উত্তেজনায় গরম কফিটাতে চুমুক দিয়েই রি রি করে উঠলেন পবন। টেবিলে
তার উল্টোদিকে বসে থাকা গৌরী কি করবেন বুঝতে না পেরে জলের গ্লাসটা ঠেসে ধরলেন
পবনের মুখে। তাতে আরও বিরক্ত হয়ে তেতে উঠলেন পবন, হয়ত তুমুল একটা ঝড় বয়ে যেত গৌরীর উপর দিয়ে, যদি না ঠিক সেই সময় পবনের একটা ফোন আসতো।
আসছে ভোটে পবনের টিকিট পাবার বিরাট সম্ভাবনা। সেই কথাই বোঝাচ্ছিলেন গৌরীকে। এমনিতে পবন গৌরীকে বেশ ভালোবাসলেও
গৌরীর রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। এই তো, মিনিট দুই আগে, আলোচনার
সময়, গৌরীকে "পলিটিক্যালী ইল্লিটারেট" বলে, বোঝাচ্ছিলেন, কেন পবনের এবার
টিকিটটা বাঁধা।
-- আর মিনিট দশেক পরেই নাম ঘোষণা করা হবে, বুঝলে! বাবলু ফোন
করেছিল, বললো, আমার নামটা সবার উপরে আছে, আর আমার ধারে কাছে কেউ নেই! বলছিলাম না
তোমাকে -- এবার শুধু দেখ, একবার এম এল এ হই, মন্ত্রী হই, লক্ষ লক্ষ বছর আমার নামটা
মানুষের মুখে মুখে থাকবে, বুঝলে? আর তুমি কি
বুঝবে? বিজ্ঞানের দিদিমণি, তোমার মাথায় তো শুধু বিজ্ঞান আর রান্নাঘর! ওসব করে কিছু
হয়?
পবনের সমস্ত মুখমন্ডল থেকে যেন এক অদ্ভুত আলো ছিটকে পড়ছিল। গৌরী
সেদিকে একটু তাকিয়ে মুখ নামিয়ে আবার কফিটা খেতে লাগলেন।
কাপটাতে একটা দীর্ঘ চুমুক দিয়ে সবে টেবিলে নামাতে যাবেন, আবার বেজে
উঠলো ফোনটা, পবন কানে ধরলেন,
-- হ্যালো...
গৌরী লক্ষ্য করলেন, পবনের মুখের আলোটা ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে যেন,
একটা গাঢ় অন্ধকার নেমে আসছে দ্রুত।
কয়েক সেকেন্ড পর, পবন মোবাইলটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে ফেলে ধপ করে
চেয়ারের উপর বসে পড়লেন। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-- নাহ, দিল না আমাকে! এত খাটলাম, দিনরাত এক করে দিলাম, এত পয়সা
খরচা করলাম, তাও -- বাচ্চারা ...
প্রায় কেঁদেই ফেললেন পবন।
কিছুক্ষণ এভাবে চুপচাপ কেটে গেল। নিস্তব্ধতা ভেঙে কথা বললেন
গৌরী,
-- দেখো, রেগে মেগে আবার দুম করে দল বদলে ফেলো না যেন, আগের বার
টিকিট না পেয়ে ওই দলটা ছেড়ে এই দলে এলে, এবার আবার বদলে অন্য দলে গেলে ওই একই রকম
হবে, বুঝলে! আমাদের বিজ্ঞানে 'ক্যাটালিস্ট' বলে একটা কথা আছে বুঝলে, যারা
কেমিক্যাল রিয়াকশনের গতি বাড়ায়, কিন্তু নিজেরা একদম একই রকম থাকে। তোমার অবস্থা ওই
ক্যাটালিস্টের মত হয়েছে।
একটু চুপ করে থেকে গৌরী আবার বললেন,
-- নাও এবার কফিটা খেয়ে নাও। এক কাপ কফি এখানে পঁচাত্তর টাকা! নষ্ট
করলে হবে না। নাও, খেয়ে নিয়ে উঠে পড়! না হলে এবার আমি তোমাকে বদলে ফেলবো।
0 মন্তব্যসমূহ