সোনালি সেফ্টিপিন ও অন্যান্য
কবিতা
এক।
ছোট্ট একটা সোনালি রঙের
সেফ্টিপিন দিয়ে
আটকাতে চেয়েছি।
যেমন তুমি টাঙ্গাইলের ডুরে
শাড়ি আটকে রাখো
তোমার স্নেহশীল ঢালু কাঁধে
খসে গেছে নিজস্ব নিয়মে সম্পর্কের
পলেস্তার।
দুই।
পিংপং বল খেলা বা দেখার
মধ্যে আমি কোন
পার্থক্য রেখা টানি না।
দু'টিই আমাকে চঞ্চল করে।
খেলিও বটে
দেখিও বটে
তাই বলে আমি কোন সম্পর্কের
পিংপং বল চাই না।
তিন।
গ্যাস বার্নারের নীল আলোর
বিচ্ছুরণ দেখলেই আমার
কাকাতোয়ার কথা মনে পড়ে।
সে ছিল আমার পোষ্য কাকাতোয়া।
শেকলবিহীন দাঁড়ে দাঁড় কামড়ে
বসে
নখে ছড়াতো মুসরি ডাল
আর জব
আর চালের খুদ
গ্যাসবার্নার গ্যাসবার্নারের
মতো একবার নিভে গেলে
নি:শেষে বিভাজ্যের মতো
নিভে যায় নীল আলোর কম্পিত
বিচ্ছুরণ।
কাকাতোয়া যেমন দাঁড় ভেঙে
একদা উধাও।
চুলা নিভে গেলেও উত্তাপ
থাকে
আঁচ থাকে
মুখ গহ্বর একটু ফুলিয়ে ফু
দিলেই
ফুয়ের ভেতর থাকে দগদগে আগুন।
চার।
যদিও টুং টাং টুং টাং ভাঙলেই
চারখণ্ড
তবুও কাঁচের একগাছি
চুড়ির নিকট আমি কী ভীষণ
নতজানু!
তোমার প্রবল নিত্য উপস্থিতি
জানিয়ে দেবার আমার একান্ত
গুপ্তচর।
পাঁচ।
একবার বইয়ের ভাঁজে একটা
সবুজ পাতা
রেখে গেছো তুমি।
সদ্য ছেঁড়া।অপরিচিত পাতা।
আমার কোন চেনাজানা পাতা
হলে চিনতাম।
সাদা ঘণ কস আজও পেল্টে আছে
আমার কালো কালো অক্ষরের
শরীরে।
কালোতে সাদা মানালেও
আজো জানি না কোন গাছে জন্মেছে এমন
অলৌকিক পাতা।
গাছ থেকে ছিন্ন হলেই পাতারা
বোবা হয়ে যায়।
পাতার এপিঠে ওপিঠে থাকে
শুধু কতিপয় ফসিল।
পাতার গভীরে খনন করব বলে
তোমাকে খুঁজছি।
ছয়।
আধখানা বিস্কুট চায়ের কাপে
পড়ে গেলে
একবার আঙুল বাঁকিয়ে
চেষ্টা করি বটে কিন্তু গরমের
ভাপে তাপে
সরে এসে ফু দিয়ে চুমুক
দেয়াই সহজ।
সব জলে নামতে নেই।
সব জলে আচমন চলে না।
জলে যদি ভাসে লোভ ভাসুক
তার ইচ্ছা মতো।
সাত।
মাথা গলিয়ে গেঞ্জি বুকের
কাছে দলা গাঁকিয়ে রেখেছি।
নামাতে ভুলে গেছি।
কী যেন কী যেন এক
অস্থির অস্বস্তি সব কিছু
বেখেয়াল করে দিচ্ছে।
হাঁটছি বটে তবু হাঁটছি
না।
চোখ ঝুলে আছে।
মনও সুইং ভোটার
আকশি দিয়ে অস্বস্তি পেড়ে
আনব তেমন
আকশি পাচ্ছি না।
ময়লা অথবা ছেঁড়া নোট হঠাৎ
হাতে চলে এলে
কাউকে গছাতে না পারলে
বুক পকেটে যেমন
খচখচ করে তেমনই অব্যক্ত
এক অস্বস্তি।
আছেন---আছেন বটে
গোপনে গুপ্ত
ঘাতক---
কেবলই খালয়ের ভেতর জিয়ল
মাছের মতো
খলবল খলবল করতে করতে
লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে
আর নামছে।
আট।
আমি যে কোন স্টপেজে নেমে
যেতে পারি।
যদিও সব স্টপেজ আমার নয়।
যে কোন স্টপেজে নামি না
কেন
হাঁটতে হাঁটতে বুঝি এ আমার
চেনাজানা শহর।
এই জনপদে আমি এইবার প্রথম
নামার আগেও
এখানে এসেছিলাম।
এই শহরের রঙ আর ধুলা এখনো
স্মৃতি আর দেহে লেগে আছে।
এই যে ভাঙা হলুদ পোড়ো বাড়িটি
দেখছেন
এইখানে এক আলতা আঁকা রাঙা
পায়ে
আমি হাত রেখেছিলাম
একদা।
হাস্যমুখী বাটার মতো রমনী
আমার চিবুক ছুয়ে ছিল।
এলোমেলো করে দিয়েছিল আমার
পরিপাটি চুল।
অনেক স্টপেজে একই
গন্ধ পেলেও
সব স্টপেজে তোমাকে পাইনি।
তোমার রঙটা আলাদা।
তোমার গন্ধটা গেরস্থালী।
নয়।
আমি জানি বিড়ালের ডাকে এক
ধরনের গন্ধ আছে।
আছে
রঙের ছটাও।
জানালা গলিয়ে বিছনায় ঝাপিয়ে
পড়ার সময় বিড়ালের
কতটুকু উত্তেজনা ছিল
সেটি আমি জানি না।
শুধু গতি আর লক্ষ্য দেখেছি।
একবার ক্যানভাসে রঙ আর গন্ধ
মিশিয়ে চার পা একত্রে করে
বসা
বিড়ালের জবুথবু দেহভাঁজে
কতগুণ বিনয় আছে
মাপতে চেয়েছি
পারিনি।
দশ।
সরল রৈখিক পথে হাঁটতে চাই
না আমি।
যে তুমি বৃত্তের বেড়
যে তুমি সকল কিছু
সেই তুমি আমাকে নিয়েই তুমি
এক সমগ্র তুমি।
সেই তুমি আমার আরাধ্য পরমাপ্রকৃতি
সেই পথে হাঁটিতেছি আমার
ভেতর
তোমাকে পাবো বলে।
0 মন্তব্যসমূহ