গুচ্ছ কবিতা
১
অতীত-জ্বর
মনখারাপের
বিষণ্ণ মেঘের নীচে
অনুভূতির
ঝরনাগুলি নাচে
চুপচাপ
বৃক্ষদিন
হাওয়ার কাছে
মন খুলে দেয়
পাতায় পাতায়
কানাকানি
ধুলোরাস্তায়
গোরুর গাড়ি
আমার কৈশোর
চেপে আছে
যাচ্ছে কোথায়?কোথায় যায় রোজ?
খেলা ফেলে
নতুন খেলায়
হলুদ জামা,ছেঁড়া জুতো
শ্লেট-পেনসিল,বর্ণমালা
কৌতূহলী
দুঃখী চোখ.....
২
শূন্যে চেয়ে থাকি
বিকেল শীতের
খড় শুকিয়ে নিতে থাকে
রোদের ওড়না
মেলে দাঁড়িয়ে থাকে গাছ
শালিক পাখির
ঠোঁটে নরম ইশারা
ঘুরেফিরে কার
ছায়া আসে?
মুঠো খুলি
স্মৃতির স্পর্শগুলি
শিহরন ছড়ায়
বালিপথ জুড়ে
সময়ের পদচিহ্ন আঁকা
শেষ নিশানায়
জলপাখি
ডুব মারে
কী মাছ? কী মাছ ওর ঠোঁটে?
সাম্রাজ্যের
কারুকাজগুলি জলের ওপরে দুলে ওঠে
তীরে কার
ছায়ার আড়ালে শূন্যে চেয়ে থাকি
উন্মুখ দিগন্তের পারে?
৩
স্মৃতিরা সংকোচ নিয়ে বসে আছে
এখানে
চেঁচাতে পারি না, কাঁদতে
পারি না
অসহ্য রোজ
কান ধরে ওঠ-বস করায়
অপমান রোজ
আদর করে যায়
একটু একটু
করে কাপড় খুলতে খুলতে
গ্রামও এখন
শহর; রঙিন আর ঝলমলে ইশারায়
দু-চাকা
চারচাকা এসে ঘনঘন হর্ন বাজায়
রাস্তার ধার
ঘেঁষে কত দোকান
অনলাইনের
বিজ্ঞাপন হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকে
বিরাট আয়নার
সামনে বসে সেলুনে চুল কাটায়
শালুক ফুল
কোথায় গেছে?এই
পুকুর সাঁতার শেখাত
তীরে গৌরী
দাঁড়াত, সবুজ ফ্রকের সকাল…
বিকেলে সারি
সারি তালবনে ধূপছায়া শাড়ি
কলসি দোলাত
কাঁখে
ডাহুক পাখির
ডাকে ভোর ভোর ঘুম ভাঙা চোখে খেজুর ঝরিয়ে ফিরতাম;
দুই চপ্পলে
দু'রকম ফিতে, তাই
চলে যেত
শীত নামলে
গলায় বেড় দিয়ে বাঁধা মায়ের সুতি শাড়ি
ধুলো এবং ধান,গরুর গাড়িতে চেপে আসত হই হই
নবান্নে
আনন্দ ভাগ করে খেত কলাপাতায়
কোথা গেল
সেসব ছিপের দিন? মাছ
নেই, মাছ নেই
পুকুরও এখন
পাকা বাড়ি!
শালিক পাখিরা
আর উঠোনে আসে না
পুঁইমাচা নেই; জবা বেলি চামেলিরা সবাই বিবাহিতা!
স্মৃতিরা
সংকোচ নিয়ে বসে আছে না লেখা বৃহৎ শূন্য খাতায়!
৪
সেও সরস্বতী
আমি তাকে
প্রার্থনা সভায় দেখি
আঁধারের
বিকল্প আলো
অথবা মনের
সূর্য, দু'বেলাই
পূজা প্রত্যাশী
মৃদু ঘ্রাণ
সূক্ষ্ম অনুভবে, শব্দে
চরিতার্থ চায়
রাঙা মুখ
সুকণ্ঠ বীণার ঐশ্বর্যে কেঁপে ওঠে
সারাদিন মগ্ন
কাব্যপাঠ
শুনতে শুনতে
অতীত বর্তমান
শুনতে শুনতে
মহাকাল এসে কথা বলে
পৃথিবীর
অনন্ত সময় এবং অনন্ত সীমানা
তার চোখের
দিকে চেয়ে থাকি
তার নিগূঢ়
শ্লোকের ভেতর মর্ম সঞ্চার
৫
পর্যবেক্ষণ
কার সবুজ
চোখের ভেতর এমন নক্ষত্র ফুটে ওঠে
সিঁড়ি ভেঙে
সিঁড়ি ভেঙে আকাশের ছাদে
কে শাড়ি
মেলে দিচ্ছে রোজ
তাকে দেখি আর
শান্ত আয়নাখানা ধরে রাখি
দুপুর আসে
ভাতের গন্ধ নিয়ে
বিকেল আসে জলের
কলসি নিয়ে
গোধূলিবাউল
আসে একতারা হাতে
প্রতিটি
যোগ্যমুহূর্তগুলি থেকে বিষাদের অঙ্ক
শিখে নিই
তারপর মুখ
দেখতে দেখতে রাত্রির পাখি ডাকে
আসে
আত্মজ্ঞান ভোর
0 মন্তব্যসমূহ