সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

শান্তা মুখোপাধ্যায়







হুতোমের ভোটযোগ





        সক্কাল সক্কাল হুতোমের মোবাইল বেজে উঠল মুঠোফোনে হুতোম এখন রীতিমতো তাল দোরস্ত হুতোম দেখলেন অনন্ত বাক্য বিস্তার হুতোম ফোন ধরতেই অনন্ত বলল, “ভোটপুজো দেকতে যাবেন নাকি?” হুতোম ফ্যাকাল্টি ইম্প্রুভমেন্ট প্রোগ্রামে এসে ইস্তক মর্ত্যের জ্ঞানলাভে আগ্রহী হুতোম এককথায় রাজী অনন্ত বলল, “আমি ভোট দিতে যাব আপনি আমার সঙ্গে চলুন মায়াশরীরে সশরীরে গেলে তো ঢুকতে দেবে না!” হুতোম বললেন, “কেন?” অনন্ত বলল, “আপনার ভোটার কার্ড আচে?” হুতোম মাথা নাড়েন অনন্ত বলে, “আপনি এতটাই ইন্টারেস্টেড জানলে করিয়ে দেওয়া যেত একটা, পুঁটেদাকে ধরে খুব একটা খচ্চা হত তাও না, তবে একন আর হবে নাহুতোম মায়াশরীরে অনন্তর পাশে পাশে চললেন অনন্ত বলল, “সামনের ওই ইস্কুলবাড়িটা আজকের ভোট গ্রহন কেন্দ্রমানে বুথহুতোম দেখলেন বুথের সামনে লম্বা লাইন চাঁদিফাটা রোদে চাঁদি বাঁচানোর জন্য ছাতা বার করে গলতে গলতে দাঁড়িয়ে আছে সবাই মহিলারা একটু তো সাজুগুজু করে আসবেনই বগলকাটা জামার সীমারেখা ছাড়িয়ে কিম্বা কেপ্রির প্রান্তসীমা বরবর ঘামের রেখা আগ্রাসী অভিযান চালাচ্ছে সানস্ক্রিন পুরোনো বাড়ির দেওয়ালের পলেস্তারা খসার মত খসে পড়ছে হুতোম টুক করে মায়াশরীরে ভেতরে ঢুকে গেলেন টিপছাপ থেকে বোতাম টেপা, বাথরুম থেকে ইঁদুরসাম্রাজ্য সবটাই মুখস্থ করে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন অনন্ত ফিরবে

        অনন্ত ফিরলে হুতোম বললেন, “বাবু, এখানে ভোট সারাদিন হবে তো? “ অনন্ত মাথা নাড়ে হুতোম বলেন, “কিন্তু বাথরুমটাউঃটেঁকা যাচ্ছে না! আর ওদিকে ধেড়ে ইঁদুর বুক ফুলিয়ে ঘুরছে, দেকলে?” অনন্ত বলল, “ইঁদুর তো থাকবেই! ওটা মিড ডে মিলের ঘর তো! আর বাথরুম অমন হয় এ কি তোমাদের স্বর্গ পেয়েছ?” হুতোম একটু দমে গিয়ে প্রসঙ্গান্তরে যান বলেন, “বাবু, তুমি বলচিলে একন একানে সবাই সাক্ষর, তা টিপছাপ কেন?” অনন্ত বলল, “আরে, সই করালে কত সময় লাগবে বলুন তো? এ তো ঘপাত করে হয়ে গেল!” হুতোম বললেন, “তোমার আগে যে পরপর তিনজন তিননম্বর বোতাম টিপল, আর তুমি দুনম্বর বোতাম টিপলে, তাহলে তিননম্বর প্রার্থীই জিতবে তো? “ অনন্ত বলে, “এই আমি দুনম্বর প্রার্থীকে দিইচি, তুমি দেকলে? খবরদার কাউক্ষে বলবে না কিন্তু!” উত্তেজনায় অনন্ত তুমিতে নেমে আসে হুতোম বললেন, “আরে না, না আর বললেও চিত্রগুপ্ত মনে রাখতে পারবে নাএকটু আশ্বস্ত হয়ে অনন্ত বলল, “চারজনের ভোট দেকেই তুমি বৃহত্তম গণতন্ত্রে কে জিতবে ঠিক করবে? হা হা হা! এর মদ্যে তো ধরলেই না যারা ভোট দিতে আসতে পারল না তাদের ভোটের কি হল, যাদের বারবার ছবি দেকিয়েও বোজানো যায় নি কাকে ভোট দেবে, তাদের ভোটটা কি হল, ভোটেরদিন গ্রামে গঞ্জে যারা ঘর থেবেরোনোর হুকুম পেল না, তাদের ভোটটা কি হল……আবার ভোটের তিনদিন আগে সংঘর্ষে মারা  গেচে যে ছোটা খোকন, সে মায়াশরীরে এসে ভোটটা দিল কিনা, পল্টুর ঠাকুমা মারা গেছেন তিরাশি সালে, তবু নিয়মিত ভোট দেন, সেটাও হিসাবে ধরতে হবে…… তারপর ধর  কিছু কিছু জায়গায় পাব্লিক বহুত টেঁটিয়া আচে, সেসব জায়গায় সক্কাল সক্কাল তাদের হয়ে ভূতপ্রেতের দলদিল মাঙ্গে মোরস্কিমে ভোট দিয়ে যায় সেসব ধরতে হবে………” হুতোম বলেলন, “থাক, থাক, আমার গা গুলচ্চে খুব গোলমেলে বোজা বুজতে পারলুমঅনন্ত বাড়ির পথ ধরে

