সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

কুশল ভৌমিক


আদিগন্ত ফসলের কবিতা


আমার ঠাকুরদা একজন কৃষক ছিলেন 
মাটিগন্ধা হাতে তিনি শস্য ফলাতেন 
ধানের কাছে হৃৎপিণ্ড সমর্পণ করে 
তিনি শিশুর সারল্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন
প্রতিটি ধান তখন কবিতা হয়ে উঠতো
আদিগন্ত মাঠ তখন কবিতার খাতা।

ঠাকুরদার মতো অমন কবি হয়ে উঠতে 
আমি কাউকে দেখিনি, তিনি রবীন্দ্রনাথ, 
জীবনানন্দের চেয়েও অনেক বড় কবি ছিলেন 
-এমনকি শেক্সপিয়ারের সনেটগুলোকেও 
আমার কাছে ঠাকুরদা'র ফসলের চেয়ে 
বড় কবিতা মনে হয়নি; ঘাম শরীরে তিনি 
যখন লাঙ্গল চষতেন মনে হতো -
এইতো এক্ষুনি জন্ম নেবে শ্রেষ্ঠতম কবিতা! 

অগ্রায়নে তিনি তার সোনালি কবিতাগুলো 
কাঁধে বয়ে এনে ঠাকুমার হাতে তুলে দিতেন
ঠাকুমা পরমযত্নে সেই কবিতাগুলোর গন্ধ শুকতেন 
নাড়াচাড়া করতেন, রোদ্রমাখিয়ে রেখে দিতেন
 গোলাঘরের নান্দনিক মলাটে। 
আমাদের গোটাবাড়ি তখন হয়ে উঠতো 
অনিন্দ্যসুন্দর এক কবিতার বই। 

আমার ঠাকুরদা শস্যগন্ধা কবি ছিলেন 
আমি তার অযোগ্য দৌহিত্র, সাদা কাগজে দিনরাত 
শব্দের জট আঁকি, গ্রন্থের কাছে আত্মসমর্পণ করি,
প্রাজ্ঞ বিজ্ঞের কাছে ছুটে যাই কবিতা লেখার গোপন 
রহস্য জানতে অথচ আমার ঠাকুরদা শুধুমাত্র 
ঘাম, মাটি আর লাঙ্গল দিয়ে কত সহজেই 
লিখতে পারতেন আদিগন্ত ফসলের অমর কবিতা।




 কুশল ভৌমিক