লাশ
গতকাল বিকেল থেকে তুমুল ঝড় বৃষ্টিতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার
সুন্দরবন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । বড়ো বড়ো গাছ ভেঙে পড়ে রাস্তা বন্ধ
হয়ে গেছে । সন্ধ্যার পরে ঝড়ের তাণ্ডব থামতেই গাছ কেটে রাস্তা সাফাইয়ের কাজে
নেমেছে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও পৌরসভার কর্মীরা । নোদাখালি অঞ্চলে রাস্তার
গাছ সরাতে গিয়ে হতবাক কর্মীদের নজরে পড়ে ভাঙাচোরা সাইকেলসহ পঞ্চাশোর্ধ্ব এক
ব্যক্তির মৃতদেহ ।সন্ধ্যা তখন গাঢ় হয়েছে । কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে একটা মেটাডোর
ডেকে লাশ তুলে দেয় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে । মেটাডোর কিছুদূর যাবার পর হেল্পার
ড্রাইভারকে বলে, গুরু চলো একটু চা খেয়ে আসি । একটা চায়ের দোকান দেখে ড্রাইভার গাড়ি থামায় । তারপর হেল্পারকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য দূরের চায়ের দোকানে যায়।জগ থেকে ঢক ঢক করে
খানিকটা জল খেয়ে দুজনে চায়ের অপেক্ষায় বেঞ্চে গিয়ে বসে ।
ঐ রাস্তাতেই এক যুবক অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল কোন যানবাহনের। রাত
অনেক হয়েছে। কিন্তু কোথায় যানবাহন? কোথাও কিচ্ছু নেই। মেটাডোরটা
পড়ে আছে খালি আর ড্রাইভারও চা খেতে ব্যস্ত। আপাতত সে ঠিক করে এই সুযোগে মেটাডোরে উঠে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যা ভাবা তাই করা। সে অন্ধকারে মেটাডোরে
উঠে লাশটার পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। ড্রাইভার এসে যথারীতি গাড়ি ছেড়ে দেয় । গাড়ি
চলছে দ্রুত গতিতে । রাত
প্রায় বারোটা। দুদিকে ধূ ধূ মাঠ। ষুবকটির খুব
ইচ্ছে হয় একটা সিগারেট ধরাবার । সে উঠে বসে । প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে।
দেশলাই বের করে । একটা সিগারেট ধরায় । টানতে থাকে । হঠাৎই হেল্পারের নজরে পড়ে
লাশটা উঠে বসে সিগারেট টানছে । সে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে ড্রাইভারকে বলে, গুরু দেখো
লাশটা উঠে বসে সিগারেট টানছে । ড্রাইভার
কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না । মানছে না ওর কথা। হেল্পার তখন নিরুপায় হয়ে ড্রাইভারকে বলে, ঠিক আছে গাড়ি থামিয়ে
দেখো। গাড়ি থামিয়ে দুজনের তো চোখ ছানাবড়া। ওদিকে যুবকটি চিল্লিয়ে বলে, কী হল? গাড়ি থামালে কেন ? এই কথা শুনেই ড্রাইভার আর হেল্পার দুজনেই মাঠ বরাবর প্রাণপণে ছুট
লাগায়। যুবকটি দুজনকে দৌড়তে
দেখে ওদের পিছু নেয়। হেল্পার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন দিকে এক ঝলক তাকিয়েই ড্রাইভারকে বলে, ওস্তাদ আজ আর বাঁচার
কোন উপায় নেই। লাশটা আমাদের পিছু
নিয়েছে ।
সুধাংশুরঞ্জন সাহা