢেউয়ে ছলছল বারি...
খোঁপায় ফুটেছে প্রথম কদম ফুল। মনে পড়ে!
রামধনু আঁকা তেপান্তরেতে ? ওড়ে
রাক্ষুসি চুল...
আমাদের নেই পক্ষীরাজের ঘোড়া
নদীর ঘাটেতে ছোট্ট পানসি ডিঙা
মাঝ দরিয়ায় বারি-বিহঙ্গ দুটি...গেছে কী না গেছে
বেজে ওঠে রামশিঙা... মনে পড়ে ?
হাড়ভাঙা-পথ-- জুড়ে লটকানো ছেঁড়াখোঁড়া মাথা। চর্ব্যচোষ্য হাড়। রাজা-মোরগের রক্তপালক।
লেগিনস্ --দাঁতে ফুটো...মনে পড়ে
নীলকমলের পুকুরের জলে : প্রস্ফুটিত দুটি লাল কমলের রক্ত-জমাট জামা
---তখনও ভাসছে আমাদের মতো দুটো, ছিন্ন
ভিন্ন ...ভিখিরিকে মনে পড়ে
পাথর
জন্ম
উত্তরে পাহাড়ি -হাওয়ায় দোলে --তেলরংয়ে আঁকা তোমাদের -বাড়ি...
কঞ্চির-বেড়াঘেরা । সীমান্তের গ্রাম
।
খাপরা-টালিতে ছাওয়া এককামরা ঘর...
গোবরে নিকানো উঠোন ; নামমাত্র ভাই থাকে
সেনাছাউনিতে...
দুগ্গা-লাল টকটকে শাড়ি কে পরে
বাড়িতে !
মা'র বিবাহের তাঁত--এতদিনে তোমার জিম্মায়
কাল কোনো স্পেশাল-ডে, ছিল বুঝি--তাই
অত লালরং দুলছে উঠোন-দাঁড়ে খুশির হাওয়ায়...
আমি কবে উত্তরের-পাহাড় হয়ে গেছি
---তুমি আমায় বলোনি
নিখোঁজ
একাদশী
[উৎসর্গ : * দুর্গা-কাঠামো তুলতে গিয়ে , তলিয়ে যাওয়া ও বালক...]
বীণা পেয়েছিলি বলে গাঢ় অভিমান
গঙ্গা নিল দেবীর বাহন...
চিংড়িদল-জলবোতলব্রাশ-- খোঁচা খেতে
খেতে তুই যত ডুবে যাস
--সাদরে ডেকে নেয় অক্সিজেন গাছ , ডুবিলতা...
শ্যাওলায় মাখা মাখি পাকা করমচার মতো
বিস্ফারিত লাল চোখ...পিঠে নিল দেবীরবাহন
তোর সামনে ভেলা--ভাসে লখিনদর...
তোকে লাগে 'নালক'-হিদয়
ক্লাসের বাসন্তী'দি কত যত্নে শোনাতেন --
অবন ঠাকুর... মিটল তো শখ ! দেবীর বাহন
পিঠে ভেসে যাস্ ঘাটে ও বেঘাটে...
সামনেই গন্ধেশ্বরী মাইলখানেক
হবে
পানমৌরি ঘাট : আজও বিসর্জন জারি
সারিবদ্ধ দেবীরা দাঁড়িয়ে ঘাটে...
সবুজ শরীরেরা ঘিরে ধরে তোকে আহ্লাদে
হেসে
ও বাগদি-বালক ---আমাকে চেয়েই তোর এত
অভিমান !
চোখ তোল, দেখ তুই চিরসবুজের দেশে...
--------------------------------------
ছবি ঋণ: তাপস দাস
0 মন্তব্যসমূহ