সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

মন্দিরা ঘোষ

 


গুচ্ছ কবিতা


মেঘলগ্ন

 


 

১.

মেঘলগ্নে রোমন্থক হয়ে উঠছে জল।জলেরও  তো স্বস্তি পায়

দু-দণ্ড শান্তি শিহর।এ কথা জানে শুধু শোকের কোহল

জলে ভাসে অকথা কুকথার সমবায়।শব কাঠে 

আগুনের  দাউ দাউ ।জ্বলে আবার নেভে।ছাইয়ের অস্মিতা 

ভেসে ভেসে শূন্য হয় শোকদেহ।জলের অশৌচে যেমন 

জলই শুদ্ধশীল। জরাটুকু চেটে খায় মহাঘোরা কালরাত্রি

শোক-জল মাখামাখি  অনন্তের রশি ধরে থাকে চাঁদ। 

 

২.

রাহুদিনে টুপ টুপ জলের ধাই।নুনখাকী রাক্ষসী 

বসে বসে চোখ খায়,মন খায়। ভূমার আদিতে খোলা 

ভেষজ যৌনতা।জলের কুপথ। আঁশটে  কানাকানি নিয়ে

 ধুয়ো তোলে ধীবর সকাল। জমদগ্নি জল শুষে নেয়

 মাটির জ্বর, রতিপথের মেঘ, দুখিনীর ছেঁড়া কানি

 

পদ্ম সায়রে জলের হিন্দোল। জলের কানাই। 

ভেসে যায়  জলশূন্য রাধার রেশম

  

৩.

অদূরে ধুমুল দিন।সানাইয়ের গৎ। সুরে সুরে বোনা আকাশের চর। 

রাতের বাজুতে জলময়ুরের কল্কা।সায়রে ফুটেছে রমণআকুল কুবলয়

উড়ে আসে মৃগনাভি মেঘ। বৃষ্টিপ্রজাপতি সাতসুরের নাদ মেলে দেয় 

বসুধার বুকে। 

ধীবরকন্যার বন্ধনির নীচে লুকোনো জুঁইয়ের আতর।প্রেমিকটি যে

 বড়ই দস্যুমন!ছিঁড়ে নেয় বৃন্তধার।সেইসব আয়াতের মুখে আজ

 অশ্বিনীশিশির। চোখ পেতে আছে আশ্বিনমাঠের বেলা।আল ভেঙে

 ভাসছে চৌপাহাড়ির শালিধানের ঘ্রাণ

 শস্য  ভরে ওঠার গানে  কৃষককন্যা ঘরে তুলছে ধানের মুদ্রা

নতুনের ফুলকি উড়ছে মাঝগাঙে  আর  বকঠুঁটো মাছের  ঝাঁক। 

 দাঁড়ের আয়না তাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্বাসামেঘের ছায়া

 

৪.

 এবছর  শ্রাবণ কৃপণস্বভাবা।  জলশূন্য গাঙ্গিনীর গর্ভ ভেঙে

 তাই বালির নৌকা ভাসে।চিক চিকে মরীচিকার ছায়া !

 মীনরাশি ফুলে আছে শামুকভাঙা অভিমানে

 মরচে রোদে বালি ভেঙে ভেঙে  হেঁটে  যায় ভোলা বহুরূপী

 দশভুজা সাজ।দু আঙুলে পুড়ছে পিয়ালপাতার আগুন। 

পিছনে বাহন পোষ্যটি। 

 নেশা ছড়ানো মেঘহীন গঞ্জিকা আকাশে তবু খুশির ভান। 

মেয়ে উমা আসছে গজে। গতবারের মতো  মড়ক নয়

শস্যপূর্ণ ধরা। লেখা আছে বেণীমাধব শীলের  ফুলপঞ্জিকায়

 

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