        ফেরার পথে অনন্ত বলে, “প্যারামাউন্টের শরবত খাবে নাকি?” হুতোমের তো ছাতি তখন থেকেই শুকিয়ে কাঠ! হোক না মায়া শরীর! তবু একটু মায়া থাকবে না! শরবত খেতে খেতে হুতোম বললেন, “ভোটের প্রচার তো কদিন থেই দেকচি মারামারি, আকচা আকচি, জেলেপাড়ার সং কম দেকলুম নি! তবু পাঁজবচ্চর অন্তর অন্তর দেশের পোধান দেশের মানুষই ঠিক করবে, এটা বিশাল ব্যাপার! স্বর্গে কেউ ভাবতে পারবে? ইন্দ্র সেই কবে থেরাজা হয়ে বসে ইন্টু মিন্টু করে বেরাচ্চে! উন্নয়ন ফুন্নয়ন কেউ ভাবচে?” অনন্ত বলল, “মর্ত্যে উন্নয়ন হচ্চে বই কি! স্বপ্নের রঙ যেমন নীল, বিষাদের কালো, তেমনি উন্নয়নের রঙ নীল সাদা নীল সাদা দেওয়ালের ব্যাকগ্রাউন্ডে শিল্পের জোয়ার! চপ শিল্প, চা শিল্প…… এর মদ্যে শিক্ষা ফিক্ষার কোন দরকার নেই তাই উচ্চশিক্ষায় ফান্ড কাট কাট কটাস! শুধু গবেষনা করছিল যেকটা আকাট, তাও বিশুদ্ধ বিজ্ঞানে, তাদের মাইনেও কাট! যেসব ছোঁড়াগুলো আরো পড়বে বলে মালকোঁচা মারচিল, থুড়ি প্যান্ট গোটাচ্ছিল, তাদের ফেলশিপ কাট! হুঁ হুঁ বাওয়া ওসব ফালতুবাজি করে কিচ্ছু হবে না! রিসার্চ করো তো আয়সা কি পরশু প্রোডাক্ট মার্কেটে বেচা যাবে তবে ফান্ড! ফান্ডামেন্টাল জ্ঞানটাই নেই, গবেষণা করবে! বেওসা চাই, বেওসা! শিক্ষা ফিক্ষায় কুছু হবে না বেওসা হবে, মাতরের মূর্তি নাদান বচ্চেলোগ ভেঙে দিলে আবার মূর্তি হবে, পঞ্চধাতুর মূর্তি হবে, যোগা হবে, ধ্যান হবে, যোগনয়নে উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করে উজাড়করা মনের কথা শুনে উদবাহু হয়ে নৃত্য করতে করতে প্রেমপ্লাবনে ভেসে ভুলে যাবে ক্ষুধা তৃষ্ণার কথা! তকন ছবি উটবে খচাস খচাস! জিনা ইসিকি নাম হ্যায়!” হুতোম বুজেচি কি বুজিনিভাবতে ভাবতে শরবতটা শেষ করেন করে বোঝেন শরবতটা মর্ত্যের ঘোল 



শান্তা মুখোপাধ্যায়