কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিঁড়ির বন্ধুদের উৎসর্গীকৃত আরব্যরজনী। নব্বইয়ের কবি সাম্য। সাম্যব্রত জোয়ারদার। মোট ২৪ টি কবিতার সংকলন। ৬৪ আয়না। জোড় ও বিজোড় আয়না। এক একটি লাইন এক একটি গ্রস্ত আয়না। সমাজ প্রতিবিম্বিত। সংসার প্রতিবিম্বিত। সম্পর্ক প্রতিবিম্বিত। দীর্ঘ এবং দীর্ঘতম। লাল আলোর ধারাভাষ্যে ভরপুর কথনমালা দিয়ে ভিয়েন করা শব্দেরা যেন যৌথ খামারে আধোঘুমে আধো চেতনায় তন্ময়। নিটোল এক জাদুদন্ডের মন্তাজে হড় হড় করে শব্দরা নেমে আসছে লাল ধারনা থেকে। ভাষ্যের আঙ্গীক তারপর খোলস ত্যাগের মত বাতিল করে ঢুকে পড়ছে মধ্যবিত্তের মগজে। এ এক তন্ময় ওলোট পালোট।"---সঙ্গমকালীন তার খদ্দের সেলুলার ফোনে কথা বলছেন পরস্ত্রীর সঙ্গে। -----"পৃষ্ঠা ২৮,বেশ্যাবন্দনা। এক কথায় "কাক হয়ে উড়ে গেল মগজের সারাৎসার খুটে"। এই একদৃশ্য রোমন্থন। প্রাচীন ও আধুনিক উত্তরভূমিতে পা রেখে শব্দ নির্ধারণের মাত্রা মেপে মেপে নির্মিত বেশ্যাকাব্য। নির্মাণ ভঙ্গীটি গত শতাব্দীর শেষ দশকে।নিটোল চিত্রময়তা। অবিভাজ্য ইঙ্গিতে জন্মবীজের কোঁচড় থেকে নাড়ি ছিঁড়ে বের করে আনে একরাশ ঘৃণা আর চিরাচরিত বিপ্রতীপ কামের ফসিল। ইন্দ্রিয় ঘনত্ব যেন থক -থকে কাই। চিরাচরিত হনন কাব্যপাঠককে বিমূঢ় করে। এক প্রেত বিশ্বের কাছে নিজেকে নিংড়ে জিজ্ঞাসিত হয় " শুধু সমুদ্র নয়,হে বিষের শহর তোমাকেও বুঝতে চেয়েছিলাম। পৃষ্ঠা ১২ বাংলা।: শক্তি -বিনয় -জয় পরবর্তী মাতৃভাষায় প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন নাম সাম্যব্রত জোয়ারদার। নির্মাণ,ঋজু কথন লাউডগা সাপের মত তীব্র চলন। খুব সহজে গাছে গাছে মিশে থাকে।ব্যক্তি মজ্জা থেকে স্খলিত সময়ের সোসিও ইকনমি আরব্যরজনী। আমাদের চারপাশে ধ্বস্ত বিবেকের জলোচ্ছ্বাস। মন্তাজগুলো আলোকিত কুচো নক্ষত্রের মত মেধায় আঘাত হানে উপুর্যপরি। সাম্যের কবিতা ব্যর্থ সম্পর্কের, ঝুল কালি সুযোগী মানুষের, অপরিমিতি বোধে কবিতার ছত্রে ছত্রে মর্মরিত। "পিটকে কাকে পিন খোঁচা মারছে, হি হি কত রক্ত পড়েছে /পারলে ওগো রক্ত চুষে খাই,রক্তেরও কি খাদ্য গুন আছে" পৃষ্ঠা ৪১ " গন্ধে মাত হয়ে ঘোড়া নৌকা কাত হয়ে /এগিয়ে চলেছে বাজার ভোজ সভার দিকে"পৃষ্ঠা ৩৭। পরিমিতি সম্পন্নতায় ভরা "হয়তো বা বসে আছে এনামেল বটের মত/সাড়া নেই শব্দ নেই নতজানু স্তব্ধ তথাগত"পৃষ্ঠা ৫৯ দেশ। পাঠক এক হাহাকারের মধ্যে ডুবে যায়। " নিকটে শায়িত পড়ে রক্তমালা তার মৃতদেহ /না তার ঠিকানা নেই গন্তব্য ছিলনা কোনদিন।" আমাদের সামাজিক গন্তব্যগুলো ক্রমাগত ঘূর্ণাবর্তে লীন হয়ে যাচ্ছে আমরা তার আরব্য রাত্রে পোড়া চিহ্ন বর্ণনা করে চলি। জাদুবাস্তবতায় ভরা ডাইনোসোরের কঙ্কাল। মনস্কামনার বাটখারায় মেপে নেওয়া আধুনিক জীবন। নির্বিকার ভ্রামনিকের মত। এই আরব্যরজনী আত্মধংস ও কারুবাসনার অন্য পীঠ।কোহল সন্ধানী পাঠক ঠিক চিনে নিয়ে পড়ে ফেলবেন। তবে পরিশেষে সব ধারাভাষ্যের একটা সীমা থাকে। আঁধার ফিরলে পাঠক কি চলে যাবে অন্য মৌতাতে। বইটির টেকনিক্যাল ত্রুটি চোখে লাগে।যার দায় সপ্তর্ষি প্রকাশনার।